somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নক্ষত্রের রাত

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল চলছে।সালমা খাটের এক কোণায় বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।পাশের ঘরে তার মা শিল্পী বেগম একজন মাঝবয়সী লোকের সাথে অনেকক্ষণ ধরে ফিসফিস করে কথা বলছেন।লোকটির কন্ঠস্বর চেনা,দু:সম্পর্কের মামা হয়।সম্পর্কে মামা হলেও এই লোকটির সাথে তার তেমন কোন কথা বার্তা হয়না।তার মা যখনি কোন জটিল সমস্যায় পড়েন তখন এই মানুষটিকে ডেকে এনে বিভিন্ন পরামর্শ নেন।

ফিসফিস করে বললেও সালমা তাদের সব কথা ই শুনতে পাচ্ছে।তার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে।মামা এক পাত্রের সন্ধান এনেছেন।পাত্রের নিজস্ব কাঠের কারবার আছে,জমিজমাও একেবারে খারাপ না।পড়াশোনা তেমন করে নাই,কিন্তু ব্যাবসায়ী হিসেবে সফল।মামার ভাষ্যমতে"আপা,আগুইন্যা ছেলে,এরকম ছেলে লাখে একটা হয়"।শিল্পী বেগমেরও ছেলেকে দারুণ পছন্দ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।একটু একটু পর পর অকারণেই হাসছেন।

এ বছর ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে সালমা।এখনো রেজাল্ট বের হয়নি।তার বান্ধবীরা সবাই কোচিং এ ভর্তি হয়েছে।সেও চায় কোন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে,নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কিন্তু একথা মাকে বলার সুযোগ নেই।সালমার বাবা মারা গিয়েছে তিন বছর হলো।মারা যাওয়ার সময় ভদ্রলোক একটি মুদি দোকান ছাড়া কিছুই রেখে যাননি।শিল্পী বেগম সেই দোকানের জিনিসপত্র বিক্রি করে যা টাকা পেয়েছিলেন তা কিছুদিন পরেই শেষ।এরপর থেকে নিয়মিত কাপড় সেলাই করেন আর বাজারের ব্যাগ বানান।সে টাকা দিয়েই আড়াই হাজার টাকা বাড়িভাড়া সহ সংসারের বাকি খরচ চলে।সালমা নিজেও কয়েকটা ছোট ছোট বাচ্চাকে পড়ায়।এ অবস্থায় নিজের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার কথা বলার কোন মানে হয়না।তাছাড়া স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই শিল্পী বেগমের মেজাজ কেমন জানি হয়ে গিয়েছে।ছেলেমেয়েদের সাথে প্রায়ই খারাপ ব্যাবহার করেন।

সালমা ছাড়াও শিল্পী বেগমের আরো দুটি সন্তান আছে।ছোটমেয়ে শাম্মী ক্লাশ সিক্সে পড়ে।আর একমাত্র ছেলে সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে।দুই মেয়ের বিয়ের চিন্তায় ভদ্রমহিলা রাতে ভালভাবে ঘুমুতে পারেননা।আপাতত বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।সালমা জানে মায়ের যেকোন সিদ্ধান্তকেই তার হাসিমুখে মেনে নিতে হবে।এছাড়া উপায় নেই।নিয়তির নির্মমতা অল্প বয়সী কাউকেও নিমিষেই বড় বানিয়ে দিতে পারে।সালমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

পাশের ঘরের আলাপ এখন আর শোনা যাচ্ছেনা।মামা বিদায় নিবেন। এমন সময় ছোটবোন শাম্মি এসে বললো"আপা,আম্মা তোর একটা ছবি দিতে বলছে"।"তুই যা,আমি নিয়া আসতাছি।বলেই খাট থেকে উঠে আলমারীতে রাখা পুরনো ছবির এলবামটি বের করলো সে।এলবামের প্রথম ছবিটি তার ছোটবেলার।বাবা মার সাথে তুলা একমাত্র ছবি।অনেকক্ষণ ধরে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলো সে।চোখ দুটি ছলছল করে উঠলো নিমিষেই।তার মনে হতে থাকলো"বড় হওয়ার সাথে সাথে সে একটা পুতুলে পরিণত হয়েছে নিজের অজান্তেই।"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×