somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৫ এপ্রিল, ২০১৫। শনিবার। ভূমিকম্প। মাত্রা ৭ দশমিক ৯। অতিস্বাভাবিক মধ্যদুপুরে এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইউএস জিওলজিকাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারা থেকে ৫০ মাইল পূর্বে ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র। বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ভারত, তিব্বত, বাংলাদেশে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হলেও নেপালে মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ।
নেপালের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স মৃতের সংখ্যা ১১৩০ জন বলে জানিয়েছে। বিবিসি এই সংখ্যা প্রায় এক হাজার বলে উল্লেখ করেছে। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার পর্যন্ত জানিয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে চাপা পড়ে থাকায় সব সূত্রই বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে হিমালয় পর্বতমালায় ব্যাপক তুষার ধস হয়েছে। এতে অন্তত ১৮ পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বহু ভবন ধসে পড়েছে, এর মধ্যে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত ধারারা টাওয়ারসহ অনেক পর্যটন কেন্দ্রও রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়, মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে দুই মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল ভূমিকম্পটি! এবং এতেই এতো ব্যাপক পরিমান প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি, মানবিক বিপর্যয়!
এ-তো প্রলয় ছাড়া আর কিছুই নয়!

হ্যাঁ। প্রলয়।
ভূমিকম্প এমনই এক প্রলয়, এমনই এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা রুখে দেবার ক্ষমতা এখনও অর্জন করেনি মানুষ।

নেপাল প্রসঙ্গ থেকে সামান্য সরে দৃষ্টিপাত করি বাংলাদেশের দিকে। বিগত দশ বছরে মাঝারি ও ছোট মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে আমাদের এই গাঙ্গেয় বদ্বীপের মাটি কেঁপে উঠেছে অন্তত তিনশতাধিক বার। আর বিগত দেড়শ বছরে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার অধিক কম্পনে বাংলাদেশ মহাবিপর্যস্ত হয়েছে কমপক্ষে সাতবার।

১৮৬৯ সালের ১০ জানুয়ারী সংঘটিত কাছাড় ভূমিকম্পের তীব্রতার পরিমান ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫ মাত্রার। এই কম্পনে বাংলাদেশের প্রধান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল। ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই বেঙ্গল ভূমিকম্পে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া অঞ্চলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও মূল আঘাত পরিলক্ষিত হয় জামালপুর, শেরপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এই ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার। গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয় ১৮৯৭ সালের ১২ জুন। ৮.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটিকে পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল শিলং মালভূমির মাঝখানে। গত কয়েকশ বছরের মধ্যে এই ভূকম্পনেই সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ। গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে প্রাণহানি ঘটে মোট ১৫৪২ জনের, যার মধ্যে আমাদের বাংলাদেশেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪৫-এ।

৭.৬ মাত্রার শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয় ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই। ১৯৩০ সালের ৩ জুলাই সংঘটিত হয় ধূবড়ী ভূমিকম্প। ৭.১ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের ধূবড়ীতে। এতে রংপুরের পূর্বাঞ্চল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৩৪ সলের ১৫ জানুয়ারী সংঘটিত হয় বিহার ভূমিকম্প। এর তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৮.৩। এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল। ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত আসাম ভূমিকম্পটিও বিশ্বের বড় মাপের ভূমিকম্পগুলোর একটি। ৮.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল অরুণাচল প্রদেশে হলেও এর আঘাতের তীব্রতা অল্পবিস্তর স্পর্শ করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকেও।

ভূমিকম্প বিজ্ঞানী ও গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকির বাইরে নয়। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রতি একশ বা দেড়শ বছর পরপর বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে উঁচু মাত্রার ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনার কথা বলেন। তাদের কথামতো আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে সংঘটিত হতে পারে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার চাইতে বেশী তীব্রতার অধিক সময়সম্পন্ন ভূমিকম্প!

যদি তা-ই হয়, নেপালের চাইতে অধিক জনঅধ্যুষিত এলাকা হিসেবে অনেক বেশী ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণসংহার হবার কথা অপরিকল্পিত মহানগরী ঢাকায়। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক প্রলয়কে যেহেতু এড়াবার কোন উপায় নেই, সেহেতু দ্রুত সচেতন হওয়া উচিৎ আমাদের নীতিনির্ধারক, নগরবিদসহ সর্বোপরি আপামর জনসাধারণের। এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিৎ ভূকম্পনজনিত প্রলয় মোকাবেলার; ভূমিকম্প পরবর্তী মহাদূর্যোগ ব্যবস্থাপনার কথাও আমাদের ভাবা উচিৎ এখন থেকেই। দৃষ্টিরুদ্ধ করে বসে থেকে এড়ানো যাবে না এই প্রলয়! কারণ, অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না!


ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:০৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×