somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেক উঁচু রাজপ্রাসাদের জানালা পাহারা দিচ্ছে দৈত্যাকৃতির মেঘের দল।
রাজকন্যা বন্দিনী কঠিন নিয়মের নিগড়ে।
রাজ্যের বাতাস নীরব নিশ্চল।
বহুপথ পার হয়ে হতদরিদ্র রাজপুত্র এসে দাঁড়াল প্রাসাদের নিচে।
রাজকন্যাকে দেবার জন্য নিজের হৃদয় নিয়ে এসেছে সে।
কিন্তু রাজকন্যার কুচবরণ দিঘল কেশ সিন্দুকে তুলে রেখে দিয়েছেন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ রাজা।
কেশের জাদুকরী কৌশলে যাতে রাজকন্যার কাছে পৌঁছাতে না পারে হতদরিদ্র রাজপুত্র।

রাজপুত্রের কাছে ছিল অচিন বৃক্ষের বীজ।
দ্রুত সে বৃক্ষবীজ রোপন করল মাটিতে।
কিন্তু জল চাই যে বৃক্ষবীজের অঙ্কুরোদ্গমের জন্য, বেড়ে ওঠার জন্য চাই আকাশস্পর্শী স্পর্ধা।
বৃক্ষ বাড়তে বাড়তে প্রাসাদের উঁচু জানালা স্পর্শ করলে তবেই রাজকন্যা খুঁজে পাবে মুক্তির পথ!

কিন্তু এ কেমন রাজ্য!
কাছাকছি জল নেই যে, নদী নেই, নেই কোনো সরোবর, সমুদ্র!
জল ছাড়া কী করে হবে বীজের অঙ্কুরোদ্গম?
কী করে পরিণত হবে বৃক্ষে?
কী করে সেই বৃক্ষ প্রসারিত হবে প্রাসাদের জানালা পর্যন্ত?
ভীষণ চিন্তায় পড়ল রাজপুত্র!

দূরের আকাশ থেকে নেমে এল একটি তীক্ষ্ণঠোঁট ঈগল। রাজপুত্রকে জিজ্ঞেস করল, কী চিন্তা করছ?
রাজপুত্র বলল তার একান্ত ইচ্ছের কথা।
কিন্তু এ রাজ্য যে বৃক্ষহীন! এ রাজ্যে বৃক্ষ বাঁচে না! ঈগল জবাব দিলো বিষণ্ণ কণ্ঠে।
কেন? রাজপুত্রের অবাক জিজ্ঞাসা।
বুঝতেই পারছ, জল নেই তাই!
নিশ্চিত তুমি জল নেই রাজ্যের কোথাও?
ভালোভাবে জেনেই বলছি আমি রাজপুত্র।

কিন্তু রাজপুত্রের জল না হলে যে চলবেই না!
জল চাই যেকোনো মূল্যে।
রাজপুত্র চিন্তা করল দ্রুত। বলল, আচ্ছা! তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?
বলো কীভাবে সাহায্য করতে পারি আমি? ঈগল জানতে চাইল।
তুমি তোমার তীক্ষ্ণঠোঁটে উপড়ে নাও আমার বামহাতের কনিষ্ঠ আঙুল। রাজপুত্রের দৃঢ়কণ্ঠ।
রাজপুত্রের কথায় ভীষণ অবাক হয় ঈগল। এমন অদ্ভুত কথা সে শোনেনি কোনোদিন! তাই সে বলল, কী বলছ তুমি!
যা বলছি মঙ্গলের জন্য বলছি! বলছি কল্যাণের জন্য! এবং ভালোবাসার জন্য! আমার কথাটা রাখবে না তুমি?

রাজপুত্রের সকরুণ আর্তি উপেক্ষায় অসমর্থ ঈগল তা-ই করল অবশেষে।
ধারালো ঠোঁটের একটানে উপড়ে নিল রাজপুত্রের বামহাতের কনিষ্ঠ আঙুল।
রাজপুত্র ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল।
প্রচণ্ড ব্যাথায় চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় নামল জল।
সেই জলে দরিদ্র রাজপুত্র সিঞ্চিত করল বৃক্ষবীজ।
অঙ্কুরোদ্গম সম্পন্ন হলো অচিন বৃক্ষের।

এরপর দরিদ্র রাজপুত্র মধ্যম আঙুল উপড়ে নেবার অনুরোধ করল ঈগলকে।
হতবাক ঈগল তা-ই করল।
রাজপুত্রের চোখের জলে বৃক্ষ বেড়ে উঠল অনেকটা।
একে একে সমস্ত আঙুল হারাল রাজপুত্র।
হারাল হাত পা শরীরের প্রায় সব অঙ্গ।
গাছ প্রায় উঠে এসেছে অবরুদ্ধ রাজকন্যার জানালার কাছাকাছি।
এবার?
রাজপুত্রের কাছে অবশিষ্ট শুধু চোখ আর হৃদয়!
কী উৎসর্গ করবে রাজপুত্র এবার?
চোখ?
চোখ উৎসর্গ করলে হৃদয় পড়ে থাকবে!
কিন্তু চোখের জল পাওয়া যাবে না। বৃক্ষ বাড়বে না। পৌঁছবে না বৃক্ষ রাজকন্যার জানালা অবধি। মুক্ত হতে পারবে না রাজকন্যা। আর হৃদয় বিসর্জন দিলে রাজপুত্রের কাছে অবশিষ্ট থাকবে না রাজকন্যাকে দেবার মতো কিছু।

রাজপুত্রের কাছে রাজকন্যার মুক্ত জীবন অতীব কাঙ্ক্ষিত।
রাজপুত্র হৃদয় বিসর্জন দেবার সিদ্ধান্ত নিল।
রাজপুত্রের কথা মান্য করে ঈগল ছিন্নভিন্ন করল তার হৃদয়। রক্তাক্ত করল, ব্যথিত অন্তর নিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করল দরিদ্র রাজপুত্রের হৃদয়কে।
রাজপুত্রের চোখের জলের বন্যায় বৃক্ষ বাড়ল তীব্রবেগে। পরম আবেগে উঠে এল বৃক্ষ রাজকন্যার জানালা অবধি।

রাজকন্যা চন্দ্রাবতী নেমে এলো নিচে।
পরম মমতায় কুড়িয়ে নিল দরিদ্র রাজপুত্রের ভুলুণ্ঠিত সিক্ত চোখ দুটো।
চোখ আলোকিত হলো চোখের আলোয়।
তারপর অক্লেশে আকাশে মিলিয়ে গেল তারা।

বহুদিন পর চাঁদ জন্ম নিল।
জন্ম নিল শুকতারা আর সন্ধ্যাতারা।
কেউ কেউ ঠিক টের পেলো, চাঁদ আর কেউ নয়, তাদের রাজকন্যা চন্দ্রাবতী।
আর শুকতারা-সন্ধ্যাতারা হতদরিদ্র রাজপুত্রের দুই আলোকিত চোখ।


ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×