somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা চিন্তিত হবেন, তিনি ঘুমাবেন না।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এসএসসি পরীক্ষা শেষ, বেশ হালকা লাগছে; ভাবছি, দু'চারদিন অলসভাবেই কাটিয়ে দেবো। বাজার বার, লোকজন বাজারে চলে গেছেন, সুর্য হেলিয়ে পড়েছে, আমি কাছারীতে শুয়ে শুয়ে রূপকথার একটা বই পড়ছিলাম। হঠাৎ কাছারীর পাশ থেকে, অনেকটা মেয়েলী গলায় কে একজন অনেকটা সুর করে বলছে,
-মাসী, পিষিরা, কথা শোন, বাড়ীর লোকজনের অমংগল হবে, বাড়ীতে ভুজংগ আছে। আমি মা মনসাকে বলে ভুজংগ তাড়িয়ে দেবো।
শুনতে ভালোই লাগলো; সে আবারো একই কথা বললো। আমি কাছারী থেকে বের হয়ে এলাম; ধুতিপরা একটা কিশোর, খালি গা, মাথায় টিকি, গায়ে পৈতা; ঘাঁড় থেকে কাপড়ের ব্যাগের মতো কি একটা ঝুলছে। আমাকে দেখে বললো,
-আদাব কাকা।
-আদাব, তুমি কোন গ্রামের ছেলে?
-কাকা, আমি দাস গ্রামের ছেলে, নাম নরেন্দ্র চক্রবর্তী, বারীন্দ্র চক্রবর্তীর ছেলে।
-দাস গ্রাম? সে তো অনেক দুর!
-হ্যাঁ, রমেশ কাকার কাছে এসেছিলাম; উনি বাবার বন্ধু, বাবা পাঠায়েছিলেন, বাবার অসুখ, ঘরে কিছু নেই। রমেশ কাকা পরিবারসহ শহরে গেছেন, দেখা হয়নি।

ইতিমধ্যে, আমার মা, চাচীরা এসে যোগ দিয়েছেন। নরেন্দ্র তার মুখস্হ করা সেই বাক্যটি আবার বললো। আমি প্রশ্ন করলাম,
-ভুজংগ কি জিনিষ?
-সর্প
-বাড়ীতে তা'হলে সর্প আছে?
-আছে কাকা; গৃহস্তের বাড়ীতে শস্য থাকে, শস্য থাকলে ইঁদুর থাকে, ইঁদুর থাকলে সর্প থাকে।

আমার মা নরেন্দ্রকে বললেন, "বেলা তো পড়ে গেছে বাবু, তোমাকে তো বাড়ী ফিরতে হবে?"
-হ্যাঁ পিষিমা, ফিরতে হবে। পিষিমা, আমাকে খাবারের জল দেন।

আমি বললাম, "তুমি দুপুরে খেয়েছ?"
-না কাকা, খাওয়া দাওয়া হয়নি!
-তুমি ঠাকুরের ছেলে, মুসলমান বাড়ীতে খাওয়া যাবে?
-খাওয়া কি ঠিক হবে?
-মনে হয়, ঠিক হবে!

আমার মায়ের পছন্দ হয়নি; তিনি বললেন, "ঠাকুরদের ছেলেকে খাওয়ানো কি ঠিক হবে, ওর মা বাবা যদি মন খারাপ করে?"
-মা, সে এখনো বাচ্চা মানুষ, না খেয়ে আছে, খাওয়া দরকার।
মা গিয়ে খাবার নিয়ে এলেন: ভাত, মাছ, ডাল। নরেন্দ্র হাতমুখ ধুয়ে, কাছারীতে আমার টেবিলে বসে খেলো। মা ও চাচীরা চাল, ডাল ও কয়েকটা পাকা কলা নিয়ে আসলেন।

আমি বললাম, "নরেন্দ্র, ভুজংগের কি হবে?"
-এখন মা মনসার মন্ত্র পড়ে দেবো, সব সর্পগুলো বাড়ী ছেড়ে চলে যাবে।
আমি হাসলাম; মা ইশারা দিলেন চুপ করতে। নরেন্দ্র চোখ বন্ধ করে সংস্কৃতে কি একটা মন্ত্র পড়লো, তারপর বললো,
-মা মনসা তাঁর সর্পদের এ বাড়ী থেকে নিয়ে যাবেন।

মা বললেন, "বেলা বেশী পড়ে গেছে, নরেন্দ্র তুমি রওয়ানা হয়ে যাও।"
নরেন্দ্র চাল, ডাল, কলা ব্যাগে নিয়ে প্রস্তুত হলো।
-আদাব কাকা, মাসী, পিষিরা।
আমি বললাম, "পথে তো রাত হয়ে যাবে, নরেন্দ্র !"
-মা মনসা থাকবেন সাথে।
মা বললেন, "এখানে রাতে থেকে যাও, কাল ভোরে যেও।"
-না পিষিমা, মা চিন্তিত হবেন, তিনি ঘুমাবেন না

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২১ রাত ১:০০
৫৬টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×