বিকাল ৫টার দিকে ঘরে ফিরলাম, চা টা খাওয়ার দরকার; দেখি, স্ত্রী বার্থরুম পরিস্কার করছে; এখানে আমার একটু দুর্বলতা আছে, কাজটা ঘুরেফিরে ওর ভাগে পড়ে যায়! আমি যে ফিরছি সে টের পায়নি, টের পেলে অসুবিধা নেই, কাজের সময় দেখা হলে শুধু একবার বলবে, "বার্থরুমটা তুমি কখনো পরিস্কার করলে না"। এ'টুকু এড়াতে আমি তাই চুপ করে পাকঘরে ঢুকে গেলাম। চুলার উপর পাক-করা দুধ-সেমাই; মনে হয়, কয়েক মিনিট আগে করেছে; সেমাই সে খায় না, এটা আমার আইটেম; অবশ্য আজকে পরিমাণটা বেশ বেশী; ভালো হলো, ব্লগে বেশীক্ষণ বসা যাবে। তাকে খুশী করার জন্য কম তাপে দুধের চা বসালাম ওর জন্য, বেরিয়ে যেন চা দেখতে পায়, আমি লাল চা খাবো।
সেমাইর পাতিলটা নিয়েই বসলাম, প্রামানিকের লেখা কি এক অন্ধের ছড়া দিয়ে শুরু করলাম, এরপর জাহিদ অনিকের প্রভাত, নাকি রাত কবিতা পড়লাম, আলোচিত ব্লগে গেলাম; সেমাই শেষ, পড়াও শেষ; পাতিলটাকে চুলোর উপর রেখে নিজের ব্লগে গিয়ে ২/৩টা মন্তব্য পড়ে শেষ করতেই স্ত্রী বের হয়ে এলো; বললাম,
-তোমার চা রেডী!
স্ত্রী বললো, "উপরের ভাবী উনার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসছেন এখুনি, উনাদের জানালা ঠিক করার লোক আসছে; আমাদের এখানে কিছুক্ষণ বসবেন; আমি সেমাই তৈরি করেছি উনাদের জন্য, তুমি কিছু সল্টেড বিস্কুট ও ফল নিয়ে আস, ঘরে মিস্টি আছে! আমি শোবার রুমটাকে ঠিক করি।"
আমার মাথার উপর বাজ পড়লো; উপরের ভাবী আমার স্ত্রীর তৈরি সেমাই খেতে পছন্দ করেন; মনে হয়, টেলিফোনে আমার স্ত্রীকে বলেছে; ম্যান, কি বিপদ! আমি সবটা খেয়ে ফেলেছি বলতে আমার ভালো লাগলো না; আমি কি করে ৩/৪ জনের সেমাই শেষ করলাম! দোকান থেকে সল্টেড পল্টেড কিনলাম, সাথে পেস্ট্রি মেস্ট্রি, যদি সেমাইর অপবাদ থেকে বাঁচা যায়। ছোট একটা ষড়যন্ত্র করে অন্য ধরণের ২ প্যাকেট সেমাইও কিনলাম; বাতাসের আগে ঘরে ফিরলাম; দেখি মেহমানেরা এসে গেছেন। স্ত্রীকে বললাম,
-তুমি উনাদের সাথে বসো, রেস্ট নাও, চা পানি সবই আমি করছি।
ভালো করে মনোযোগ দিয়ে চা বানালাম, আইটেম অনেকগুলো; আমি নিজেও নিচ্ছি, দেশের খবর টবর নিয়ে ব্যস্ত রাখার চেস্টা করছি। আমি গ্রীক পেস্ট্রীর কম চিনির উপর ছোটখাট লেকচার ছাড়ছি; কিছুক্ষণের মাঝে সুযোগ এসে গেলো, ভাবী জানতে চাইলেন, সল্টেড বিস্কুটগুলো কোন দোকানের!
-নোয়াখালীর ৪ ভাই মিলে যে নতুন দোকান দিয়েছে, সেই দোকান থেকে আনলাম, ভাবী; লোকগুলো খুবই ভালো; ২ দিন আগে সেমাই কিনেছিলাম উনাদের ওখান থেকে, সেমাইগুলো নাকি পুরাতন ছিলো; আমাকে সেমাই হাতে দেখে ওদের বড় ভাইটি নিজের থেকে স্যরি বললো; উনারা নাকি আগে টের পাননি যে সেমাইগুলো পুরাতন ছিল; আজকে কিছু ভালো সেমাই এসেছে, ২ প্যাকেট নিলাম। আমার স্ত্রী বললো,
-আগেরগুলো পুরানো ছিলো? আমি তো সেগুলোই রান্না করেছি।
আমি বললাম,
-থাক, ওটা বাদ; পুরাতন কোন কিছু খাওয়া ঠিক না।
মেহমান ভাবী বললেন, "লোকগুলো ভালো, নিজের থেকে বলেছেন; অন্যেরা সুযোগ পেলেই পুরাতন জিনিষ দিয়ে দেয়।
আমি ফল কেটে দিলাম, নতুন করে আরো চা ঢেলে দিলাম; সবাই খুশী; সবকিছু ভালো!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৮