পাকিস্তান আমল থেকে, সীমান্ত পাহাদার বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের মাঝে ভালো সম্পর্ক ছিলো না; পাকিস্তান আমলে, বাহিনীর নাম ছিল ইপিআর(ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)। সৈনিকদের নিজস্ব অফিসার ছিলো না, পাকিস্তান মিলিটারী থেকে অফিসারেরা ডেপুটেশানে আসতো; কমান্ডিং'এ অন্য বাহিনী থেকে আসার ফলে, সৈনিক ও অফিসারদের মাঝে বিরাট একটা দুরত্ব আপনা থেকেই থাকতো; আবার ইপিআর বাহিনী মুল মিলিটারী বাহিনীর অংশ না হওয়ায়, অফিসারেরা হয়তো মানসিকভাবে ইপিআর'দের নীচু মানের বাহিনী হিসেবে গণ্য করতো। এই সমস্যা ব্যতিত আরো অনেক সমস্যা বিদ্যমান ছিলো।
একটা বাড়তি সমস্যা ছিলো, আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলে পর, পাকিস্তান মিলিটারীর অফিসারেরা মোটামুটি আচারে, ব্যবহারে ও স্বভাবে রাজ কুমারদের মতো ছিল; এটি শুধু ইপিআর'এর জন্য সমস্যা ছিলো না, পুরো জাতির জন্য সমস্যা ছিলো।
১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধে ইপিআর বিশাল ভুমিকা রাখেন, খুবই বিশাল ভুমিকা; যুদ্ধের ৯ মাসে অফিসারেরা ও ইপিআর সৈনিকেরা প্রথমবার যুদ্ধের কমরেডে পরিণত হন। যুদ্ধশেষে, তাজুদ্দিন সাহেব ও শেখ সাহেব বিরাট ভুল করেন; বিজয়ী বাহিনীর মিলিটারী অংশকে দেশের মিলিটারী বানান, ইপিআর বাহীির সদস্যরা আবার বর্ডারে ফেরত যায়; এখানেই শেখ সাহেব ও তাজুদ্দিন সাহেব নিজেদের পতনের বীজ বপন করেন। ৯ মাসের যুদ্ধ-ক্লান্ত জাতীয় বীরদের এই ক্ষুদ্র দায়িত্ব দেয়া ছিল ভয়ংকর নির্বুদ্ধিতার কাজ; এই বিজয়ী বাহিনীর বিশাল মনোভাবকে জাতি গঠণে ব্যবহার করার দরকার ছিলো; কমপক্ষে, বিজয়ী এই ভলনটিয়ার বাহিনীকে অবসরে যেতে দেয়ার দরকার ছিলো।
বাংলাদেশ সরকার, একশত ভাগ পাকিস্তানী আমলের মতো করে স্বাধীন দেশে আবারো বর্ডার বাহিনী চালু করেন; শুধু নাম বদলায়ে রাখা হলো বিডিয়ার; ফিরে এলো সেই পুরনো অফিসার-সৈনিক সমস্যা।
২০০০ সাল নাগাদ, মুক্তিযো্দ্ধা অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর সম্ভবত: বাহিনীতে থাকার কথা নয়; ২০০৯ সালে, বিডিআর বাহিনী ঠিক পাকিস্তানী ইপিআর বাহিনীর মতো; অফিসার ও সৈনিকদের মাঝে সমস্যা টাইম বোমার মতো বিস্ফোরণের জন্য অপেক্ষা করছিল; এই সমস্যা সমাধান করার দায়িত্ব কা'দের ছিলো, অফিসারদের, নাকি সৈনিকদের?
২০০৯ সালে, আমাদের মিলিটারীর কথা ভেবে দেখেন, তারা ২ বছর দেশ চালায়েছেন; সেই ২ বছরে দেশে যে বিশাল পরিবর্তন এসেছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিশাল অধ্যায়; এই অধ্যায়ের মাঝে বিডিআর'এর অফিসার-সৈনিক সমস্যা আরো বেড়েছে; অফিসারেরা সমস্যার ওজন বুঝতে সক্ষম হননি; কমপক্ষে, এই ভয়ানক সমস্যা থেকে উদ্ভুত কোন পরিস্হিতিকে মোকাবেলা করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেননি, এটা ভয়ংকর ধরণের সামরিক ভুল।
মিলিটারী ট্রেনিং'এর সবচেয়ে বড় ট্রেনিং হলো 'বেঁচে থাকার' ট্রেনিং; একজন সৈনিককে বুঝতে হয়, এই প্রফেশানে এলে, মৃত্যু তার প্রতিদিনের সাথী; দেশ রক্ষা করতে মারতেও হতে পারে, মরতেও হতে পারে।
আজকের বিজেপি'র মাঝে আবারো সেই খারাপ সম্পর্ক ফিরে আসার কথা, এবং উহা আছে!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১২