somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-কমার্স ডট কম

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টাকা উড়ানোর সবচেয়ে ভালো যায়গা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তরে ক্যাসিনোর কারনে প্রথম যদি নাও হতে পারে দ্বিতীয় স্থানটা অবশ্যই মার্কেট বা শপিং কমপ্লেক্স-এর।

বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ক্লাসে একবার একটা গল্প বলেছিলেন। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্বভাবসুলব ’জীবনমুখী’ গল্প। অনেক বেশী টাকা বেতনের চাকরির সুযোগ ছেড়ে কেন তিনি মাত্র ৩০০ টাকা বেতনে বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি বেছে নিলেন সেই গল্প। তার অনেক যুক্তি ছিল। আর ছিল এক বন্ধুর উদাহরণ। আমাদের মেধাবী শিক্ষকটি যখন মাত্র তিনশত টাকা মাইনে’র বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক তখন তার ক্লাসের অনেক পিছিয়ে থাকা এক বন্ধু কয়েক হাজার টাকা বেতনের কোন্ একটা প্রাইভেট কোম্পানীর চাকুরে। ঘটনা চক্রে একদিন দুই বন্ধুর দেখা। অনেক কথার পর বন্ধুটি নাকি স্যারকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ”সেলিম, আমি অনেক টাকা বেতন পাই সত্য, কিন্তু সেই টাকা খরচ করার সময় পাই না। আমি যখন অফিসে যাই নিউমার্কেট তখনও খোলেনি, আর আমি যখন অফিস থেকে ফিরি নিউমার্কেট ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে!” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বসুন্ধরা সিটি বা যমুনা ফিউচার পার্ক-এর অনেক অনেককাল আগের এই ঘটনার সময় নিউমার্কেটই নাকি ছিল রাজধানী ঢাকার এক ও অদ্বিতীয় খরচ কেন্দ্র।

স্যারের বন্ধুটির মতো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরও নাকি একই সমস্যা। ক্লাবের কাড়ি কাড়ি ইউরোর বেতন ভাতাদি বাদেও কেবল বিজ্ঞাপণী চুক্তি থেকেই তার আয় বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে নতুন একটা ব্যাংক কোম্পানী খুলতে ন্যূনতম মূলধন লাগে ৪০০ কোটি টাকা। বেতন-ভাতা এবং বিজ্ঞাপনী আয় মিলিয়ে বছর বছর একটা করে ব্যাংক দেবার সামর্থ আছে সিআরসেভেনের।

অথচ সেই টাকা খরচ করার জন্য তিনি নাকি মার্কেটেই যেতে পারেন না। শপিংএ যাবার সময় বা সুযোগ তার হাতে নেই। ক্লাবের নিবিড় অনুশীলন, ব্যাস্ত সুচি এর ফাকে যেটুকু সময় পাওয়া যায় তাও আবার যায় হাজারো পণ্য প্রচারণার কাজে। তাছাড়া খ্যাতির বিড়ম্বনাতো আছেই--সময় বের করা ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ, ভক্ত-অনুরাগী সামলানো...হাজারো হাঙ্গামা।

তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভাগ্য ভালো বলতে হয় এই কারনে যে এখন টাকা খরচ করার জন্য মার্কেট বা শপিং মলে আর না গেলেও চলে। কষ্টার্জিত টাকা খরচ করার জন্য এখন আর কষ্ট করে পথে পথে ঘুরতে হয় না। এখন আর মার্কেটে যেতে হয় না, ঘরে বসে কেবল মাউসের একটা ক্লিক বা আঙ্গুলের একটুকু ছোয়াই যথেষ্ট, মার্কেট চলে আসে ঘরে। আর এই একটা জিনিসই সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর আমার মতো স্টারবিহীন লাখো মানুষকে নিয়ে এসছে একই কাতারে। রোনালদো-মেসিরও গোটা দুই মাউসের ক্লিক, আমারও গোটা দুই ক্লিকই লাগে।

তাই ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে মার্কেটে যেয়ে ধাক্কা ধাক্কি করে কেনা কাটা করে এত এত জিনিস আবার বয়ে বাসায় নিয়ে আসার কী প্রয়োজন? গ্রামের হাটে বা মেলায় দেখা যেত একজন লোক কী সব পণ্য নিয়ে বসে আছে, আর তাকে ঘিরে শত উৎসুক জনতার এক বৃত্ত। সেই বিক্রেতা তাসের জাদু, সাপের খেলা বা বাশির সুর থামিয়ে একটু পর পর তার পণ্যের গুণকীর্তন করতেন আর চিৎকার করে বলতেন--’আর কোন ভাই এর লাগবে? আওয়াজ দেন, জায়গায় পৌছে দেব।’ আজকের ই-কমার্সওয়ালার নিরবে ওই একই কথা বলতে থাকে--’আওয়াজ দেন, যায়গায় পৌছে দেব’। পৌছে তারা দিচ্ছেও। মাত্র কয়েক ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ দিন দুই-তিনেকের মধ্যেই পণ্য পৌছে যাচ্ছে বড়িতে। গ্রামের হাটের সেই বিক্রেতার সাথে শুধু পার্থক্য একটাই, হয়তো সে বিকোয় একটাই পণ্য--’গোপন রোগের মহৌষধ’, আর ই-কমার্স বিক্রি করে আক্ষরিক অর্থেই যে কোন বস্তু। কী নেই ই-কমার্সে? ’সল্ট টু সফটওয়্যার’, ’জিরা থেকে হিরা’--সব্ই আছে। নারীর শাড়ি, শিশুর ছড়া, বুড়োর ছড়ি সবই। শুধু কি তাই? অনলাইনে শুটকি মাছ, এমনকি কোরবাণীর গরুও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।

উন্নত বিশে^ যা করছে আমাজন, ইবে’রা আমাদের দেশে তাই করে দেখাচ্ছে প্রিয়শপ, এখনি, রকমারি’রা।

একটা সময় ছিল দর কষাকষি না করতে হলে কেনাকাটা অসম্পূর্ণ মনে হত। এই ’ফিক্সড প্রাইস’ এর যুগে এসে দরদাম না করতে হলেই যেন লোকে হাফ ছেড়ে বাঁচে--আমরা অনেকটাই ’দরদাম না করতে শিখে গেছি’। দোকান দোকান না ঘুরলে কেনাকাটাটা যাদের কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়, অচিরেই তারাও হয়তো মজা পেয়ে যাবে ঘরে বসে কেনাকাটা করতে। আর মজা পাবে নাই বা কেন? বিছানায় শুয়ে বসে ই-কমার্স সাইটে ক্লিক করলেই হলো। অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে, ওরা পৌছে দিয়ে যাবে বাড়িতে, এমনকি জিনিস হাতে বুঝে পেয়ে তারপর পরিশোধ করা যাবে মূল্য। পছন্দ না হলে দেয়া যাবে ফেরতও। শুধু তাই নয়, প্রিয়শপ ডট কম-এ ব্লগ লিখেও সঙ্গীসহ যাওয়া যায় থাইল্যান্ডে, পাওয়া যায় স্মার্ট ফোন, ট্যাবসহ আকর্ষণীয় সব পুরস্কার!

আজ কেন যেন কেবলই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ইকোনমিক্স ক্লাসে পেছনে বসে কথা বলছিলাম। স্যার দেখে ফেলে হুঙ্কার দিয়ে বললো--বল, হোয়াট ইজ মার্কেট ইন ইকোনমিক্স?
আমি কোনরকম আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম--মার্কেট, মার্কেট...ইজ এ প্লেস হোয়ার...’
স্যার যেন এই অপেক্ষাতেই ছিলেন, গলার স্বর আরও এক কাঠি চড়িয়ে শুরু করলেন--”হোয়াট? মার্কেট ইজ এ প্লেস...? এটাতো একজন রিক্সাপুলারের ডেফিনিশন হতে পারে, কোন ভার্সিটি স্টুডেন্টের নয়।”

আজকাল অনেক রিক্সার পেছনে লেখা দেখা যায়--”রিক্সাওয়ালারা এই সমাজেরই অংশ।” আমি আলবৎ স্বীকার করি একথা। তারপরও, আমি গরীব হতে পারি, কিন্তু ছোটলোকতো নই। ’এই সমাজেরই অংশ’ রিক্সাওয়াদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ক্লাসের ফর্সা রমণীদের সামনে কেইবা এরকম একটা তুলনায় প্রীত হতে পারে?

না বুঝে মুখস্ত করার অভ্যাস প্রতিভাকে ধ্বংস করে। এটা জেনেও প্রতিভা ধ্বংস করেই আমি শিখে রাখলাম--Market is the set of actual and potential buyers and sellers of… সেদিন স্যারের ক্লাসে মনযোগ না দেয়াটা আমার বড় অপরাধ ছিল নাকি কোন এক সুন্দরী মেয়ের পাশে বসাটা তা জানিনা। তবে আজ যখন চারিদিকে ই-কমার্সের রমরমা অবস্থা দেখি তখন মনে পড়ে যায়, সেই ঘটনায় আমি দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখতে পেরেছিলাম--প্রথমত, তরুণ শিক্ষকের ক্লাসে সুন্দরী সহপাঠীর পাশে বসতে নেই, আর দ্বিতীয়ত, মার্কেট বলতে কোন নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝায় না।

সেদিনের সেই না বুঝে মুখস্ত করে যেটুকু প্রতিভা ধ্বংস করেছিলাম তা আবার নিজের কাছে ফিরে আসল। জানলাম মার্কেট কোন স্থান নয়, কোন সারি সারি দোকান বা কোন বিল্ডিং নয়। মার্কেট এখন বড় আজব এক জিনিস।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×