somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা কবিতা সবার জন্য। আপনাদের ভালো লাগলে আমারও

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিতাটা একটু বড়ই হয়ে গেছে। তাই সবার কাছে একটু অনুরোধ থাকলো পুরোটা পড়েই সমালোচনা করার। আশা করি বিজ্ঞ ব্লগার দের সমালোচনা পাব।






মন্টু মিয়ার সংসার-১


এ অঞ্চলের বড় জমিদার আশরাফ আলী মিয়া,
বিয়ে করে মির্জা বাড়ী কনের নাম আছিয়া।

ধন সম্পত্তি আগেই ছিল এখন যোগ বউ,
তবুও সে অভাব দেখে নেই যেন কেউ।

ধীরে ধীরে বারোটি বছর পার হয়ে যায়,
সন্তানের দেখা আশরাফ মিয়া এখনো না পায়।

মানত নিয়ত কত করেছে সন্তান লাভের তরে,
তবুও কোন সন্তান আসেনি এই জমিদারের ঘরে।

তারপরেও আশরাফ মিয়া আশা ছাড়ে না,
নামায শেষে কেঁদে বলে আল্লাহ সন্তান দাও না।

একদা হঠাত আছিয়া বেগম চমকে অনুভব করে
থেকে থেকে নড়ে উঠে তার নাভির পরে।

এ জন ও জন শুনে বলে সন্তান আসবে ঘরে,
সু সংবাদ শুনে আশরাফ মিয়া লাজুক আছিয়ার স্বরে।

আছিয়ার হয় পূত্র সন্তান ঘর করে আলো,
আব্দুর রহমান মন্টু মিয়া নাম রাখা হলো।

দু'জন মিলে সিজদা করে মনে খুশি ভরে
সন্তান দিয়েছে আল্লাহ তালা শুকরিয়া জানায় তারে।

অতি যন্তে অতি আদরে মন্টু বড় হয়,
সুঠাম দেহে বাবরি চুল সুদর্শন তারে কয়।

এক সময়ে মন্টু মিয়া যৌবনে পা বাড়ায়,
এরই মাঝে মা বাবা দু'জনকেই সে হারায়।

নয়া জমিদার মন্টু মিয়া বদ মেজাজী হয়,
নারী আর মদ নিয়ে নেশায় মত্ত রয়।

যেমন খুশি তেমন ভাবে অর্থ ব্যয় করে,
চরম অর্থ সংকটে ভোগে কয়েক বছর পরে।

সে বারই তার জমিদারী নিলামে উঠে যায়,
বাপের দেয়া বড় জমিদারী এভাবেই সে হারায়।

জায়গা বেছে জমি বেচে করে দিন যাপন,
এসব দেখে টিন্তায় পড়ে তার সব আপন।

সবে মিলে ঠিক করে তাকে বিয়ে দিলে,
বদ অভ্যাস যা আছে সব তখনি যাবে চলে।

কিন্তু কেউ হয় না রাজি করতে তাকে বিয়ে,
সংসার সুখের হবে না মন্টু মিয়াকে নিয়ে।

অনেক খোঁজা খুঁজির পর কনে পাওয়া গেল,
চিকন গড়ন দেখতে সুন্দরী বংশটা নিচু ছিল।

বিয়ে হল শুভ ক্ষনে দিনটা শুক্র বার,
এভাবেই শুরু হল মন্টু মিয়ার সংসার।

মন্টু মিয়ার বদ অভ্যাস দুর হয়ে গেল,
অগোছালো তার জীবনটাতে সুখ ফিরে এল।

তখনও ছিল সুখের দিন মন্টু মিয়ার সংসারে,
ফুট ফুটে ময়না আসে বউয়ের কোল জুড়ে।

আশা ছিল প্রথম সন্তান হবে তাদের ছেলে,
ময়নার সব রূপের স্রোতে গিয়েছে তা ভুলে।

এক সময়ে ময়না যখন শিখে বলতে হাঁটতে,
মন্টু মিয়ার আশা জাগে ছেলে সন্তান পেতে।

মিলনের যত রাত্রি কাটে ছেলে পাবার তরে,
বছর পরে মিনু আসে মন্টু মিয়ার ঘরে।

আগের মত হাসি মুখ নেই মন্টু মিয়ার,
জিদের বশে শফথ করে ছেলে জন্ম দেয়ার।

এভাবে আরো পাঁচবার চেষ্ঠা যায় বিফলে,
আশু রিনু মালা পারু বুলি আসে বউয়ের কোলে।

ময়না তখন সিক্সে পড়ে মিনু পড়ে থ্রি তে,
বাকী কেউ চোখ রাখে নিয়মিত আদর্শ লিপিতে।

ধীরে ধীরে বউয়ের দেহ হয়ে যায় ক্ষয়,
সে দেহেতে কঠিন রোগের সহজ বাসা হয়।

রোগা দেহ রোগা মন মুখটা সদায় কালো,
এরই মাঝে তার গর্ভে আবার সন্তান এলো।

সেদিন ছিল শনি বার তপ্ত দুপুর বেলায়,
বউয়ের দেহ খারাপ থাকায় পাক বসায় নি চুলায়।

খিদেয় কাতর মন্টু মিয়া যখন খেতে আসে,
খেতে না পেয়ে মেজাজটা চরমে গিয়ে বসে।

ক্ষ্রিপ্ত হয়ে ছুটে এসে চুলের মুঠি ধরে,
লাথি মেরে বাহিরে ফেলে পোয়াতি বউটারে।

এসব দেখে চিতকার দেয় আশু রিনু মালারা,
জলদি করে ছুটে আসে সব পাড়া পড়সি রা।

চরম ব্যাথায় বউ চেঁচায় মাগো বাবাগো বলে,
তাও শুনিনি ক্ষনিক পরে স্বর নিভে গেলে।

এমনি ক্ষনে বাড়ি ফিরে ময়না আর মিনু,
মাকে ধরে ডুরে কাঁদে সহ্য কারো হয় না।

বড় মেয়েকে হাতের ইশারায় কত কথা কয়,
তখনি নাকে রক্ত এসে দম বন্ধ হয়।

চিতকার দিয়ে কাঁদে মেয়েরা মাগো মাগো বলে,
কেউ কেউ শব্দ করে ইন্নালিল্লাহ বলে।

এরই মধ্যে মন্টু মিয়া ছুটে গিয়ে পালায়,
এ জন ও জন করে খবর পুলিশের কাছে পৌঁছায়।

পাঁচ ছ দিনের তল্লাশিতে মন্টু মিয়াকে ধরে,
জেল হাজতে আটকে রাখে বিচার করার তরে।

আর ময়না মিনু আশু রিনু মালা পারু বুলি,
সবে মিলে পার করে কষ্টের দিন গুলি।

ক'দিন বাদে মামা এসে তাদের নিয়ে গেলো,
মামা বাড়ি থেকে তাদের পড়া শুরু হলো।

আর মন্টু মিয়ার বিচার পাঁচ বছরেই শেষ,
আদালতে প্রমাণ হয়ে যায় তার দোষটাই বেশ।

সাজা হয় চৌদ্দ বছর জরিমানা দশ হাজার,
অনাদায়ে থাকতে হবে জেলে পাঁচ বছর আবার।

চৌদ্দ বছর জেলে থেকে মন্টু মিয়া এলো,
জরিমানা দশ হাজার টাকা ময়না মিনু দিলো।

ময়না মিনুর অনেক টাকা কলেজে করে চাকরী,
আশু রিনু মালা পারু বুলিরা এখনও ছাত্রী।

সবে মিলে থাকে শহরে একটা বাড়ী কিনে,
সেই বাড়িতে বাবা কে তোলে জেল হতে এনে।

মন্টু মিয়া বেশ খুশি সব মেয়েদের দেখে,
তারা সবাই মানুষ হয়েছে পড়ালেখা শিখে।

মন্টু মিয়ার খুশি দেখে ময়না কেঁদে বলে,
"মাকেই আজ মনে পড়ে সব আনন্দ ভুলে।

থাকতো যদি আজ মা লাগত কত ভালো,
সে তো তোমার বদ মেজাজে জীবন দিয়ে গেল।

ছেলে ছেলে করে তুমি করেছ মোদের হেলা,
আজ দেখ মহান আল্লাহ খেলেছে কেমন খেলা।

অবহেলার সেই মেয়েরা আজ ছড়িয়েছে কত আলো,
অনেক ছেলেরাই পারেনি ছড়াতে এর ছেয়ে ভালো।

জানো বাবা, ছেলে মেয়ে সব ই খোদার সৃষ্টি,
সবাই সু সন্তান হতে পারে রাখলে উত্তম দৃষ্টি।"

ময়নার মাথায় হাত বুলায়ে মন্টু মিয়া বলে,
"আগে যা করেছি মাগো সবই ভরা ভুলে।

আমার বন্ধ চোখ কান তোরা খুলে দিলি,
হোঁচট খেয়ে শিখেছি তাই সবাই আজ বলি।

ছেলে হোক মেয়ে হোক কেউ করো না হেলা,
ছেলে মেয়ের ব্যবধান করে ব্যয় করো না বেলা।

এখন হলো আধুনিক কাল সামনে চলার পালা।"
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×