বোকো হারাম শত শত স্কুল ছাত্রীদের গুম করে ফেললো। গতকাল পাকিস্তানে শতাধিক ছাত্রকে বোমা মেরে / গুলি করে হত্যা করা হোল। তালেবানরা বললো এটা জিহাদ অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধ ! ধর্মযুদ্ধ হোল ধর্ম প্রসারের জন্য বিধর্মীদের বিরুদ্ধে, বিধর্মী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিভিন্ন নামের সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীই বলছে তাদের এই জিহাদি যুক্তির উৎস একই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই গ্রন্থই অনুসরণ করে বলছে ইসলাম শান্তির ধর্ম। বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য আমাদের জিহাদ করার প্রয়োজন হয়নি। আমরা করেছিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধ। কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবানরা বলছে এটা তাদের জিহাদ।
আমরা যারা সাধারণ জনগণের উপর জিহাদের নামে আক্রমণের বিরুদ্ধে, আমরা যারা নারী/শিশুদের শিক্ষা লাভের সুযোগের পক্ষে, তাদের বিক্রি করে দেয়ার বিরুদ্ধে এবং আরো অনেক পশ্চাতপদতা সমর্থন করি না তারা কি শুধু নিন্দা জানিয়েই এই বিষবাষ্প থেকে মুক্ত থাকতে পারবো? নিদেন পক্ষে বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় যুক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনার অধিকারও আমরা পাবো না?
এই বিষবাষ্প আজ সমাজে সন্তপর্নে নিঃসরিত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেককে গ্রাস করে চলছে এটা আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। আমাদের উঠতি বয়সের তরুণেরা রাস্তা ঘাটে, খেলার মাঠে, ভর্তি কোচিং এ এই জিহাদিদের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবাদ করার সাহস কারো হচ্ছে না। এমন কি নারী জিহাদিরা গৃহে গৃহেও ঢুকে পড়ছে। তৈরি করছে বিভিন্ন ধরণের গ্রুপ। মূল সমস্যা হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ধারণা। এমনকি পরিবারে, বন্ধু মহলে এগুলো নিয়ে মুক্ত আলোচনার কোন সুযোগ নেই। আলোচনা করতে গেলেই কেউ কেউ ভয়ংকর অনুভূতি প্রবণ হয়ে পরেন অথবা অনেকেই মুক্ত আলোচনাকে সযত্নে এড়িয়ে চলেন। ফলে তথাকথিত জিহাদিদের জন্য আমাদের সমাজ হোল এক উন্মুক্ত চারণ ক্ষেত্র।
গণতান্ত্রিকরা ধর্মীয় অজ্ঞতাকে প্রসয়/সমর্থন দিয়ে ভোটের বাক্স ভরতে চান।
প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ধর্মের সমালোচনাকে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়া মনে করেন।
সমাজতন্ত্রীরা মনে করেন শ্রেনিযুদ্ধই সকল সামন্তীয় অবশেষের অবসান ঘটাবে।
বিলোপবাদী বামরা মনে করেন এটা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক ধরণের মুক্তিযুদ্ধ।
তথাকথিত মুক্তমনারা ধর্মীয় মনিষীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে সুস্থ যুক্তিতর্ককে অঙ্কুরেই জলাঞ্জলি দেন।
আর আমরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি এই সুযোগে আমাদের উঠতি বয়সের তরুণ ছেলে / মেয়েদের ঘিরে আছে একদল শিকারি।
.