স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, কমপক্ষে ৬ কোটী মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন; সবাই একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, নতুন জীবন, সম্পদশালী জাতি, খেয়ে পরে সন্মানের সাথে বেঁচে থাকা; কেহ কি মরতে চেয়েছিলেন? কেহ কোনদিন মরতে চাহে না, যুদ্ধের মাঝেও প্রতিটি সৈনিক বিশ্বাস করে, সে বেঁচে থাকবে, এই কারণেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ প্রাণ হারালেন; এঁরা নিজের জন্য প্রাণ হারাননি, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ হারায়েছিলেন; এঁদের কি পরিমাণ ছেলেমেয়ে এতিম হয়েছিল, এসব এতিম ছেলেমেয়ের লালন, পালন, পড়ালেখা কার উপর অর্পিত হয়েছিল?
শহীদের সংখ্যা কত, এই নিয়ে কোটী কোটী বাক্য বিনিময় হয়েছে, কোটী মানুষ তর্ক করেছে; কিন্তু এই বাচ্ছাগুলো নিয়ে কেহ একদিনও মাথা ঘামায়নি; যে সমস্যার সমাধান দরকার ছিল জাতীয়ভাবে, সেটা কখনো মাথায়ও আসেনি, যেটা বাস্তবিক সমস্যা নয়, সেটা নিয়ে জাতি অনেক মগজ খরচ করেছে।
আপনারা যদি পারেন, কারো কাছে যদি থাকে, ১৯৭২ সালে সরকারের বড় কর্মকর্তা, বা প্রশাসনের কেহ কোন শহীদের বাচ্ছাকে কোলে তুলে নিয়ে, বাচ্ছাকে, বা বাচ্ছার মাকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন এই রকম ছবি থাকলে ব্লগে পোস্ট করবেন। এই রকম দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি; সরকার এদেরকে মানুষ করার জন্য কোন আইন পাশ করেনি।
যুদ্ধের পরদিন থেকে আজ অবধি, অনেকেই লেখেন, "যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে কিছু ছিলো না"; এই বাক্যটা যারা লিখেছিলেন, ও লিখেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তাদের সম্যক ধারণা নেই; বাংলাদেশ যুদ্ধে এত কম ক্ষতি হয়েছিল যে, স্বাধীনতার তুলনায় সেটা হিসেবের মধ্যেই পড়ার কথা নয়।
তখন আমরা বিরাট স্বপ্নে বিভোর থাকায়, বিশাল পরিমাণ মৃত্যু আমাদের মনের উপর কস্টের ছায়া ফেলতে পারেনি; আজকে, ৪৬ বছর পর, লেনদেন হিসেব করলে, সহজেই ধরা পড়বে যে, আমরা অসংখ্য প্রাণ হারিয়েছি; এবং যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের রেখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের প্রতি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করিনি।