বর্তমানে বার্মার সরকারে আং সান সুচির (জন্ম ১৯শে জন, ১৯৪৫) রাস্ট্রীয় পদ হচ্ছে, "ফার্স্ট কাউনসেলার অফ মায়ানমার"; মনে হয়, সরকারে বেশ বড় ধরণের পোস্ট; তা'ছাড়া তিনি বিরোধীদল প্রধান, এবং নিজ রাজনৈতিক দল, ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসীর সভাপতি।
সুচির বাবা, আং সান বৃটিশ মিলিটারীতে বড় পদে ছিলেন, এবং ১৯৪৭ সালে বার্মার স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেন; এবং সেই বছর মিলিটারীর ষড়যন্ত্রে নিহত হন। সুচির মা, খিনচি ১৯৬০ সালে ভারত ও নেপালের রাস্ট্রদুত নিযুক্ত হন; সুচি ১৯৬৪ সালে দিল্লীতে পলিটিক্যাল সায়েন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে সুচি অক্সফোর্ড থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইকোনোমি ও ফিলোসফিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি পান। পরের বছর তিনি পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন অক্সফোর্ড থেকে। এরপর, তিনি নিউইয়র্ক আসেন ও ৩ বছর জাতিসংঘে ইকোনোমিস্ট হিসেবে চাকুরী করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বৃটিশ নাগরিক মাইকেল এরিসকে বিয়ে করেন; বিয়ের পর লন্ডন চলে যান।
১৯৭৭ সালের মাঝে সুচির ২ ছেলের জন্ম হয়; ১৯৮৫-১৯৮৭ সালগুলোতে তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করেন, এমফিল ডিগ্রি নেন। এরপর তিনি ভারতের সিমলা ইউনিভার্সিটিতে ফেলো হিসেবে যোগদান করেন, একই সাথে বার্মা সরকারের হয়ে ডিপ্লমেটিক ধরণের কাজকর্ম করেন।
১৯৮৮ সালে সুচি বার্মায় ফিরে আসেন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগদান করেন; ১৯৬২ সাল থেকে মিলিটারী বার্মার ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল।১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে মিলিটারী সরকার সুচি'কে গৃবন্দী করে। গৃহবন্দী অবস্হায় ১৯৯১ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
১৯৯৫ সাল অবধি সুচির স্বামী বার্মা এসেছিল, এরপর তাকে আর বার্মার ভিসা দেয়া হয়নি; ১৯৯৭ সালে, এরিসের প্রষ্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে, ১৯৯৯ সালে এরিসের মৃত্যু হয়; ছেলেরা লন্ডনে। সুচির স্বামীকে দেখার জন্য মিলিটারী তাকে লন্ডন যাবার সুযোগ দেয়, কিন্তু সুচি যায়নি ভয়ে, তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে, তাকে আর ফিরে আসতে দেবে না মিলিটারী; তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সাল সময়ের মাঝে ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলেন।
১৯৯০ সালে সুচির গৃবন্দী অবস্হায় বার্মায় ভোট হয়, উনাকে ভোট দাঁড়াতে দেয়া হয়নি; দল শতকরা ৬০ ভাগ পদ পেয়ে জয়ী হয়; কিন্ত মিলিটারী ভোটকে নাকচ করে দেয়। দেশে বিদেশে এ নিয়ে তুমুল আন্দোলন হয়; বাংলাদেশে সুচির পক্ষে বড় বড় মিছিল হয়, বার্মার এমবেসী ঘেরাও হয়।
আন্তর্জাতিক ও জনতার চাপে ২০১০ সালের নভেম্বরে সুচিকে গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেয় মিলিটারী। ২০১২ সালে, পার্লামেন্টের এক শুন্যপদে ভোট করে সুচি জিতে যান। ২০১২ সালে রোহিংগা হত্যা ও তাদের অধিকারে সুচির অবস্হান জানতে চাইলে সুচি রোহিংগাদের পক্ষে কথা বলেনি।
২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট ভোটে দাঁড়াতে চান সুচি, কিন্তু বিদেশী বিয়ে করাতে ও সন্তানদের বিদেশী নাগরিকত্ব থাকায় তিনি বাদ পড়েন। ২০১৫ সালে সুচির দল বার্মার ২ পরিষদেই জয়ী হয়; কিন্তু তাকে একই কারণে প্রেসিডেন্ট হতে দেয়নি, মিলিটারীদের থেকে প্রেসিডেন্ট হয়, সুচির জন্য নতুন পদের সৃস্টি করা হয়, "ফার্স্ট কাউনসেলার অফ মায়ানমার"; তিনি এখন সেই পদে আছেন। ২০১৫ সালে, সুচির বিজয়ের পর, রোহিংগারা আশা করেছিল যে, তাদের নাগরিক অধিকার তারা পাবেন; তা ঘটেনি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১৯