একাত্তর টিভির ভিডিও টি দেখার সময় বার বার শরীরে কাটা দিয়ে উঠেছে।ভিকটমদের জায়গায় নিজের কোন নিকটাত্মীয়ের কথা কল্পনা করে মনে হয়েছে পায়ের নিচে যেন মাটি নেই।কোথায় যেন তলিয়ে যাচ্ছি।কেমন ফাকা ফাকা লাগছে সবকিছু।একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার আর দেখার সাহস হয়নি।ঘুরেফিরে শুধু একটা প্রশ্নই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতি হিসেবে কোন দিকে যাত্রা করছি আমরা??পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব বলেই জানি।ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি এই দিনে বাংলার সব বয়সের নারী পুরুষ নববর্ষ পালন করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।ছোট্র শিশু তার বাবার হাত ধরে মেলায় যায় খেলনা কিনতে।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে প্যান্টের ভিতর শার্ট গুজা লোকটি পাঞ্জাবি পরে বের হয়।বছরের অন্যান্য দিন যাই পড়ুক না কেন এই দিনে সব বয়সের রমণীরা শাড়ি পরে খোপায় ফুল গুঁজে আদর্শ বঙ্গললনা সেজে বের হয়। বাঙ্গালী প্রাণ ফিরে পায় এই একটি দিনে।শত শত বৈপরীত্যের মাঝেও এই একটি দিনে বাঙ্গালী শুদ্ধতম বাঙ্গালী হয়ে উঠার চেষ্টা করে।কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের মধ্যেই একটা অংশ চায়না যে দেশে"পহেলা বৈশাখ "বলে কোন উৎসব থাকুক।তা না হলে এই দিনে রমনার বটমূলে বোমা হামলার মত ঘটনা ঘটতো না।তাই টি এস সি তে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি শুধু যে কিছু বখাটের পশুবৃত্তির ফসল তা মনে করাটা ঠিক হবে না।নারীর শ্লীলতাহানি এই দেশে আগেও ঘটেছে,এখনো ঘটছে।পত্রিকার পাতা খুললেই বখাটে কর্তৃক নারীর শ্লীলতাহানি, উত্ত্যক্তকরণ,ধর্ষণের খবর খুব ই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় এতগুলো মানুষের সামনে একটা সংবদ্ধ গ্রুপ মিলে যেভাবে ঘটনাটি ঘটালো তাতে নিশ্চিতভাবে বুঝা যায় যে বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত,সাময়িক যৌনক্ষুধা নয় কোনভাবেই।তা না হলে এতগুলা মানুষের সামনে এমন একটা কান্ড ঘটানো কখনো সম্ভব নয়,অন্তত আমি তাই মনে করি।কোন সাধারন বখাটে ছেলেদের পক্ষে এত সাহস দেখানো আদৌ সম্ভব নয়।তাও আবার টি এস সির মত জনাকীর্ণ জায়গায় যেখানে সর্বক্ষণ পুলিশ সাংবাদিকদের পদচারণা লেগেই থাকে।তাহলে এরা কারা???এদের আসল উদ্দেশ্যটাই বা কি?এতো সাহসের উৎস ই বা কোথায়?এরা সেই অংশ নয় তো যারা চায় না পহেলা বৈশাখ নামে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকুক।হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক কিছু??রমনায় বোমা হামলা আর এই ঘটনার মোটিভের কি সাদৃশ্য খুজে পাওয়া যায় না?আশেপাশের অনেককেই তো বলতে শুনেছি এসব বিধর্মীদের অনুষ্ঠান, বেলাল্লাপনা ছাড়া আর কিছু নয় এই সেই কত কিছু।তাই আমার মনে হয় সমস্যাটা শুধু নাভির নিচে শাড়ি পড়া নিয়ে নয়।ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে নারীর মুক্তভাবে প্রাণের উৎসবে অংশগ্রহণ করাটা ই হয়ত মেনে নিতে পারছেন না অপরাধীরা।একটি অধিকারকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে হয়তো।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যেহেতু আছে তাই পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে দোষীদের খুজে বের করা অসম্ভব কিছু নয়। যে কোন মূল্যেই সেটা করতেই হবে এবং এদের শিকড় পর্যন্ত টান দিতে হবে।শুধু তাই নয় শিকড় উপড়ে ফেলার ব্যাবস্থা করতে হবে।তা না হলে হয়ত শুধু পহেলা বৈশাখ নয়,ঈদের দিনেও নারীরা ঘর থেকে বেরোনোর সাহস পাবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫