somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন থেকে নেয়া-১২-শূন্য থেকে শীর্ষে : শাকিরা

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি ২০০৯ সালে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া শাকিরার সাক্ষাৎকার ও তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট অবলম্বনে লিখেছেন অঞ্জলি সরকার যেটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। জীবন থেকে নেয়া প্রতিটি লেখাই কপি পেস্ট করা লেখা। নিতান্তই নিজের কালেকশনে রাখার জন্য লেখাগুলো এক সাথে করা। যখন খুব বেশি হতাশ হয়ে যাই তখন এই লেখাগুলু অনুপ্রেরনা দেয়।

----------------------------------------------------------------------------
ফুটবল বিশ্বকাপে শাকিরা না থাকলে কি চলে? তাই তো এবারের বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানেও শাকিরা ‘লা লা’ গান দিয়ে মাতালেন পুরো বিশ্বকে। তাঁর গাওয়া ২০১০ বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’ ছিল ইউটিউবে সর্বাধিক শোনা গানের অন্যতম। শাকিরার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, কলম্বিয়ায়। তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি পেয়েছেন গ্র্যামি, গোল্ডেন গ্লোব, আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, এমটিভি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার।
তখন শাকিরার বয়স সবে আট বছর। হঠাৎই একদিন তাঁর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ব্যবসায় ধস নামলে শাকিরার বাবা অর্থাভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন আর মেয়েকে জোর করে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকতে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর শাকিরা নিজ শহরে ফিরে এসে দেখেন তাঁদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ‘বাড়ি ফিরে দেখি আমাদের সব আসবাব বিক্রি করে ফেলা হয়েছে, রঙিন টিভিটা নেই। দুটো গাড়ির একটাও নেই। আমি ভীষণ ভেঙে পড়ি।’ শাকিরার গান-নাচ সব থেমে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বড় হয়ে যিনি বিশ্ব মাতাবেন, তাঁর তো থেমে যাওয়া সাজে না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নিজের আত্মবিশ্বাস অটুট রেখে সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। শাকিরার গানের সঙ্গে সখ্য অবশ্য একেবারে অল্প বয়সেই। মাত্র চার বছরেই! চার বছরের ছোট্ট মেয়েটিই আস্ত একটা কবিতা লিখে ফেলেন, গালভরা একটা নামও দেন—লা রোসা দো ক্রিস্টাল (বাংলায় ‘স্ফটিকের গোলাপ’)। বাবাকে টাইপরাইটারে প্রায়ই গল্প লিখতে দেখে তাঁর নিজের একটা টাইপরাইটারের খুব শখ জাগে। বড়দিনের উপহার হিসেবে তাই জামা-জুতোর বদলে একটি টাইপরাইটার চেয়ে বসেন ছোট্ট শাকিরা। অবশেষে সাত বছর বয়সে হাতে আসে স্বপ্নের উপহার, তখনই কবিতা আর গান লিখে হাত পাকানোর শুরু। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আরবীয় সুর ও ঐতিহ্যবাহী এক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সুরটি ছোট্ট শাকিরার এত ভালো লাগে যে উচ্ছ্বসিত হয়ে টেবিলের ওপর উঠে নাচতে থাকেন তিনি।
বাবাকে কালো চশমা পরে থাকতে দেখে আট বছর বয়সে শাকিরা ‘তোমার কালো চশমা’ নামে তাঁর প্রথম গান লিখে ফেলেন। এভাবে শৈশবেই সংগীতের ভুবনে পথচলা শুরু পৃথিবীজুড়ে সংগীতপিপাসু কোটি ভক্তের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া গায়িকা শাকিরার।
ছোটবেলায় ক্যাথলিক স্কুলের শত নিয়মকানুনের মধ্যেও শাকিরার শিল্পচর্চা থেমে যায়নি। ক্লাসের সহপাঠীদের জন্য তো বটেই, শিক্ষকদের সামনেও তিনি গান গাইতেন। কিন্তু স্কুলের আনুষ্ঠানিক গানের দলে তাঁকে নেওয়া হয়নি কখনো। গানের দলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বলেছিলেন যে শাকিরার গান শুনলে মনে হয় ‘ছাগল ভ্যঁা ভ্যঁা করছে’। এমন বিদ্রুপ আর সমালোচনার পরও তিনি দমে যাননি। গান-নাচ দুটোই পুরোদমে নিজের চেষ্টায় চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রতি শুক্রবারে স্কুলের সবার সামনে এ সপ্তাহে শেখা নতুন নাচের মুদ্রা পরিবেশন করতেন শাকিরা। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন শিল্পী হওয়ার। বয়স ১০ হতে না-হতেই এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতে থাকেন তিনি।
কিন্তু স্বপ্ন আর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বাধ সাধে ভাগ্য। বাবার দেউলিয়া অবস্থায় পুরো পরিবারের সঙ্গে শিশু শাকিরার সময়ও কাটছিল চরম হতাশায়। এ সময় তাঁর বাবা তাঁকে একটি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যান, যাতে তিনি বুঝতে পারেন, অনেকের অবস্থা তাঁদের চেয়েও খারাপ। সেদিন পার্কে গিয়ে অনাথ, নিরাশ্রয় শিশুদের দেখতে দেখতে তাঁর হতাশা পরিণত হলো সংকল্পে। ‘পার্কে আমার বয়সী এমনকি আমার চেয়েও ছোট ছেলেমেয়েরা খালি পায়ে ঘুরে বেড়াত। তাদের কারও বাবা-মা ছিল না, থাকার জায়গাও ছিল না। এই বয়সেই তারা নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল। এসব দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম নিজের দুর্দশা তো কাটিয়ে উঠবই, কোনো দিন যদি বড় শিল্পী হতে পারি তবে এমন শিশুদের সাহায্যের জন্য সাধ্যমতো কাজ করব।’ প্রতিজ্ঞা করেন শাকিরা।
নিজের সেই প্রতিজ্ঞা সফলভাবেই রাখতে পেরেছেন শাকিরা। আজ সংগীতজগতের সবচেয়ে ধনী ও সফল তারকাদের অন্যতম তিনি। শুধু অর্থের দিক থেকেই নয়, অসাধারণ সংগীতে কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছেন তিনি। সমাজসচেতন এই শিল্পী জড়িত রয়েছেন সেবামূলক কাজের সঙ্গেও। নিজের দেশে তিনি শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন পিএজ দেস্কালজস্ ফাউন্ডেশন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেন্টস অ্যাডভাইসরি কমিশন অন এডুকেশনাল এক্সেলেন্স ফর হিস্পানিকস’-এর একজন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×