বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করা মানেই কি সব সমস্যার সমাধান???
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বেশ কয়েকদিন থেকেই ফেসবুকের মাধ্যমে একটা কথা জোরেশোরেই জানতে পারছি যে, আগামী কিছু দিনের মধ্যেই স্টার জলশা, জী বাংলা সহ কিছু চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ হতে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। উক্ত চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানসুচি সামাজিক উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখে বলে আমাদের জানা নাই। নিখাদ বিনোদন ব্যতিত তেমন কিছু চোখে পড়ে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক অবক্ষয়ের কারন দেখা দেয়। কিছু উদাহরন টানছি, যদিও সরারই বিসয়গুলো জানা আছে, তারপরেও...
১। প্রায় প্রতিটি নাটকেই পারিবারিক অশান্তির চালচিত্র আমাদের প্রভাবিত করছে।
২। নাটকগুলোর যথোপযুক্ত পরিণতি নেই, বিধায় দর্শকদের সময়ের অবমূল্যয়ন হচ্ছে।
৩। ভারতের নিজস্ব সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা, আচরন, জীবন যাত্রা আমাদের নিজস্বতাকে গ্রাস করছে।
৪। আমরা আমাদের বিনোদনের স্বকীয়তা হারাচ্ছি।
এছাড়াও আরও অনেক কিছু।
এবার কিছু ঘটনার উল্লেখ করি।
আমাদের এক পরিচিত চাচি আছেন যিনি কোলকাতার নাটকের দরুন এতটাই প্রভাবিত যে, নাটকে কোন মন খরাপের ঘটনা ঘটলে উনার মেজাজও সাারাদিন খারাপ থাকে।
আমার বাসাতেও রাত ৭টার পর থেকে টিভির রিমোটের মালিকানা মহিলাদের হাতে চলে যা্য।
আমাদের এলাকায় মহিলাদের সারাদিনের আলাপ আলোচনার মূলবিষয় থাকে নাটকের ঘটনাগুলো।
এগুলোআসলে শুধু আমারই পারিপার্শ্বিকতার ঘটনা নয়, এগুলো বেশিরভাগ পরিবারের ও সবারই আশেপাশের ঘটনা।
এমতাবস্থায় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হলে মন্দ কি?
তবে এখন আমি অতি দ্রুত আমার নিজস্ব কিছু অভিমত ব্যক্ত করবো। এগুলো একান্তই আমার নিজস্ব মতামত, তবে গ্রহনযোগ্য হবে আশা রাখি।
আমাদের মা-চাচী-বোনরা এসব চ্যানেলের প্রতি এতটাই আসক্ত যে হঠাৎ সম্প্রচার বন্ধ হওয়াতে তাদের মানষিকতার উপর কেমন বিরুপ প্রভাব পড়বে সেটাও একটু ভাবতে হবে। এটাও ভাবতে হবে, সারাদিনে সংসারের ঘানি টানার পর তারা সামান্য বিনোদনের আশায় টিভির সামনে বসেন। সবচেয়ে ভালো হয় তাদেরকে যদি দেশীয় চ্যানেলের প্রতি অভ্যস্থ করানো যায় এবং এরপর যদি ইন্ডিয়ান চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা যায়।
তবে সেক্ষেত্রে যে কাজটি প্রথমে করা দরকার তা হলো, দেশীয় চ্যানেলের সম্প্রচার ব্যবস্থাপনাকে একটু কাটাছেড়া করার। আমাদের দেশের চ্যানেল সংখ্যা প্রায় আড়াই ডজন। রাত ৮ টার পর থেকেই সব চ্যানেলে গন হারে খবর পাঠ শুরু হয়। যে দেশে ৪/৫ টা পিওর খবরের চ্যানেল আছে, সে দেশের প্রতিটি বিনোদন চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করার তো কোন দরকার দেখি না। খবর প্রচারের স্বার্থে এসব বিনোদন চ্যানেলের যে পরিমান অর্থ ব্যয় হয় তা বিনোদনে লাগানো যেতে পারে। এতে হয়তো কম বিজ্ঞাপন বিরতি নেয়া লাগতে পারে। স্পন্সরশিপের উপর চাপ কম পড়বে, দর্শক কিছুটা কম বিরক্ত হবেন। শুধুমাত্র খবরের চ্যানেলে সংবাদ প্রদর্শনই শ্রেয়।
ভারতের প্রোগ্রামগুলোর সম্প্রচার থেকে একটা বিষয় অবশ্যই শিক্ষনীয় আছে, তা হলো টাইমিং। যে অনুষ্ঠান যে সময়ে শুরু ও শেষ হওয়ার কথা তা তখনই হয়। আমাদের দেশের অনুষ্ঠানেও এসব ফলো করা উচিৎ।
বিজ্ঞাপন বিরতিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই উচিৎ হবে নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বল্প সময়ের বিরতি, যা দর্শকের বিরক্তি কম উৎপাদন করবে।
ইদানিং বাংলা মিউজিক চ্যানেল আলাদা দেখছি, এরকম বাংলা ম্যুভি চ্যানেল করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলতে চাচ্ছি, আমাদের দেশের অনুষ্ঠানের মান যথেষ্ট ভালো। দর্শকপ্রিয়তা পাবার জন্য কিছু নিয়ম নীতি, নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন। এতে দর্শক যেমন বাড়বে তেমনি কমতে পারে ইন্ডিয়ান চ্যানেলের প্রতি নির্ভরতা। দেশের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার ব্যবস্থাপনা ঠিক না করে শুধুমাত্র হুট করে ভারতীয় চ্যানেল প্রচার বন্ধ করা মানেই সব সমস্যার সমাধান নয়।
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন