আমার অনিমেষ অপেক্ষার সেখানেই ছিল শুরু অথবা শেষ।
যে দুপুরে সমগ্র পৃথিবী
হঠাৎই
এক পৌরাণিক দক্ষযজ্ঞে পরিণত হলো- সুর অসুর কে জানা নেই, শুধু হলকা আগুন,
টায়ার আর মাংসপোড়া গন্ধে; হাহাকার, মৃত্যুনাদে
অচিরেই নিজেকে খুঁজে পাই ভুঁইফোড় পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে
শাদা লাল কালোর ভিড়ে -
সেই থেকে আমার প্রতীক্ষার পালা শুরু, অথবা শেষ।
অজস্র টিভি ক্যামেরা আর ফ্ল্যাশলাইটে কেন যেন
ভিআইপি ভেবে ফেলি নিজেকে,
ডাক্তার আর নার্সদের দরজা ঠেলে
ক্রমাগত আনাগোনায় চমকিত হই, রাজন্যরাও ইতোমধ্যে এসে গেছেন,
"আমাদের আর কিছু দরকার নেই, দরকার কি স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত-ব্যবসাবাণিজ্যে? আমাদের দরকার শুধু হাজার হাজার-বিছানাবিশিষ্ট হাসপাতাল। আজ থেকে
সমগ্র বাংলাদেশকে
হাসপাতাল ঘোষণা করা হলো।
রোগী ছাড়া অন্যরা চলে যান-বিরক্ত করবেন না,
আমাদেরকে প্রাণভরে সেবা করতে দিন।"
আমি পলকহীন পাশে তাকাই,
সারি সারি বিছানা, খটখটে ভালবাসাবর্জিত বিছানা।
হাজার হাজার বিছানা, যাত্রিবাহী ট্রাফিকের মত অদ্ভুতদর্শন বিছানা।
বিকৃত শরীরসমূহ নিয়ে শুন্যতার বিছানা।
লাল ঘৃণার বিছানা।
"আমি মরতে চাই"-বলে চীৎকাররত সেই যুবকের কুঁকড়ে ছোট হয়ে যাওয়া বিছানা।
পৃথিবীর শেষসীমায় পৌঁছে গেছে যে জাহাজ, তার মত বিছানা।
আই.ভি. এর ড্রিপ সেখানে পতাকা হয়ে ওড়ে।
অর্ক, সময় কাটানোর জন্য চলো এই বিছানাগুলো নিয়ে
কিছুক্ষণ বিন্যাস-সমাবেশ খেলি...
কত কম সময়ে ঘরটাতে কে কত বেশি বিছানা আঁটাতে পারি তার পরীক্ষা হয়ে যাক...
প্রিয়তম, ভীষণ ক্লান্ত এখন আমি ...
আমার শূন্যচোখে চোখ রাখো তো!
শরীরের এই শুন্যস্থানে তোমার হাতও রাখতে পারো,
আজ দুপুর একটা পর্যন্ত সেখানে আমার হাত ছিল, তোমার গলা জড়িয়ে রাখত যে হাত।
কান পেতে শোন,
আমি যে চাঁদের মতই থমকে গেছি!
আমার অস্তিত্ব জুড়ে খুব ভালবাসা ছিল, কোলজুড়ে আজ যে চাঁদের আসার কথা ছিল,
ঘুমপাড়ানি মায়াবী এক গান ছিল, "চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা..."
ভয়াল শাদা বিছানায় আমি-চাঁদ-গান অঙ্গারকালো, হারিয়ে গেছি।
ভালবাসা-মায়া-প্রীতি কাগুজে উদ্ভট এসব শব্দ ছুঁড়ে ফেলো! পুড়িয়ে ফেলো!
আমাদেরকে পোড়ানোর মত।
তার চেয়ে এই কি ভাল নয়? আমাদের স্বপ্নের শিশু বেড়ে উঠুক হস্ত-পদ-মস্তিষ্কবিহীন।
কি দরকার মানবীয় পশ্চাদপদতায়?
সচেতনতা, নৈতিকতা- সেতো আর্কাইভের জমে থাকা পুরনো গন্ধ! তামাদি। উচ্ছিষ্ট।
প্রাগৈতিহাসিক অথবা হলোগ্রাফিক এই পৃথিবীই কি আমাদের চাওয়া নয়?
আমার চারপাশ জুড়ে ককটেল, বোমা আর বিস্ফোরণে বিজয়ের নবজাগরণ।
অর্ক, এ তো আমাদের বিজয়! অতি-প্রতীক্ষিত বিজয়! চলো, দরজা বন্ধ করে আজ আমরা সশব্দময় অগ্নিঝরা বিজয়োৎসব করি।
আবার আমাদের রক্ত ঝরুক, সাথে ঝরে যাক আমাদের মানবিকতা ...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১৫