১৯৭১ সালের ২৭মার্চের আগে, পাকিস্তান সেনা-বাহিনীর বেংগল রেজিমেন্টে যে, মেজর জিয়া নামে একজন অফিসার আছে তা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভবপর ছিলো না, জানার প্রয়োজনও ছিলো না; ২৭শে মার্চ কালুরঘাট রেডিও থেকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পড়ার পর, জাতির সামান্য অংশের সাথে পরিচিত হন জিয়া; এরপর, তিনি আবার মানুষের দৃষ্টি-সীমার বাহিরে চলে যান, তিনি তাঁর সৈনিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফেনীর মাঝখানে সন্মুখ-যুদ্ধে অংশ নেন; তাঁর অধীনের ফোর্সটিকে উনার নামেই নামকরণ করা হয়, "যেড-ফোর্স"; "যেড-ফোর্সে" মুলত ততকালীন বর্ডারফোর্স ইপিআর এবং বেংগল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা ছিলেন, সাথে ছিলেন ১ প্লাটুন স্টুডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা। তাজুদ্দিন সাহেবের সরকার পুরো দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন; মেজর জিয়ার এলাকা অফিসিয়েলী ১ নং সেক্টর(ফেনী থেকে কক্সবাজার) নাম পায়; তিনি সেটার কমান্ডার হন; সেক্টরের হেড কোয়ার্টার হয় ত্রিপুরার হরিণায়। জুনের কোন এক সময়ে, তাঁকে কমান্ডার পদ থেকে সরায়ে মেজর রফিককে কমান্ডার করা হয়। জিয়া আনুমানিক ৩ শত জনশক্তি নিয়ে ১নং সেক্টরের অধীনে সন্মুখ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন; এই সময় তিনি ত্রিপুরার পংবাড়ীতে একটি 'হাইড-আউট' স্হাপন করেন। উনার ফোর্সটি তখনো 'যেড ফোর্স' হিসেবে পরিচিত ছিলো। উনাকে নতুন করে ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার করা হয়, তিনি সেখানে যেতে চাননি; পরে, যথাসম্ভব আগস্ট মাসের শেষের দিকে ওখানে যেতে বাধ্য হন; এই ঘটনা তাঁর জন্য পীড়াদায়ক ছিলো, হয়তো।
১৯৭২ সালে, শেখ সাহেবের শুরুটা ছিল খুবই গোলযোগপুর্ণ, যা মানুষকে অল্প সময়ে হতাশ করে দেয়; বিপুল পরিমান মানুষের মৃত্যু, ৯ মাসের ভয়ংকর যুদ্ধ, মানুষের ঐক্য, অবদান, স্বপ্ন ও ত্যাগের তুলনায় শেখ সাহেবের শুরুটা কিছুই ছিলো না; মনে হয়, ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা শেখ সাহেব এর বেশী জানতেন না। মানুষের আশার সাথে উনার শুরুটার কোন মিলই ছিলো না; তিনি নিজের ৬ দফার অর্থনৈতিক মডেল দাঁড়া করাতে পারলে, অবস্হা এত হতাশজনক হতো না। স্বাধীনতায় ভারত ও রাশিয়ার সাহায্য থাকায় ক্যাপিটেলিস্ট ব্লক বাংলাদেশকে নজরে রেখেছিল; ১৯৭৫ সালে, শেখ সাহেব যখন "বাকশাল" নামে প্লাটফরম গঠন করলেন, তখন ক্যাপিটেলিস্ট ব্লক ধরে নিয়েছিল যে, শেখ সোভিয়েত ব্লকে নাম লিখাচ্ছে!
ক্যাপিটেলিস্ট ব্লক শেখ সাহেবকে সরানোর ব্যবস্হা করেছিল বাংলাদেশ মিলিটারীর সাহায্যে; তারা সেটা সুন্দরভাবে সফল করেছে; জিয়া তখন বাংলাদেশে মিলিটারীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড; উনাকে সিআইএ নির্বাচন করেছিল, নাকি উনি নিজেই সিআইএ'এর সাথে যোগাযোগ করে এতে জড়ায়েছিল, সেটা অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
যাক, যেভাবেই উনি ক্ষমতায় গিয়ে থাকেন, তাঁর নতুন দায়িত্ব ছিল এই সীমিত সম্পদের দেশে ক্যাপিটেলিজম গড়ে তোলার। শেখ সাহেবকে হত্যা করা যত সহজ ছিলো, মোটামুটি ৮ কোটী প্রায় অদক্ষ মানুষ নিয়ে ক্যাপিটেলিস্ট বাংলাদেশ গড়ার মগজ উনার ছিলো না; উনি নিজ বিদ্যায় যতটুকু পেরেছেন, সেটা করে গেছেন; আজকে সেই বৃক্ষ ফল দিচ্ছে!
মানুষ যদি ১৯৭৫ সালে উনাকে সাপোর্ট না করতো, মিলিটারীকে না মানতেন, দেশ আজকের এই অবস্হানে আসার সুযোগ পেতো না; শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর, মানুষ যদি জেনারেল জিয়াকে প্রত্যাখান করতেন, দেশ আগের পথেই থাকতো, গন্তব্য হতো আলাদা, দেশ এর থেকে ভালো থাকতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:১৪