লিফট থেকে নেমে মিসেল নার্সিং স্টেশনের ঘড়ির দিকে তাকালো, সন্ধ্যা ৯টার কাছাকাছি, নার্সিং স্টেশনে কেহ নেই; সে নার্স, ক্যান্সার বিভাগে এসেছে মাস ছ'য়েক হলো; ভিজিটরেরা চলে গেছে, ভিজিটর রুমে টিভি চলছে; নতুন রোগী এনড্রু টিভি দেখছে একা; মিশেল এনড্রুকে হ্যালো বলে, নার্সিং স্টেশনে খাবারের ব্যাগটা রেখে রোগীদের রুমের দিকে গেলো, কোন ইমারজেন্সী আছে কিনা দেখার জন্য। এই সময় ২ জন না্র্স থাকার কথা; দেখলো, একরুমে ন্যান্সী রোগীকে খাওয়ায়ে দিচ্ছে; আরেক রোগীর গা মুছিয়ে দিচ্ছে সুজান অন্য রুমে। সে নার্সিং রুমে ঢূকলো কাপড় বদলায়ে তৈরি হতে।
কাপড় বদলানো সময়, সামনের আয়নায় এনড্রু'র প্রতিবিম্ব দেখলো মিশেল; এনড্রু পেছন থেকে তাকে দেখছে; সে পেছনে না তাকিয়ে কাপড় বদলালো; এনড্রু সরে গেছে; সে বেরিয়ে আসলো; এনড্রু নিজের রুমে চলে গেছে। মিশেল, নার্সিং লগে সাইন করে, রোগীদের রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে নিলো ২ মিনিটে।
ছোট শহরের এই ছোট হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের জন্য মাত্র ১২টা সিট, এখন৭ জন রোগী। এনড্রু এসেছে ৪ দিন হলো; তার ব্রেনে ক্যান্সার টিউমার; ৬ মাস আগে একবার সার্জারী করে সরানো হয়েছিল; আবার ফিরে এসেছে; সার্জারি হবে তিন দিন পর, শক্তিশালী ব্যাথার ঔষধ দিয়ে রাখা হয়েছে; সে অনেকটা ঘোরের মাঝে থাকে।
ন্যান্সীর ডিউটি শেষ, চলে গেলো রাত সাড়ে ৯ টায়; মিশেল রোগীদের দেখার জন্য বের হলো; সবার রুম ঘুরে, শেষে এনড্রু'র রুমে এলো; রুমের ভেতরে লাইট নেভানো, বাইরের আলোয় সব দেখা যায়, এনড্রু শুয়ে আছে, ঘুমায়নি। মিশেল কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, এনড্রু উঠে বসলো।
-এনড্রু কেমন আছো, ব্যাথা আছে?
-সামান্য, সুজান ওষধ দিয়েছে ঘন্টা খানেক আগে!
-ভালো, তোমার ভিজিটরদের মাঝে কোন মেয়ে দেখলাম না, তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?
না, গার্লফ্রেন্ড নেই; আমরা ধর্মীয় পরিবারের; ক্লাশের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় আছে; ক্যান্সার শুনে সে ভয় পেয়েছে।
-স্বাভাবিক। তুমি কোন মেয়ের সাথে ঘুমায়েছিলে কখনো?
-না, মা বলেছে পাপ হবে। এনড্রু বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো, জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, মিশলকে প্রশ্ন করলো,
-মিশেল, আমি বাঁচবো?
-এটা কি একটা প্রশ্ন হলো? তুমি শত বছর বাঁচবে; সার্জারীটা হয়ে গেলে তুমি মুক্ত।
এনড্রু দু'হাত বাড়িয়ে মিশেলকে বুকে টেনে নেয়ার জন্য সামনে এলো, কাছে এসে থেমে গেলো। মিশেল বললো,
-এনড্রু, যদি কোন মেয়ে তোমাকে দেখতে আসে, তুমি খুশী হবে?
-আমাকে দেখতে আসার মতো কোন মেয়ে তো নেই; কেহ এলে অনেক খুশী হবো, মনে হয়।
-কাল রাতে একটা মেয়ে আসবে তোমাকে দেখতে, কাউকে বলো না; মেয়েটাকে তোমার সাথে রাতে এখানে থাকার জন্য অনুরোধ করিও; আমি সুজানকে বলে যাবো; কালকে আমার ছুটি।
এনড্রুর কাছে দিনটা অনেক লম্বা মনে হলো; সন্ধ্যায় মা-বাবা আসলো, খাবার এনেছে; কিন্তু এনড্রু মনে মনে কোন এক অজানা ভিজিটরের জন্য উৎগ্রীব। মা বললো,
-এনড্রু, তোার খারাপ লাগছে?
-না, আমি আজকে অনেক ভালো।
আটটার মাঝে সব ভিজিটর চলে গেলো, এনড্রু অজানা কোন ভিজিটরের জন্য টিভি রুমে বসে রলো। সাড়ে ৮ টার দিকে সুজান টিভি রুমে ঢুকলো, বললো,
-এনড্রু, তোমাকে দেখার জন্য একটা মেয়ে এসেছে, নাম জেনি, সে তোমার রুমে গেছে।
এনড্রু জীবনে এতো সুন্দর কোন মেয়ের সাথে কথাও বলেনি, সে কিছুটা অপ্রস্তুত; মেয়েটা এনড্রুকে বুকে টেনে নিলো; তারপর বললো,
-এনড্রু, তুমি শীগ্রই ভালো হয়ে যাবে, তুমি খুবই সুন্দর।
মেয়েটি একটি ব্যাগ থেকে ছোট একটা চীজ-কেকে ও ২ কাপ চা বের করে টেবিলে রাখলো।
-তুমি কি করে জানো, আমি চীজ-কেক পছন্দ করি?
-মিশেল বলেছে।
মেয়েটি নিজেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো, জানালা দিয়ে আলো এসেছে; ২জনে বসে চায়ের সাথে চীজ-কেক খেলো; মেয়েটি নিজের জীবনের গল্প করলো, শেষে বললো,
-রাতে আমি তোমার সাথে থাকবো, তুমি যেন নিজকে একা না ভাবো।
-তোমাকে সারারাত থাকতে দিবে?
-মিশেল সেই ব্যবস্হা করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬