somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ের বাজারে কনের খোঁজঃ যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, (ফলে) যাহা দরকার তাহা পাই না।

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীচের লেখাটি আজকের একটা দৈনিকে প্রকাশিত। জনগুরুত্বসম্পন্ন মনে হৈলো বিধায় এখানে পুস্টাইলাম।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

যা চাই তা ভুল করে চাই (নিজস্ব প্রতিবেদক)
ভাবী আমার জন্য একটা মেয়ে দেখেন না ছেলে বিয়ে করাব। এই লম্বা, ফরসা, সুন্দর একট ভালো সাবজেক্টে পড়ছে। আর ঢাকায় বাড়ি না থাকা অন্তত একটা ফ্ল্যাট তো থাকা চাই। আমাদের একটা মানসম্মান তো আছে! ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য আমাদের সমাজে সাধারণত এ ধরনের মেয়েই খোঁজা হয়। খুব কম মা-ই খোঁজেন দেখতে যেমনই হোক সত্যিকারের শিক্ষিত একটি গুণী মেয়ে। অথচ বিয়ের পরদিন থেকেই বউ হয়ে আসা মেয়েটির কাছে শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রত্যাশা করা হয় সব রকম গুণের। তাকে রান্নাবান্না থেকে সব কাজে পারদর্শী হতে হবে। তা নাহলেই বউ ভালো নয়। তখন কিন্তু একবারও এ কথা মনে করা হয় না যে যখন তারা মেয়ে খোঁজেন তখন কিন্তু গুণ নয়, রূপ খুঁজেছিলেন। খুঁজেছিলেন মেয়ের বাবার প্রতিপত্তি। আর বিয়ের পরের দাবি গুণের! তাহলে সমস্যা তো হবেই।

কেস স্টাডিঃ ১
শিরীন সুলতানা ডাক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বামীর মৃত্যুর পর তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন উচ্চশিক্ষিত করার। মাস্টার্স করার পর তাকে বিদেশ পাঠান পিএইচডি করার জন্য। উচ্চ ডিগ্রি লাভের পর ছেলেকে বিয়ের জন্য শিরীন সুলতানা পাত্রী দেখা শুরু করলেন। অফিস কলিগ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী সবাইকে পাত্রী দেখানোর জন্য জোর তাগিদ দেন। পাত্রী দেখার জন্য ধুম পড়ে গেলেও মনের মতো পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। চাকরিজীবী, অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট, আইনজীবী, ডাক্তার সব পেশার মেয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা মেটাতে পারছেন না কেউ। কারণ একটাই­ মেয়ে হতে হবে ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া। বড়জোর অনার্সের ছাত্রী। পাস করে ফেললেই বাদ। এ দিকে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী পেলেও বাদ সাধল অন্য শর্ত। মেয়েটির ঢাকা শহরে বাড়ি থাকতে হবে। নিজের বাড়ি না থাকলেও কনের বাড়ি থাকা চাই। ৩২ বছরের ছেলের জন্য ১৭-১৮ বছর বয়সী মেয়ে কতটা মানানসই তা ভাবার সময় নেই। মেয়ের পক্ষ থেকে পাত্র দেখার ব্যাপারে কোনো শর্তারোপের সুযোগ নেই। জানারও প্রয়োজন নেই বরের বিস্তারিত তথ্য। মেয়েদের আবার চাহিদা কিসের­ বলছিলেন শিরীন। তিনি নিজেও একজন নারী, বিয়ের পর দাম্পত্য জীবন সুখের জন্য উভয়ের যোগ্যতা কাছাকাছি থাকা জরুরি এমনটি বুঝতে চাইছেন না কোনোভাবেই।

কেস স্টাডিঃ ২
পাত্রী দেখার জন্য পরিচিত সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন সায়েমের বাবা। মেয়ের হতে হবে স্মার্ট, সুন্দরী, কলেজছাত্রী; ছেলের যোগ্যতা কী তা তিনি বলছেন না কাউকে। ছেলেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আপাতত এটিই জানার সুযোগ। বরপক্ষ, তাই চাহিদা-শর্ত কেবল তাদেরই মানায়। ছেলের যে মাথায় টাক, উচ্চতা র্৫-র্৫র্ গায়ের রঙ ফরসা নয় তা তিনি কাউকে বলেননি। বিভিন্ন জায়গায় স্বজনরা পাত্রী দেখে হতাশ। মেয়েটি সুন্দরী উচ্চতাও ঠিকঠাক আছে, সমস্যা অনার্স পাস করে ফেলেছে। এই বিয়ে হবে না, সাফ জানিয়ে দিলেন সায়েমের মা-বাবা। যুক্তি হলো­ বুড়ো মেয়ের কাছে ছেলের বিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। বয়সের পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেল মেয়ের পাঁচ বছর আগেই ছেলে অনার্স পাস করেছে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী অন্তত পাঁচ বছরের বেশি বয়সী হলেও ছেলেটি বয়স্ক নয়, মেয়েটি ‘বুড়ি’ হয়ে গেছে। শুরু আবার খোঁজাখুঁজির পালা।

কেস স্টাডিঃ ৩
ছেলের জন্য বউ আনলেন মিসেস মালিহা। মেয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, সুন্দরী, লম্বা, ঢাকা শহরে ওদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। একমাত্র মেয়ে তাই বাড়িটি মেয়ের নামেই হয়ে যাবে। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করলেন মিসেস মালিহা ইসলাম। চাহিদামতো বউ পেয়ে বেশ খুশি খুশি ভাব। মালিহার পরিবারে রয়েছে তার দুই ছেলে এবং স্বামী কামরুল ইসলাম। ব্যবসায়ী স্বামী বেশির ভাগ সময়েই ব্যস্ত থাকেন। নিজের ডায়াবেটিস ও প্রেসার-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। চুলার কাছে যাওয়া তার মানা। কাজের মহিলা বাড়ির সব কাজকর্ম সারে। সদ্য বিবাহিত বড় ছেলে নাফিসও একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে। ছোট ছেলে লিখন পড়ালেখা করে। নতুন বউকে দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন প্রায়ই বেড়াতে আসেন। আপ্যায়নের সব কাজ কাজের বুয়াকে সারতে হচ্ছে। বউয়ের ক্লাস থাকার কারণে তাকে সকালে বাসা থেকে বের হতে হয়। রাতে রান্না করবে এটিও হচ্ছে না কারণ সে রান্না জানে না। জানবে কী করে পড়াশোনা ছাড়া এই মেয়ে কিছুই শেখেনি। ফলে অসুস্থতাবস্থা নিয়ে বউয়ের জন্য তিনি সকালের নাশতা তৈরি করেন। দুপুর ও রাতের খাবারের বেলায়ও একই ঘটনা। ফলে শাশুড়ি বেশ নাখোশ নতুন বউয়ের ওপর। তাই তো ক্লাস শেষে বাসায় ভাত খেতে বসলে সীমাকে তার শাশুড়ি একদিন বলেই ফেললেন­ খাবার খাচ্ছো; কিন্তু আসে কোত্থেকে। ক্লাস করলে আমার লাভ কী? এভাবেই মনোমালিন্য শুরু। তার বক্তব্য, আমি স্টুডেন্ট জেনেই বিয়ে করিয়েছেন। তাহলে এখন আপত্তি কেন? সংসারের কাজকর্মে সীমার তেমন ভূমিকা না থাকায় ধীরে ধীরে বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। স্বজনরা এবার তাকে জিজ্ঞেস করছেন স্টুডেন্ট ছাড়া বউ আনবেন না তখন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন? পড়াশোনা শেষ করা মেয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা ছিল কোথায়? বয়স কম বউয়ের, তাই সব কিছু বুঝে উঠতে সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক এমন যুক্তি মানতে নারাজ তিনি।

আমাদের সমাজে বিয়ের জন্য মেয়ের যেসব যোগ্যতা দরকার তাহলো সুন্দরী, লম্বা, স্মার্ট। এই বিশেষ গুণগুলো থাকা চাই-ই চাই। এই গুণ না থাকলে এগোতে চান না। ঢাকা শহরে বাড়ি থাকতে হবে যোগ হয়েছে নতুন শর্ত। আরেকটি দিক হচ্ছে কেমন শিক্ষিত মেয়ে চাই জিজ্ঞেস করলেই ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া। অনার্স প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষ হলেও সমস্যা নেই। তবে এমএ পাস শুনলেই বিপত্তি। প্রোগ্রাম বাতিল। মেয়ের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু মেয়ে যাকে বিয়ে করবে সেই ছেলের চেহারা, পড়াশোনা, বয়স­ এসব ব্যাপারে কথা বলার বা জানার অধিকার মেয়ের নেই। যা বলার সব বরপক্ষের। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কনে দেখার বিষয়টি এখন বাজারে পণ্যে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিয়ে হলেও সমস্যা দেখা দেয় বিয়ের পরপর। সুন্দরী, বাড়ির মালিক, স্মার্ট এসব বিশেষণ কোনো কাজে আসে না। বিয়ের আগে যার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজে, সেসব গুণ বিয়ের পর গৌণ হয়ে যায়। বয়স বেশির অজুহাতে অনার্স কিংবা মাস্টার্স পাস মেয়ে না এনে কলেজছাত্রীকে এনে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্টুডেন্ট হিসেবে ক্লাস করা প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি ওঠে। অল্প বয়সী এই মেয়েটির কাঁধে দেয়া হয় সংসারের বিশাল দায়িত্ব। ফলে ধীরে ধীরে লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়া হয় পড়াশোনা। অল্প বয়সের মেয়ের ওপর গোটা সংসারের চাপ পড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তাকে এসব ক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকেও তেমন সহযোগিতার মনোভাব দেখা যায় না। ফলে মানসিক চাপে পড়ে সংসার জীবন বিষিয়ে ওঠে। বিয়ে হয়ে গেছে মানিয়ে চলো এমনটি জানিয়ে দেন মেয়ের মা-বাবা। এতে করে ধীরে ধীরে হতাশার পরিমাণটা বাড়তে থাকে তাদের।

১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×