somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Colonial Cousin : সুরের মুর্ছনা সৃষ্টিকারি এক ফিউশন ব্যান্ডের গল্প।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানিংকার হিন্দি গান শোনার চেস্টা করতে গিয়ে বুঝলাম, এটা আমার জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। ইংলিশ আর হিন্দির সংমিশ্রনে, তার সাথে ডিজে মিক্সিং করে শেষ পর্যন্ত যে গান শুনতে হয় তা আর যাই হোক আমার মনে ভালো কোন অনুভুতির জন্ম দেয় না।




ডিজের জন্য আমি টিয়েস্টো কিনবা ক্লাইমেক্সের গান শুনি। ওয়েস্টার্নের জন্য শুনি পুরাতন ইংলিশ ব্যান্ডের গান। ব্যান্ড সঙ্গিতের জন্য আমাদের দেশি ব্যান্ডের কোন তুলনা হয়না ইন্ডিয়ার সাথে। সফট কিংবা মেটাল সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে আছে হাজার গুন। হার্ড মেটালের জন্য তো প্রচলিত মেটাল ঘারানার ব্যান্ডগুলা আছেই। তাহলে কেন শুনবো হিন্দি গান ?

কারন এ আর রাহমান এর মত কম্পপজার অথবা কলোনিয়াল কাজিন'স এর মতব্যান্ড গুলা এখনো টিকে আছে। অনেকেই হয়তো শুনেন নি কলোনিয়াল কাজিন'স এর গান। পোস্ট টি পড়ার পর তাদেরগান শুনে দেখুন। হিন্দি গান কে হয়তো নতুন ভাবে মুল্যায়ন করতে পারবেন।



সুতরাং ফিরে যাই ৯৬/৯৭ এর দিকে। ফিউশন গানের নতুন এক দুয়ার খুলে দিলো একটা ব্যান্ড। প্রথম এলবামের পর অনেকেই নতুন করে ভাবতে শুরু করে, অন্যরকম তো। কিন্ত বস্তাপচা সব গানের ভিড়ে হারিয়ে যায় তাদের গান। শুধু বেচে থাকে আমাদের মত সেমিক্লাসিকাল ফিউশন গানের ভক্তদের মনে।

প্রথমে আমার ভালো লাগা একটা গান শুনে নেই সবার আগে।আমি জানি, আপনাদের ও ভালো লাগবে। লিরিক্সটা খুবি চমৎকার।আপনাদের সুবিধার্তে লিরিক্স এর কিছু অংশ তুলে দিলাম-

darkness coming round
and everybody fighiting
with their brothers
everybody wants control
dont hesitate to kill one another

so come back as jesus
come back as save the world
bless all the future
of every boy and girl

come back as rama
forgive us for what we we've done

come back as allah
come back as anyone......




কলোনিয়াল কাজিন'স ব্যান্ডের মেম্বার মাত্র দুই জন। প্রথমে আসুন তাদের সম্পর্কে কিছু কথা জানি।


হরিহরনঃ

ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ মিউজিকপ্রেমী বলা যায়। ইংলিশ ব্যান্ডের পাগল ছিলাম তখন, সেই অনুপাতে হিন্দি গান তেমন একটা শোনা হয়নি । শোনার মাঝে শুনতাম খালি এ আর রাহমান এর কম্পোজিশন। সেখান থেকেই পরিচয় হরিহরনের সাথে।



হরিহরনকে যারা চিনেন না তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া জরুরী। ইন্ডিয়ান পচে যাওয়া পপ গানের মাঝে এখনো ক্লাসিকাল যাদের টানে, গম্ভির এবং মায়াবী কন্ঠের যাদুতে যারা এখনো হারিয়ে যেতে চান, তারা হরিহরনের গান শুনে দেখুন। সুর নিয়ে খেলা করতে পারে, সুরের আবেগে মুর্ছনা তৈরি করতে পারে এমন গায়ক খুব বেশি একটা নেই। সে কারনেই হয়তো এ আর রাহমান প্রথম থেকেই তার ক্লাসিকাল, সেমিক্লাসিকাল রোমান্টিক গানের জন্য পছন্দ করে আসছেন হারিহরন কে। বম্বে ছবির তু হি রে, তাল ছবির নেহি সামনে তু এই গানগুলির কোন তুলনা হয় না আসলে।

তু হি রে গানটা একবার শুনবেন নাকি ? আমার কিন্ত শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কম্পোজার এ আর রাহমানের যেমন কৃতিত্ব আছে তেমনি গায়ক হরিহরন ও মনের আবেগ ঢেলে দিয়েছে গানটিতে।



হরিহরনের জন্ম ১৯৫৫ সালে। তিনি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম, কান্নাডা সহ আরো নানান ভাষায় গান করেন। জাগজিত সিং এর গজলের বিশেষ ভক্ত হয়ায় তালিম নেন ওস্তাদ গোলাম মুস্তাফার কাছ থেকে। ১৯৭৭ সালে পান অল হিন্দু সুর সিঙ্গার পুরস্কার।১৯৯২ তে এ আর রাহমানের সাথে প্রথম কাজ করেন রোজা ছবিতে। ১৯৯৪ সালে তার "গুলফাম" এল্বাম বেস্ট গজল এল্বামের পুরস্কার পায়। ১৯৯৮ সালে পান বেস্ট প্লেব্যাক সিঙ্গারের পুরস্কার। ২০০৪ এ ভারতের সন্মানীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী দিয়ে তাকে সন্মানিত করা হয়।

১৯৯৬ সালে বম্বের বিখ্যাত সুরকার কম্পোজার লেসলি লুইসের সাথে বের করেন প্রথম ফিউশন এলবাম " কলোনিয়াল কাজিন'স"। তিনিই হিন্দি ফিউশন মিউজিকের প্রথম পাইওনিয়ার।

চলুন শুনি তাদের প্রথম এল্বামের একটি গান। চমৎকার এই সপ্নময়ী গানের নাম "ইটস গনা বি অলরাইট।"




লেসলি লুইসঃ

কলোনিয়াল কাজিন'স এর জনক লেসলি লুইস। বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার পি এল রাজের ছেলে। যারা কোক স্টুডিও ইন্ডিয়া শুনেন, তারা হয়তো জানেন, কোক স্টুডিওর এত চমৎকার সব গানের মিউজিক ডাইরেক্টর লেসলি লুইস। বাশি কিংবা গিটার, কি বোর্ড কিংবা ড্রামস সবকিছুতেই তার দক্ষতা বিষ্ময়কর। ১৯৯২ তে একটা জিঙ্গেলের কম্পোজিশনের সময় তার সাথে পরিচয় হয় হরিহরনের। হরি তখন অলরেডি প্রতিষ্ঠিত। ফলাফল- দুই জনের জ্যামিং এবং সেরা একটি ফিউশন ব্যান্ডের সৃষ্টি।

লেসলি মিউজিকালি ইন্সপায়ার্ড হয় বিটলস এবং জিমি এন্ডরিক্স দ্বারা। বিখ্যাত মিউজিক ডাইরেক্টর আর ডি বর্মন এবং আনন্দজির সাথে রেকর্ডিং এর সৌভাগ্য হয় তার। লতা মুঙ্গেস্করের অতুন্ত কাছের মানুষ লেসলি।



১৯৮৭ সালে প্রথম একটি মিউজিক কোম্পানি লঞ্জ করেন এবং শুরু করেন জিঙ্গেল কম্পোজিশন। সেই সময়কার বিখ্যাত অনেক টিভি সিরিয়ালের এবং এডের সঙ্গিত সংযোজন তার করা। মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮৯ সালে ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ এডভার্টাইজিং আর্ট এর পক্ষ থেকে বেস্ট মিউজিক কম্পোজারের পুরস্কার জিতে নেন।

আশা ভোসলের সাথে "রাহুল এন্ড আই", আলিশার "বম্বে গার্ল", কেকের "পাল" তার জনপ্রিয় কাজগুলোর মাঝে অন্যতম। বাস্তব জীবনে তিনি বেশ রসিক এবং অনুভুতিপ্রবন মানুষ। তার লিরিক্স গুলাকে নিজের ব্যক্তিজীবনের প্রতিচ্ছবি বলা যায়।

তিনি কোন ট্রেইন্ড সিঙ্গার না হলেও হ্রিহিরনের সাথে জাম করতে গিয়ে তার ওয়েস্টার্ন ফ্লেভারের ভোকাল সবার নজরে আসে।নিসন্দেহে কলোনিয়াল কাজিন'স এর জন্য তার লেখা গানগুলো তার শ্রেষ্ঠ এচিভমেন্ট।

কলোনিয়াল কাজিন'স এর আরো কিছু কথাঃ

নানা কথার ফাকে ফাকে অনেকটাই বলে ফেলেছি তাদের কথা। যেগুলো বাদ পড়ে গেছে তা হলো-
বান্ড ফর্ম হয়ঃ ১৯৯৬ সালে
ডেবিউ এলবামঃ কলোনিয়াল কাজিন'স
পরবর্তি এলবামঃ দা ওয়ে উই ডু ইট (১৯৯৮)
আত্মা (২০০১)
মধি ভিলায়দু (২০০৯)
চিক্কু বুক্কু (২০১০)

লেটেস্ট গানঃ সাজনা ভে (২০১১)

আসুন শুনে আসি তাদের একবারে লেটেস্ট একটা গান।



সঙ্গিত সার্বজনীন। এ কারনেই হয়তো দু জন দু মেরুর শিল্পী হয়ার পরেও তৈরি করেছে এমন একটি ব্যান্ড। কার ভিতর শিল্পসত্ত্বা কিভাবে জাগ্রত হয় কেউ বলতে পারেনা। আমি প্রার্থনা করি তারা আরো সুন্দর সুন্দর গান আমাদের উপহার দিক।


কিছু কিছু জিনিস আমার মনে হয় পৃথিবীতেও দিতে পারে স্বর্গানুভুতি। তার মাঝে একটা হলো সুর,সঙ্গিত। একে অবহেলা করার কোন অবকাশ নাই।সময় বুঝে তারুন্যে ভরপুর আধুনিক গানের সাথে সাথে চেস্টা করুন মেলোডি নির্ভর সফট গান শোনার।সুরের মুর্ছনায় উদ্ভাসিত হোক আপনাদের জীবন।

------------------------------------------------------

সামুতে আমি যে সকল মিউজিকপ্রেমী ব্লগার দেখেছি, তার মাঝে অন্যতম হলো কবির চৌধুরি। সামুর সঙ্গিত বিষয়ক পোস্ট কে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। আমার প্রায় সমস্ত প্রিয় শিল্পীদের নিয়েই তার পোস্ট আছে। আমি চাইলেও কখনো অমন লেখতে পারবোনা। কারন সে রকম লেখার জন্য জ্ঞানের সাথে সাথে চাই সঙ্গিতপ্রেমি একটা মন।

এ পোস্টটি কবির ভাইয়ের নামে উৎসর্গকৃত থাকুক।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮
৫৪টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×