শেখ সাহেব যখন ৬ দফা দিয়েছিলেন, তখন বাংলার শতকরা ৮০ জন, অংকে ৬ সংখ্যাটি লিখতে জানতেন না, হাতের আংগুলে ৬ গুনতেন; তারা ৬ দফায় কি ছিলো ঠিক বুঝতো না, অনুমানে ধরে নিয়েছিলো, এটা নতুন জীবনের রূপরেখা; আসলে, ৬ দফা বাংলাকে আলাদা করার জন্য যথেস্ট ছিল মাত্র, এখানে নতুন জীবনের রূপরেখা আসলে ছিলো না। ৬ দফা পাকিস্তান ভাংতে পারে ভেবেই আইয়ুব খান, শেখ সাহেবকে ধরার সুযোগ খুঁজছিলো; আগরতলা মামলায় শেখ সাহেবকে জেলে নেয়া হলো; এতে, মানুষ ৬ দফা নিয়ে আরো বিশালভাবে উৎসাহী হয়ে গেলো, তারা শেখ সাহেবকে মাও ও লেনিনের মত উপরে নিয়ে গেলো; ১৯৬৬ সালে, চীন ও সোভিয়েত বিশ্বের কাছে বিস্ময় ছিলো; বাংগালীরাও ৬ দফা নিয়ে ঐ রকম বিস্ময়কর কিছু পাবার চেস্টা করছিলো; এখানে ছিলো সমস্যা, ৬ দফায় চীন বা রাশিয়ার মতো জীবনের রোডম্যাপ ছিলো না; থাকলে, পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও ৬ দফা নিয়ে লেগে যেতো, বালুচ, পাঠান সবাই ভালো জীবন চাচ্ছিলো; পশ্চিম পাকিস্তানের সবাই আদমজী, ইস্পাহানী, দাউদ, বাওয়ানী ছিলো না; পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ৬ দফাকে ভালোবাসেনি, ভয় পেতো; কারণ, সেখানে শুধু পুর্ব বাংলার কথা ছিলো।
মানুষের কাছে ৬ দফার যে অর্থ ছিল, সেটা হলো নতুন অর্থনীতি, সম্পদশালী, শিক্ষিত, নিজ মুদ্রাধারী সোনার বাংলা; শেখ সাহেবের কাছে ছিল আলাদা এক দেশ, যেখানে পাকিস্তানীরা থাকবে না; এখানে শেখ সাহেব ও মানুষের মাঝে বিরাট পার্থক্য ছিলো। লেনিনের রাশিয়া ও জারের রাশিয়া ছিলো আলাদা; জারের ছিল রাজতন্ত্র, লেনিনের সমাজতন্ত্র; চীনে চিয়াং কাইশেক ছিল পুরানো চীনের প্রবক্তা, মাও ছিল নতুন জীবন ব্যবস্হার প্রবক্তা; শেখ সাহেব ঐ রকম কেহ ছিলো না, উনার ভাবনা ছিলো আলাদা দেশ, নিজস্ব সংস্কৃতি; শুধু আইয়ুব খান আর পাকিস্তানীরা থাকবে না, শুধু আদমজী, দাউদরা থাকবে না; দাউদ ইস্পাহানীর জায়গায় মিজানুর রহমান চৌধুরী, গাজী গোলাম মোস্তফা, নুরে আলম সিদ্দিকীরা আসবে, বসুন্ধরা আসবে, এরা বাংলায় কথা বলবে, বাংলার সম্পদ বাংলায় থাকবে; কার কাছে থাকবে, সেটা কোন বিষয় নয়, ধনী দরিদ্র নিয়েই সমাজ!
শেখ সাহেব ১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে এক আলাদা দেশ পেয়েছিলেন, এটাই শেখ সাহেব চেয়েছিলেন; মানুষ অপেক্ষা করছিলো কখন সোনার বাংলার কথা হবে, কখন সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য ডাক আসবে; মানুষ বিপ্লোবোত্তর জীবনের রূপরেখার জন্য, সেই রূপরেখাকে কাজে পরিণত করার জন্য ছিলো অস্হির; কিন্ত শেখ সাহেবের জগতে নতুন কিছু ছিলো না, উনার মতে ৬ দফা বাংলাদেশ সৃস্টি করেছে, এখানেই ৬ দফার শেষ, এটাই গন্তব্য। শেখ সাহেব পাকিস্তান সরকারের অসম-শাসনের প্রতিবাদ করছিলেন, মানুষ নতুন জীবনের আশায় বিপ্লব করছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫