somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামান্য স্মৃতি

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাখীর সাথে আমি প্রথম শ্রেণী থেকে পড়েছি; গ্রামের সাধারণ ঘরের অসাধারণ প্রানবন্ত, হাসিখুশী মেয়ে; পড়ালেখার চেয়ে খেলাধুলা বেশী ভালোবাসতো; একটু ইমোশানেল, যা মনে আসে, সেটা করবেই। দ্বিতীয় শ্রেণীতে সে ছেলেদের সাথে ফুলবল খেলতে চেস্টা করলো, শিক্ষকেরা বাধা দিলেন। তৃতীয় শ্রেণীতে, পাখী মেয়েদের গ্রুপে সাতারে প্রথম হয়, আমি ছেলেদের গ্রুপে প্রথম; পানি থেকে উঠে, সে আমাকে বললো,
-আমি তোর থেকে দ্রুত সাতার কেটেছি!
-ভালো; তুই মাপলি কি করে?
-মাপামাপির দরকার হবে না, আমি তোর সাথে প্রতিযোগীয় যাবো, প্রমাণ করবো।

পাখী প্রতিদিন আমাকে এই প্রতিযোগীতার কথা মনে করায়ে দিতো; চতুর্থ শ্রেণীতে আমাদের ক্লাশমেটদের উপস্হিতিতে আমরা দু'জন পুকুরে নামলাম; পুকুরটা বেশ বড় ছিলো; পুকুরের মাঝ অবধি পাখী আমাকে চাপেই রাখলো; তারপর সে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে উঠলো; আমি ঠিক করলাম, সে জয়ী হোক; আনুমানিক ২ গজ সামনে থেকে পাখী জয়ী হলো; আমার ছেলে বন্ধুরা হতাশ হলো; কিন্তু ক্লাশের সব মেয়ে ও পাখী সীমাতীত আনন্দিত হয়েছিল।

অষ্টম শ্রেণী অবধি, আমি ছেলেদের মাঝে প্রথম হয়েছি, আর পাখী মেয়েদের মাঝে; আমরা অনেক পুকুরে একত্রে সাতার কেটেছি, প্রতিযোগীতায় যাইনি। নবম শ্রেণীতে উঠার পর, সমস্যা দেখা দিলো: স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় নবম ও দশম শ্রেণীর মেয়েদের জন্য সাতার নেই; সাতার না থাকায় পাখীর মন খারাপ হলো; বার্ষিক ক্রীড়ার আগেরদিন, সব মেয়েরা পাখীর হয়ে, অংকের স্যারের কাছে প্রস্তাব করলো যে, পাখীকে ছেলেদের সাথে সাতারের সুযোগ দেয়া হোক; স্যার খেলাধুলার দায়িত্বে ছিলেন; স্যার মেয়েদের প্রস্তাব মেনে নিলেন। ক্লাশে মেয়েদের লীডার ছিল বীণা; সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এক রাত আছে তোর হাতে, প্র‌েকটিস করগে!
-পাখী উড়েও আমাকে ধরতে পারবে না!
পাখী বললো, "চতুর্থ শ্রেণীর কথা ভুলে গেছিস?"
-ভুলিনি! আমি হাসলাম।

আমি এবারও পাখীকে ছেড়ে দিতে পারতাম; কিন্ত সিনিয়রদের সাতারে যেজন প্রথম হয়, সেই ইন্টার-স্কুল সাতারে যায়; পাখী অন্য স্কুলের ছেলেদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকবে না, আমাকেই থাকতে হবে।

সাতারের সময়, পাখী আমার পাশেই অবস্হান নিলো; পুকুর ছিলো খুবই বড়; পুকুরের মাঝ অবধি আমি সবার সাথে তাল মিলায়ে সাতার কাটলাম; এরপরে আমি গতি বাড়ালাম; একটু পরে, আমার পা লাগলো আলতোভাবে পাখীর গায়ে; মনে হয়, পাখী তার লাইন থেকে সরে এসেছিল। পাখী দ্বিতীয় হলো; পানি থেকে উঠে আমাকে বললো,
-তুই ছোট লোক হয়ে গেছিস, সামান্য সাতারে প্রথম হওয়ার জন্য আমাকে লাথি মেরেছিস।

আমি কিছু বলার সুযোগও পেলাম না, সে রেগে মেগে চলে গেলো; আমাদের ক্লাশের মেয়েরা তো আছে, এমন কি দশম শ্রেণীর সিনিয়র মেয়েরাও আমাকে ছোটলোক বলে গালি দিলো; বীণা গিয়ে স্যারের কাছে নালিশ করলো।যাক, স্যার কানে নেয়নি। সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী হলো; পাখীকে ২য় পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো খুবই দামী গ্লাসসেট। আমরা মিস্টি ও চা খেয়ে করিডোরে আড্ডা দিচ্ছি, একটু পরে নাটক শুরু হবে; এমন সময় আমাদের ক্লাশের সব মেয়ে ও পাখী আমার কাছে এলো; আমি ভাবছি, পাখী বকা দিবে; সে কিছু বললো না, আমার সামনে গ্লাস সেটটিকে পাশের ঝোপের মাঝে ফেলে দিলো। মেয়েদের লীডার বীণা আমাকে লক্ষ্য করে বললো,
-তুই আসলে ছোট লোক, তুই পাখীকে লাথি মেরেছিস!

আমি ব্যাখ্যা করতে গেলাম, পাখী কিছু না শুনে চলে গেলো। পরদিন ক্লাশে টিফিনের সময় বীণা কথাটি তুললো আবার, আমাকে বললো,
-তুই পাখীকে পেছনে ফেলতে লাথি মেরেছিস, এখন মাফ চেয়ে নেয়, ছোটলোক।
-ঠিক আছে, মাফ চাইলাম; কিন্তু আমি পাখীকে লাথি মারিনি; সে লাইন থেকে সরে আমার কাছে চলে এসেছিল, মনে হয়। সর্বোপরি, সে আমার সাথে পারার কথা নয়!

পাখী বললো, তুই শর্ট পরে সাতার কেটেছিস, আমাকে সেলোায়ার কামিজ পরে নামতে হয়েছে, ঠিক আছে?
-তুই ল্যাংটা হয়ে নামলেও আমার সাথে পারবি না!

ক্লাশের সবাই হৈচৈ করে উঠলো; কথাটা তাদের পছন্দ হয়েছে; আমি আরেকটু তেল ঢালার কথা ভাবছি; এমন সময় পাখী শক্ত বই দিয়ে আমার নাকের উপর একটা ঘা বসায়ে দিলো! আমার মাথা ঘুরায়ে গেলো, আধা মিনিট সবাই চুপ; ছেলেরা করিডোরে চলে গেলো; মেয়েরাও হতবাক। পাখী বললো,
-তুই ব্যথা পেয়েছিস?
-না।
সে বাইরে গিয়ে গ্লাসে করে পানি নিয়ে আসলো; রুমাল দিয়ে মুখ মুছে দিলো; বললো,
-মন খারাপ করেছিস?
-না।
-রাগ করিস না; তুই তো আমাকে জানিস!

( ****** আসল ঘটনাকে সামান্য বদলানো হয়েছে )


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:২৪
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×