গত ২৫ শে আগস্ট, আরাকানে ARSA ( আরাকান রোহিংগা সালভেশান আর্মি) গেরিলারা অপারেশান চালানোর ফলে, গত সপ্তাহ থেকে রোহিংগা রিফিউজী বাংলাদেশে আসছে; বার্মা সরকার এই গেরিলাদের ইতিমধ্যে জংগী হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে। ARSA'এর পুরাতন নাম হচ্ছে, হারাকাহ আল ইয়াকিন; এদের অধীনে ৫০০ মত গেরিলা আছে বলে মনে হচ্ছে; এবং এরা গত ৬ মাসে রোহিংগা পরিবারগুলোর থেকে নতুন সদস্য নেয়ার চেস্টা করেছে; নেতার নাম আতা উল্লাহ, তিনি কারাচীতে বড় হয়েছিলেন; মনে হয়, পাকিস্তান ও কিছু আরবীদের সমর্থন আছে উনার পেছনে। এই গেরিলা আক্রমণে রোহিংগারা বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩০০০ ঘরবাড়ী পোড়ায়ে দিয়েছে, ৫ শতের বেশী মানুষ প্রাণ হারায়েছে বার্মার সেনাবাহিনীর হাতে।
এই গেরিলা আক্রমণ সম্পর্কে বাংলাদেশের নতুন জেনারেশনের অনেকেই বেশ উৎসাহ দেখায়েছেন; ব্লগেই কয়েকজন লিখেছেন, "ইদুরের মত না মরে, সিংহের মত মরাই শ্রেয়, মরার সময় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মরাই ভালো"; অতীতের কোন গেরিলা যুদ্ধ সিংহের মতো মরার জন্য হয়নি; গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে কোন এলাকাকে মুক্ত করার জন্য; বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানী মুক্ত করার জন্য।
১৯৭১ সালের বাংগালী মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে, প্রায় ১ লাখ ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা; তাঁদের ৭ হাজারকে দেশের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে; আজ হয়তো ৪৫ হাজার জীবিত আছেন। তাঁদের যুদ্ধ, তাদের জীবন সম্পর্কে নতুন জেনারেশন খুব একটা জানেনি; কারণ, তাঁদের নিয়ে বিশদভাবে কিছু লেখা হয়নি; বেশী লেখা হয়েছে বরং অযোদ্ধাদের নিয়ে।
গেরিলাযুদ্ধের প্রথম শর্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষের সমর্থন: গেরিলাদের হাতে খুবই হালকা অস্ত্র থাকে(যাতে শত্রু দেখতে না পায়), অপারেশনের পর তাদেরকে পালিয়ে যেতে হয়; তাদের থাকা, খাবার, এবং পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্যও মানুষের সমর্থন দরকার। তাদেরকে কঠিন মিলিটারী নিয়ম মেনে চলতে হয়; কারণ, তারা সংখ্যায় খুবই কম হয়েও শত্রু এলাকায় অপারেশন করতে হয়; এবং তাদের বিপক্ষ সব সময় হয়, কোন দেশের মিলিটারী। গেরিলাদের পক্ষে বিশাল প্রচারণার দরকার হয়।
১৯৭১ সালে, প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের সাপোর্ট থাকা শর্তেও, পাকী বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে আমার ৫ বন্ধু প্রাণ দিয়েছেন। শত্রুর দখল-করা এলাকায় যুদ্ধ করতে হয় বলে, গেরিলাদের বহু রকমের সমস্যার সমাধান করতে হয় পরিস্হিতির উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, সাড়ে ৭ কোটীর মাঝে ১ লাখ গেরিলা কিন্তু যথেস্ট ছিলো না, আরো গেরিলার দরকার ছিলো।
বর্তমানে আরাকানে মাত্র ৮ লাখ রোহিংগা আছে, এবং তারা খুবই সীমিত এলাকায় অনেকটা রিফিউজী ক্যাম্পের মত গাদাগাদি করে আছেন; এখানে পালানোর যায়গা নেই; আবার সাধারণ মগেরা রোহিংগাদের জন্য মিলিটারী থেকেও ভয়ানক, এবং এদের হাতে অস্ত্র দেবে বার্মা। স্হান, জনসংখ্যা ও জন সমর্থনের দিক দিয়ে আরাকান রোহিংগা গেরিলাদের জন্য অনুকুলে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৬