ইদানিংকার হিন্দি গান শোনার চেস্টা করতে গিয়ে বুঝলাম, এটা আমার জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। ইংলিশ আর হিন্দির সংমিশ্রনে, তার সাথে ডিজে মিক্সিং করে শেষ পর্যন্ত যে গান শুনতে হয় তা আর যাই হোক আমার মনে ভালো কোন অনুভুতির জন্ম দেয় না।
ডিজের জন্য আমি টিয়েস্টো কিনবা ক্লাইমেক্সের গান শুনি। ওয়েস্টার্নের জন্য শুনি পুরাতন ইংলিশ ব্যান্ডের গান। ব্যান্ড সঙ্গিতের জন্য আমাদের দেশি ব্যান্ডের কোন তুলনা হয়না ইন্ডিয়ার সাথে। সফট কিংবা মেটাল সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে আছে হাজার গুন। হার্ড মেটালের জন্য তো প্রচলিত মেটাল ঘারানার ব্যান্ডগুলা আছেই। তাহলে কেন শুনবো হিন্দি গান ?
কারন এ আর রাহমান এর মত কম্পপজার অথবা কলোনিয়াল কাজিন'স এর মতব্যান্ড গুলা এখনো টিকে আছে। অনেকেই হয়তো শুনেন নি কলোনিয়াল কাজিন'স এর গান। পোস্ট টি পড়ার পর তাদেরগান শুনে দেখুন। হিন্দি গান কে হয়তো নতুন ভাবে মুল্যায়ন করতে পারবেন।
সুতরাং ফিরে যাই ৯৬/৯৭ এর দিকে। ফিউশন গানের নতুন এক দুয়ার খুলে দিলো একটা ব্যান্ড। প্রথম এলবামের পর অনেকেই নতুন করে ভাবতে শুরু করে, অন্যরকম তো। কিন্ত বস্তাপচা সব গানের ভিড়ে হারিয়ে যায় তাদের গান। শুধু বেচে থাকে আমাদের মত সেমিক্লাসিকাল ফিউশন গানের ভক্তদের মনে।
প্রথমে আমার ভালো লাগা একটা গান শুনে নেই সবার আগে।আমি জানি, আপনাদের ও ভালো লাগবে। লিরিক্সটা খুবি চমৎকার।আপনাদের সুবিধার্তে লিরিক্স এর কিছু অংশ তুলে দিলাম-
darkness coming round
and everybody fighiting
with their brothers
everybody wants control
dont hesitate to kill one another
so come back as jesus
come back as save the world
bless all the future
of every boy and girl
come back as rama
forgive us for what we we've done
come back as allah
come back as anyone......
কলোনিয়াল কাজিন'স ব্যান্ডের মেম্বার মাত্র দুই জন। প্রথমে আসুন তাদের সম্পর্কে কিছু কথা জানি।
হরিহরনঃ
ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ মিউজিকপ্রেমী বলা যায়। ইংলিশ ব্যান্ডের পাগল ছিলাম তখন, সেই অনুপাতে হিন্দি গান তেমন একটা শোনা হয়নি । শোনার মাঝে শুনতাম খালি এ আর রাহমান এর কম্পোজিশন। সেখান থেকেই পরিচয় হরিহরনের সাথে।
হরিহরনকে যারা চিনেন না তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া জরুরী। ইন্ডিয়ান পচে যাওয়া পপ গানের মাঝে এখনো ক্লাসিকাল যাদের টানে, গম্ভির এবং মায়াবী কন্ঠের যাদুতে যারা এখনো হারিয়ে যেতে চান, তারা হরিহরনের গান শুনে দেখুন। সুর নিয়ে খেলা করতে পারে, সুরের আবেগে মুর্ছনা তৈরি করতে পারে এমন গায়ক খুব বেশি একটা নেই। সে কারনেই হয়তো এ আর রাহমান প্রথম থেকেই তার ক্লাসিকাল, সেমিক্লাসিকাল রোমান্টিক গানের জন্য পছন্দ করে আসছেন হারিহরন কে। বম্বে ছবির তু হি রে, তাল ছবির নেহি সামনে তু এই গানগুলির কোন তুলনা হয় না আসলে।
তু হি রে গানটা একবার শুনবেন নাকি ? আমার কিন্ত শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কম্পোজার এ আর রাহমানের যেমন কৃতিত্ব আছে তেমনি গায়ক হরিহরন ও মনের আবেগ ঢেলে দিয়েছে গানটিতে।
হরিহরনের জন্ম ১৯৫৫ সালে। তিনি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম, কান্নাডা সহ আরো নানান ভাষায় গান করেন। জাগজিত সিং এর গজলের বিশেষ ভক্ত হয়ায় তালিম নেন ওস্তাদ গোলাম মুস্তাফার কাছ থেকে। ১৯৭৭ সালে পান অল হিন্দু সুর সিঙ্গার পুরস্কার।১৯৯২ তে এ আর রাহমানের সাথে প্রথম কাজ করেন রোজা ছবিতে। ১৯৯৪ সালে তার "গুলফাম" এল্বাম বেস্ট গজল এল্বামের পুরস্কার পায়। ১৯৯৮ সালে পান বেস্ট প্লেব্যাক সিঙ্গারের পুরস্কার। ২০০৪ এ ভারতের সন্মানীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী দিয়ে তাকে সন্মানিত করা হয়।
১৯৯৬ সালে বম্বের বিখ্যাত সুরকার কম্পোজার লেসলি লুইসের সাথে বের করেন প্রথম ফিউশন এলবাম " কলোনিয়াল কাজিন'স"। তিনিই হিন্দি ফিউশন মিউজিকের প্রথম পাইওনিয়ার।
চলুন শুনি তাদের প্রথম এল্বামের একটি গান। চমৎকার এই সপ্নময়ী গানের নাম "ইটস গনা বি অলরাইট।"
লেসলি লুইসঃ
কলোনিয়াল কাজিন'স এর জনক লেসলি লুইস। বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার পি এল রাজের ছেলে। যারা কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া শুনেন, তারা হয়তো জানেন, কোক স্টুডিওর এত চমৎকার সব গানের মিউজিক ডাইরেক্টর লেসলি লুইস। বাশি কিংবা গিটার, কি বোর্ড কিংবা ড্রামস সবকিছুতেই তার দক্ষতা বিষ্ময়কর। ১৯৯২ তে একটা জিঙ্গেলের কম্পোজিশনের সময় তার সাথে পরিচয় হয় হরিহরনের। হরি তখন অলরেডি প্রতিষ্ঠিত। ফলাফল- দুই জনের জ্যামিং এবং সেরা একটি ফিউশন ব্যান্ডের সৃষ্টি।
লেসলি মিউজিকালি ইন্সপায়ার্ড হয় বিটলস এবং জিমি এন্ডরিক্স দ্বারা। বিখ্যাত মিউজিক ডাইরেক্টর আর ডি বর্মন এবং আনন্দজির সাথে রেকর্ডিং এর সৌভাগ্য হয় তার। লতা মুঙ্গেস্করের অতুন্ত কাছের মানুষ লেসলি।
১৯৮৭ সালে প্রথম একটি মিউজিক কোম্পানি লঞ্জ করেন এবং শুরু করেন জিঙ্গেল কম্পোজিশন। সেই সময়কার বিখ্যাত অনেক টিভি সিরিয়ালের এবং এডের সঙ্গিত সংযোজন তার করা। মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ এডভার্টাইজিং আর্ট এর পক্ষ থেকে বেস্ট মিউজিক কম্পোজারের পুরস্কার জিতে নেন।
আশা ভোসলের সাথে "রাহুল এন্ড আই", আলিশার "বম্বে গার্ল", কেকের "পাল" তার জনপ্রিয় কাজগুলোর মাঝে অন্যতম। বাস্তব জীবনে তিনি বেশ রসিক এবং অনুভুতিপ্রবন মানুষ। তার লিরিক্স গুলাকে নিজের ব্যক্তিজীবনের প্রতিচ্ছবি বলা যায়।
তিনি কোন ট্রেইন্ড সিঙ্গার না হলেও হ্রিহিরনের সাথে জাম করতে গিয়ে তার ওয়েস্টার্ন ফ্লেভারের ভোকাল সবার নজরে আসে।নিসন্দেহে কলোনিয়াল কাজিন'স এর জন্য তার লেখা গানগুলো তার শ্রেষ্ঠ এচিভমেন্ট।
কলোনিয়াল কাজিন'স এর আরো কিছু কথাঃ
নানা কথার ফাকে ফাকে অনেকটাই বলে ফেলেছি তাদের কথা। যেগুলো বাদ পড়ে গেছে তা হলো-
বান্ড ফর্ম হয়ঃ ১৯৯৬ সালে
ডেবিউ এলবামঃ কলোনিয়াল কাজিন'স
পরবর্তি এলবামঃ দা ওয়ে উই ডু ইট (১৯৯৮)
আত্মা (২০০১)
মধি ভিলায়দু (২০০৯)
চিক্কু বুক্কু (২০১০)
লেটেস্ট গানঃ সাজনা ভে (২০১১)
আসুন শুনে আসি তাদের একবারে লেটেস্ট একটা গান।
সঙ্গিত সার্বজনীন। এ কারনেই হয়তো দু জন দু মেরুর শিল্পী হয়ার পরেও তৈরি করেছে এমন একটি ব্যান্ড। কার ভিতর শিল্পসত্ত্বা কিভাবে জাগ্রত হয় কেউ বলতে পারেনা। আমি প্রার্থনা করি তারা আরো সুন্দর সুন্দর গান আমাদের উপহার দিক।
কিছু কিছু জিনিস আমার মনে হয় পৃথিবীতেও দিতে পারে স্বর্গানুভুতি। তার মাঝে একটা হলো সুর,সঙ্গিত। একে অবহেলা করার কোন অবকাশ নাই।সময় বুঝে তারুন্যে ভরপুর আধুনিক গানের সাথে সাথে চেস্টা করুন মেলোডি নির্ভর সফট গান শোনার।সুরের মুর্ছনায় উদ্ভাসিত হোক আপনাদের জীবন।
------------------------------------------------------
সামুতে আমি যে সকল মিউজিকপ্রেমী ব্লগার দেখেছি, তার মাঝে অন্যতম হলো কবির চৌধুরি। সামুর সঙ্গিত বিষয়ক পোস্ট কে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। আমার প্রায় সমস্ত প্রিয় শিল্পীদের নিয়েই তার পোস্ট আছে। আমি চাইলেও কখনো অমন লেখতে পারবোনা। কারন সে রকম লেখার জন্য জ্ঞানের সাথে সাথে চাই সঙ্গিতপ্রেমি একটা মন।
এ পোস্টটি কবির ভাইয়ের নামে উৎসর্গকৃত থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮