আমাদের পুর্বসুরীরা উর্দুর অনুপ্রবেশ ঠেকায়েছিলন ঠিক মতো, তাঁদেরকে ধন্যবাদ; তাঁদের সেইদিনের প্রতিবাদ বাংগালী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিলো, আমরা আলাদা জাতি, আমাদের নিজস্ব ভাবনা, নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব পথ আছে; স্বাধীন বাংলাদেশ তারই ফসল। ১৯৫২ সালে যাঁরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা কলেজে ছিলেন, তাঁরা ততকালীন সময়ের শিক্ষিত পরিবারের লোকজন ছিলেন, সেই সময়ে সাধারণ পরিবারের লোকজন অত উঁচুতে ছিলো না বললেই চলে।
'৫১ সালের আন্দোলনকারীরা ১৯৭১ সালের মাঝে দেশের প্রশাসনে বড় বড় পদে ছিলেন, এদের কেহই বড় কোন অবদানের জন্য তেমন পরিচয় লাভ করেননি। জামাতীরা দাবী করে যে, ভাষা আন্দোলনে জামাতের আমীর গোলাম আজমেরও অবদান ছিলো; মুক্তিযুদ্ধে উনার মিলিশিয়া বাহিনীই মানব ইতিহাসের এক বৃহত্তম গণহত্যা চালায়।
বায়ান্ন সালের আন্দোলনকারীরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মোটামুটি অংশ নেননি প্রত্যক্ষভাবে; উনাদের ভাষা আন্দোলনে উজ্বীবিত হয়ে, কমশিক্ষিত ইপিআর, বেংগল রেজিমেন্ট, আনসার, চাষীর ছেলে ও ছাত্ররা যুদ্ধ করে জাতিকে মুক্ত করেছেন।
বিভিন্ন সময়ে, 'ভাষা সৈনিকদের' বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছিল; উনাদের বক্তব্যে থাকতো মিলিছেের বর্ণনা, ১৯৫২ সালে পুলিশের গুলির দৃশ্যপট, ছাত্রদের ভুমিকা, সরকারের ভুমিকা, পাকিস্তানীদের অহমিকার কথা। ভাষা আন্দোলনের পর, জাতীর জন্য এই আন্দোলনকারীদের ভুমিকা নিয়ে কথা বলতে আমি শুনিনি; কারণ, আন্দোলনের পর, উনাদের যে আরো ভুমিকা রাখার কথা, সেটা উনারা অনুধাবণ করেননি। আজকাল, কোন মুক্তিযোদ্ধাকে কথা বলতে দিলে, উনি যুদ্ধের বর্ণনা দেন মাত্র, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে উনার অবদানের কথা বলতে পারেন না; কারণ, যুদ্ধের পর উনার অবদান নেই, অবদান রাখার জন্য সুযোগ উনাকে দেয়নি কোন সরকার। যে সামান্য পরিমাণ মুক্তিযোদ্ধা বড় বড় পদে ছিলেন, তাঁরা পার্টিকে মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে বড় মনে করতেন; তাদের কাজে কর্মে পার্টির পরিচয়, পদচিহ্ন রেখেছেন।
ভাষা আন্দোলনের বড় অবদান হতে পারতো, জাতির প্রতিটি সন্তান যেন বাংলায় পড়তে, লিখতে ও শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন; সেটি আন্দোলনের বেগে ঘটেনি; একজন অশিক্ষিত বাংগালী নিজের আন্চলিক ভাষায় কথা বলেন, তিনি আসল বাংলা বলতে পারেন না; তিনি কোনদিন কবি নজরুল বা রবী ঠাকুরের লেখা একটি লাইন পড়ার সুযোগ পাননি। আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, ৪৬ বছর পর, ৪৫% মানুষ 'বাংলাদেশ' শব্দটি বাংলায় লিখতে পারেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩