somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোনের চশমা ।।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোন ধরে বসে আছি, কখন ১২ টা বাজবে আর তখনি ফোন দেবো। এই মুহূর্তটার জন্যই ৩ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মাঝে মাঝে একটু দূরত্ব রাখা ভালো।



তাতে সৌন্দর্য কমেনা বরং বাড়ে। ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ১২ টা বাজতে এক মিনিট বাকী তখনি ফোন দিয়ে বললাম “শুভ জন্মদিন”। ধন্যবাদ দিয়েই উচ্চারণ করলো তুমি ৩ দিন আমার সাথে কথা বলোনি, কোনো যোগাযোগই করনি ক্যানো? খুব রাগ হচ্ছিলো আমার।

আমার বোন নীলু, বড় বোন। ভাইবোন একসাথে থাকা হয়না। দুজন দুজনা থেকে দূরে থাকি। তবে প্রতিদিন নিয়মিত কথা হয় আমাদের। শুধু কথা না ফেসবুকে ঝগড়া, রাগারাগি ভালোবাসা, খুনসুটি সবই হয়। একদিন কথা না বলে থাকিনা, অথচ তার জন্মদিনের ৩ দিন আগে থেকেই কথা বলা বন্ধ করে রেখেছি তাই ব্যাপারটা নীলু আপুও ঠিক ধরতে পারেনি যে কি কারনে আমি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

একটু চুপ থেকে বললাম ইচ্ছে করেই কথা বলিনি, কিন্ত ঠিকই তো প্রথম উইশ করলাম (আসলে ২য়)।

আমি ৩ দিন না বলেই উধাও হয়েছি, ফেসবুক, হোয়াটসওয়্যাপ অফ। মোবাইল ধরিনা। আপু তো রেগেই শেষ। মনে মনে হয়তো অনেক গালীও দিয়েছে আমায়। হয়তো আশাও করেনি যে আমিই প্রথম উইশ করবো।

বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে একেবারে শেষে বললাম তোমার ফেসবুকে একটা ভিডিওর লিংক দিয়েছি, এখুনি দেখো ওটা।
আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো।

ভিডিও টা আমি নিজেই বানিয়েছি আমার বোনের জন্য। গত তিন দিনে বসে বসে বানিয়েছি। নীল প্রিয় বলে নীল ড্রেসের সব ছবি দিয়ে ভিডিও তে ভরপুর। ৬ মিনিটের ভিডিও তে সব স্মৃতি গুলো ধরে রেখেছি। দূরে থাকি বলে মন খারাপ, অন্তত এই দিনে পরিবারের কেও দূরে থাকলে ভালো লাগেনা। পরিবারের সবাইকে নিয়েই তো আনন্দ করতে চাই সবসময়। ভালোলাগার মুহূর্তগুলো একসাথে কাটাতে চাই। কিন্ত ব্যাস্ততা ও বাস্তবতার জন্য হয়ে সুযোগ সুবিধা হয়ে উঠেনা

কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে মেসেজে বল্লো ভাইয়া, লিংক তো ওপেন হচ্ছে না।
আমি বললাম দাঁড়াও আমি দেখে জানাচ্ছি।

আমি ভিডিও টা আবার দেখলাম। সবই তো ঠিক আছে, তাহলে আপু দেখতে পারছে না ক্যানো। আবার ঠিকঠাক করে বললাম দেখো আপু। এবার আমার মন একটু একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জানি এখন ক্লিক করলেই ভিডিওটা দেখতে পাবে। এবং ভিডিও টা দেখলে আমার বোনের মন ভালো হয়ে যাবে, আপ্লুত হবে অথচ বোনের সেই ভালো লাগাটা ভাই হয়ে নিজ চোখে দেখতে পারছিনা। সত্যি এবার আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো, কান্না পাচ্ছে। দূরত্বের জন্য আজ এই বিশেষ দিনে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমি আমার বোনের কাছে যেতে পারছিনা। দূরত্ব শব্দটাকে আমার এখন ঘৃণা হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য শব্দ সম্ভবত দূরত্ব।

একটু বাদেই আবার আপু জানালো ভাইয়া দেখা যাচ্ছে না, মন খারাপ হয়ে গ্যালো। আমার এদিকে আবার নেট এর খুব ঝামেলা হচ্ছে, কাল দেখবো।

ঠিক ১২ টার সময় ভিডিও টা আপু দেখবে অথচ সেটা কাল দেখবে। জানি দূরে থাকলেও অনেক কিছু চাইলেই সম্ভব হয়না তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বললাম আচ্ছা কাল দেখিও, তবে কাল কিন্ত একবার দেখা দিও। ভিডিও কল দিও।

কথা শেষ করেই বিছানা গোছাতে যাবো এমন সময় দেখি আমার বোন ফোন দিয়েছে।
বললাম আপু।
ওপাশ থেকে চশমা পরে থাকা বোন বল্লো ভাইয়া।

অনেক্ষন কথা বলে বললাম আপু তুমি তো ভিডিও টা দেখতে পারলে না, দাঁড়াও আমি দেখাচ্ছি তোমায় বলেই ভিডিওটা প্লে করলাম। প্লে করার কিছুক্ষণ পর বাজতে শুরু করলো শাফিন আহমেদ এর “আজকের আকাশে অনেক তারা, দিন ছিলো সূর্যে ভরা...............” গানটা। আর আমার মোবাইল টা ধরলাম আমার মনিটরের সামনে। ওপাশে আপু খুব মনযোগ সহকারে দেখছে ভিডিও টা। এপাশে আমি। মোবাইলের স্ক্রিনে আমি আপুকে ঠিকই দেখতে পারছি। আর আপু তো আমায় দেখতে পারছে না, ভিডিও দেখচে মনোযোগ দিয়ে।

ভিডিও টা আমি এত যত্ন নিয়ে, এতগুলো সুন্দর সুন্দর স্মৃতি একসাথে করে বানিয়েছি যে ভিডিও টা দেখতে দেখতে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আপু পাশে নেই বলে। এই ভিডিও টা একসাথে দেখার ইচ্ছে ছিলো অথচ দেখতে হচ্ছে দুজন দুই জায়গা থেকে। ধীরে ধীরে মিনিট পার হচ্ছে আর আমি মোবাইলটা মনিটরের সামনে ধরে আছি। আর এদিকে টপটপ করে চোখের পানিতে কিবোর্ড ভিজে যাচ্ছে। হাত থেকে মোবাইলটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। বার কয়েক মোবাইলটা ঠিক করে নিলাম। ৬ মিনিট খুব কষ্টে পার করে এসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। চোখদুটো মুছে বিছানায় বসলাম। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, আটকে যাছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কেমন হয়েছে আপু ভিডিও টা। ওপাশ থেকে আপু কোনো কথা বলছে না। দেখি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রেখে আছে, কোনো কথা নেই। আমি বললাম ও আপু। তবুও কোনো কথা নেই। শুধু দেখছি ঠোঁট চেপে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর দেখি চশমা খুলে আপু চোখ মুছতেছে। চশমার জন্য এতক্ষণ আমি বুঝিনাই যে আপু কাঁদতেছে। দেখলাম আপুও কথা বলতে পারতেছে না, আটকে যাচ্ছে। শুধু ভারি কন্ঠে একবার উচ্চারণ করলো সত্যিই ভাইয়া তোমায় অনেক ভালোবাসি। এরপর আবার কান্না, এদিকে আবার আমিও চোখ মুছতেছি। দুজন দুজন কে দেখতেছে, কারো কাছে যেন কারো কিছুই লুকোনোর নেই।

এখন রাত প্রায় একটা বাজে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে আমার ঘরে আর সেই সূদুরে আপুর ঘরে স্বর্গ নেমে এসেছিলো, ভালোবাসার স্বর্গ। অথচ পৃথিবীর কেও তা টের পেলো না স্বর্গের উপস্থিতি। শুধু দুই প্রান্তের ২ জন প্রানীই আজ টের পেলো কান্নার মাঝে যে এত সুখ এত ভালবাসা। আর কেঁউই জানলো না কিছুক্ষণ আগে কি হয়ে গেলো ধরণীতে।

শর্তহীন ভালবাসাগুলো হয়তো এমনি হয়। বারবার কাঁদায়। কান্না গুলো ভেতোরে দিয়ে ছুঁয়ে যায়। বুঝিয়ে যায় একজন সত্যিকার মানুষের অস্তিত্ব ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×