শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন যে, জাতিকে তিনি ভালোবাসেন, দরকার হলে জাতির জন্য প্রাণ দেবেন, তবুও জাতির কোন ক্ষতি বা অনিষ্ট হতে দেবেন না। কিন্তু উনার ৪১ বছরের (১৯৭৫ -১৯১৭) রাজনীতি সেটা পুরোপুরি সাপোর্টও করছে না; যেমন, তিনি ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করেননি; তিনি ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকায়, মানুষের একটা ধারণা হয়ে গেছে যে, দল উনার বাবার ছিল, এখন উনার; মানুষের এই ভুল ধারণা জাতির বিকাশের জন্য বিশাল অন্তরায়; আসলে, দল থাকে মানুষের, দলের সদস্যদের, এবং সদস্যদের নিযুক্ত কর্মকর্তারা দল চালান। এই শুরুতে গলদ থাকায়, তার প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে; যেখানে দলের প্রতি উনার দায়িত্ব থাকার কথা, সেখানে দলের লোকদের প্রত্যেকেরই উনার প্রতি অন্ধ আনুগত্য থাকতে হচ্ছে; ব্যক্তির আনুগত্য নিশ্চয় রাজনীতির অংশ হতে পারে না।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন বেশ রহস্যময় ও চ্যালেন্জিং ছিল বরাবরই; উনি অতি সহজ কোন ব্যক্তিত্ব নন; উনার বাবা উনাকে রাজনীতিতে আনতে চাননি; ঐতিহাসিক কারণে উনাকে আসতে হয়েছে; সেই আসাটা ছিল খুবই চ্যালেন্জিং। বাবার মৃত্যুর মহুর্তে তিনি ইউরোপে ছিলেন; সেদিনই তিনি জানতেন যে, উনাকে অনেক বাধা অতিক্রম করে, পরিবার নিশ্চিন্নকারীদের বিচার করতে হবে; বাবা যেসব ভুল করেছেন, সে ভুলগুলো করা যাবে না।
তাঁকে আওয়ামী লীগের অনেকেই রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে চেয়েছিলেন, দেশের ভেতরের ও বাহিরের কিছু শক্তি উনাকে রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে চেয়েছিলেন; তিনি সেইসব বাধা একে একে অতিক্রম করেছেন; তিনি আওয়ামী লীগের লাগাম হাতে নিয়েছেন প্রথম; তারপর, আওয়ামী লীগের যারা উনাকে চাননি, তাদের সাথে কথা বলেছেন, তাদের সবাইকে আও্য়ামী লীগে রেখেছেন; কয়েকজন নিজের থেকে সরে গেছেন।
তিনি বাবা ও পরিবারের হত্যাকারীদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের সন্মুখীন করেছেন। যারা বে-আইনীভাবে ক্ষমতা নিয়ে গিয়েছিল তাদেরকে কন্ট্রোলে আনতে উনার দরকারের চেয়ে অনেক বেশী সময় লেগেছে, কিন্তু এনেছেন। আমি উনার গুণগান গাচ্ছি না, আমি যা দেখেছি; আপনারা যা দেখছেন, সেটাই বলার চেস্টা করছি।
তিনি একটা ব্যাপারে পিছিয়ে আছেন, নাগরিকদের মন জয় করার চেস্টা করেননি কোনদিন; এই কাজটা উনার জন্য সহজ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তিনি এখানে বেশ পিছনে পড়ে আছেন। এদেশের মানুষ বৃটিশ কলোনী থেকে বের হওয়ার পর থেকেই একটি সুখী জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছেন, মানুষ সেজন্য মুল্যও দিয়েছেন, সেই চাওয়াতে উনার নামও আছে; মানুষকে ৪৬ বছরে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি; সেই সুযোগ দেয়ার মতো সম্পদ ও প্রাকৃতিক অবস্হা ১৯৭২ সাল থেকেই বিরাজ করে আসছে।
দেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ঘটছে, যেগুলো দেশের নাগরিকদের জন্য বেশ চিন্তার বিষয়, মানুষের আধুনিক রাজনৈতিক ভাবনা ও জীবনযাত্রার অগ্রগতিকে থামানোর প্রচেস্টা করা হচ্ছে; এখানে অনেকে শেখ হাসিনার সরকারের সঠিক অবস্হান অনুমান করতে পারছেন না; উনি জাতির জন্য ভালো না করতে পারলেও, উনার সরকারের সময়, উনার কোন ভুলের জন্য জাতির আধুনিক ভাবনা যেন বন্দী না হয়, সেটাই মানুষ চাইবে কমপক্ষে। উনার সাম্প্রতিক কিছু কথা মানুষের কাছে রহস্য হয়ে রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:০৩