কখন কোন দিবস আসছে যাচ্ছে, ব্লগের প্রথম পাতা পড়লে বুঝা যায়; ব্লগারেরা আমাদের ইতিহাসকে জীবন্ত রেখেছেন, সামনের দিনগুলোতেও রাখবেন; সকাল থেকে ব্লগে বেচারী মৃত ফেলানীর সেই ঝুলন্ত ছবিটা ঝুলছে!
ফেলানী খাতুন ১৯৯৬ সালে জন্মেছিলেন; তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা; শেখ হাসিনা কি জানতেন যে, এই রকম এক বিখ্যাত কন্যা জন্মেছেন বাংলায়, যার মৃত ঝুলন্ত ছবি বিশ্বের প্রায় ৩০০/৪০০ কোটী মানুষ দেখবে? জানা অসম্ভব ছিলো না; সেই বছর ১৯ লাখ শিশু জন্মেছিল, যার মাঝে আসলে ৮ লাখের বেশী ফেলানী ছিল। ৮ লাখ ফেলানী চোখে না পড়ার কারণ থাকতে পারে না, হয়তো চোখে পড়েছে, কিন্তু মগজে গিয়ে প্রসেসিং হয়নি ঠিক মতো; মনে হয়, বাংলার প্রসেসর ছিলো মাদারবোর্ডে।
২০০১ বা ২০০২ সালে ফেলানী খাতুনের স্কুলে যাবার কথা ছিল; তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম জিয়া; বেগম জিয়ার সময়ে সব ৫/৬ বছরের বাচ্ছা কেন স্কুলে যেতে পারেনি, তা হয়তো ব্যাখ্যা করার দরকার নেই; উনি নিজেই ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী, নিজের জন্মদিবস মুখস্হ রাখতে গিয়ে হার্ড-ড্রাইভ শেষ।
২০১১ সালে ফেলানীর ১০ শ্রেনীর পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিলো; মেয়েটি যে, ক্লাশে নেই, উহা কি শেখ হাসিনা জানতেন, আমাদের মন্ত্রী নাহিদ সাহেব জানতেন? আপনি বলবেন, উনারা কি করে জানবেন? এই জন্যই আপনি কোনদিন প্রাইম মিনিস্টার বা এডুকেশন মিনিস্টার হতে পারেননি। ২০১১ সালে, আমাদের মন্ত্রী নাহিদ সাহেবের কাছে ১টা ডাটাবেস ছিল, উহা যদি ঠিক মতো ব্যবহার করা হতো, উনি জানতে পারতেন যে, ৭/৮ লাখ ফেলানী স্কুলে আসছে না, উহারা কোথায় কি করছে!
মেজর জিয়ার ২ ছেলেকে পড়ানোর জন্য আমাদের প্রেসিডেন্ট জাতির পক্ষ থেকে বেগম জিয়াকে ২ টি বাড়ী, ১ টি গাড়ী, ১০ লাখ টাকা, চাকর বাকর সবই দিয়েছিলেন; শেখ হাসিনার ছেলেকে স্কুলে স্হান দিয়েছে ভারত সরকার; কিন্তু এই ২ মহিলার ১ জনও এই মেয়েটাকে স্কুলে নিতে পারলো না; কি রকম ২ হতভাগী আমাদের মাথার উপর সারাক্ষণ?
১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি, প্রতিটি শিশুকে ফ্রি পড়ানোর মত সম্পদ জাতির কাছে ছিলো ও আছে; যদি আপনার সন্দেহ থাকে, একটা সম্ভাবনা, আপনি শুধুমাত্র পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পরীক্ষা দিয়ে আসছেন।
বেচারী ১৫ বছর বয়সেই বিয়ে বসতে চেয়েছিলো; বিয়ে করার জন্য নয়া দিল্লী থেকে বাংলাদেশে আসছিলো; হয়তো হবু স্বামীর জন্য কোন উপহারও কিনেছিলো; সাথে ছিলো বাবা। সীমান্তের মানুষ একটু বেশী বেকুব হয়, বিএসএফ'কে টাকা দিয়ে সীমান্ত পার হওয়া যায়, ফেলানীর বাবা কম টাকা দিয়ে দালালদের সাহায্যে কাঁটাতারের উপর দিয়ে আসছিলো; শেষে মেয়েটাকে প্রাণ দিতে হলো!
১৯৯৬ সালে, ৭/৮ লাখ ফেলানী জন্মেছিল, ব্লগে ১ জনের ছবি এসেছে; বাকীগুলোর ছবি তোলা হলে জাতি লজ্জিত হবে, আমার ধারণা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:১৭