কোন দেশ স্বাধীন হলে, কোন দেশে বিপ্লব ঘটলে, সম্পদের বড় অংশ হাত-বদল হয়; ১৬ই ডিসেম্বর একই ঘটনা ঘটেছে; পাকিস্তান সরকারের শিল্প ও স্হাবর-অস্হাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছে বাংলাদেশে সরকার। পাাকিস্তান সরকারের বাহিরেও, অনেক প্রাইভেট কোম্পানীর মালিক হয়েছিল বাংলাদেশে সরকার; এই প্রাইভেট কোম্পানীগুলো ২২ পরিবার নামে পরিচিত ছিল; আসলে, পরিবারের সংখ্যা ছিল অনেক বেশী; ২২ পরিবার ছিল খুবই বড় সম্পদের মালিক; যেমন, আদমজী জুট মিল, কর্ণফুলি পেপার মিল, চা বাগান, ব্যাংক, কটন মিলস, লন্চ, জাহাজ, ট্রাক, বাস, বাড়ীঘর, ছোট ব্যবসা ইত্যাদি।
পাকিস্তানী আমলে, ২২ পরিবার খুবই অল্প সময়ে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছিল; আইয়ুব খান পুরোপুরি ক্যাপিটেলিজমে বিশ্বাস করতো, সে বিশ্বাস করতো যে, শিল্পপতিদের টাকা ঋণ, খাসজমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা দিলে তারা চাকুরী সৃস্টি করতে পারবে। ১০ বছরে, ২২ পরিবার আলাদিনের চেরাগের জ্বীন থেকেও ভালো করেছিল। যেমন, কর্ণফুলি পেপার মিলে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাঁশ ব্যবহার করেছে; মানুষ শুধু বাঁশ কেটে আনার জন্য নামমাত্র মুজুরী পেতো; ১ দিনের বেতনে সর্বাধিক ২ সের চাউল কিনতে পারতো; মিলের মালিক, দাউদ পরিবার বাংলার মানুষর প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশের জন্য মানুষকে ১ পয়সাও দেয়নি।
জুটের বেলায়ও আদমজী, মকবুল, বাওয়ানীর ব্যবসা ছিল মনোপলি; পাট চাষীদের জীবনের মান ছিলো খুবই নীচু, পাট উৎপাদনে তারা পরিবারের মানুষদের শ্রম ব্যয় করতো, সেই অনুসারে পাটের দাম দেয়া হতো; কিন্তু বিশ্ব বাজার ছিল অনেক অনেক উপরে। মাত্র ১০ বছরে, আদমজী ৬০ হাজারের বেশী শ্রমিক নিযুক্ত করতে সক্ষম হয়।
প্রতিটি সেক্টরেই ছিলো ২২ পরিবারের মনোপলি; ব্যাংকের বেলায়ও তাই। ১৭ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সরকার পুর্ব পাকিস্তান ও পাকিস্তান সরকারের ফেলে যাওয়া দেশের মালিক; সাথে সাথে বিপুল পরিমাণে প্রাইভেট মালিকদের ফেলে যাওয়া সম্পদের মালিক হয়ে যায়। পুর্ব পাকিস্তানের সম্পদ বাংলাদেশ সরকারের ছিল; কিন্তু প্রাইভেট মালিকানার সম্পদগুলোর মালিকানা দখল করা, পুরোপুরি আইন-সন্মত ছিলো না; কিন্তু এই প্রাইভেট কোম্পানীগুলো পাকিস্তান সরকারের সাথে যুক্ত হয়ে, বাংগালীদের সব সুযোগ থেকে বন্চিত করে রেখেছিল; আবার অনেক ছোট ব্যবসার মালিক সরাসরি পাকী বাহিনীকে সাহায্য করেছে, অনেক যুদ্ধে যোগদান করে হত্যাকান্ড চালায়েছিল। সেই কারণে, তারা নিজেই তাদের প্রাইভেট সম্পত্তি চাইতে আসেনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ওদিকে, পাকিস্তান সরকার, ছোট ব্যবসায়ী থেকে মাঝারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপুরণ দিয়েছিল পাকিস্তানে, বড়দের ঋণ মওকুফ করে ছিল।
যাক, যতটুকু প্রাইভেট সম্পত্তি ফেলে গিয়েছিল ২২ পরিবার ও কয়েক হাজার ছোট ব্যবসায়ী, সেই সব সম্পদের কি হলো? শেখ সাহেবের ভাষায়, সেগুলোকে "জাতীয়-করণ করা" হয়েছিল!
এই সম্পদগুলো খুবই অল্প কয়েকজন লোক কৌশলে দখল করে নিয়েছে; শেখ সাহেব এই সম্পদগুলোকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করার কোন আইন করে যাননি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮