somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০০ বছর আগে রাশিয়ার মানুষেরা ১ বড় বিপ্লব করেছিল।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯১৭ সালের ৭ ই নভেম্বর রাশিয়ান সাধরণ মানুষ: কৃষক ও শ্রমিক মিলে এক বড় বিপ্লব করেছিল; তারা তাদের জার(সম্রাট) ও জারের সৈন্য বাহিনীকে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করে সাধারণ মানুষের সোস্যালিষ্ট সরকার গঠন করেছিল। রাশিয়ায় তখন রাজতন্ত্র চলছিলো, দেশটি ইউরোপের মাঝে বেশ পেছনে পড়েছিল; যদিও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিলো দেশটি, জারের সরকার এসব সম্পদ আহরণ করার মত শক্তিশালী ছিলো না, তারা মোটামুটি কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিলো, কিছু প্রয়োজনীয় কলকারখানাও ছিলো, খনি ছিলো। সাধারণ মানুষ জমির মালিক ছিলো না, জমির মালিক ছিলো জমিদারেরা; আমাদের বৃটিশ আমলের মতো; আসলে, আমাদের জমিদারদের থেকে একটু ভিন্ন ছিলো,বেশীরভাগ মানুষের নিজস্ব থাকার বাড়ী ছিলো না, বাড়ীগুলোও জমিদারের ছিল; মানুষ জমিদারের জমি চাষ করতো; কোন কারণে জমিদার পছন্দ না করলে, তাদের চলে যেতে হতো, নতুন জমিদার খুঁজে সেখানে থাকার ব্যবস্হা করতে হতো। রাশিয়া শীত-প্রধান দেশ, যেখানে সেখানে থাকা সম্ভব ছিলো না; দেশ বিশাল হলেও মানুষকে এক যায়গায় জড়ো থাকতে হতো; জমিদারদের থেকে পালিয়ে থাকার উপায় ছিলো না; জমিদারেরা মানুষকে লেখাপড়ার সুযোগ দিতো না; অশিক্ষা ও শীত প্রধান দেশ হওয়ায় মানুষ মদাসক্ত ছিলো, এতে সমাজ বেশ পেছনে পড়েছিল।

বিপ্লবটি হয়েছিল কম্যুনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে; আমরা কম্যুনিষ্টদের তেমন পছন্দ করি না, এরা নাস্তিক পাস্তিক, আমরা হলাম খোদার সিলেক্টেড লোকজন। সাধারণ রাশিয়ানরা আমাদের চেয়েও বেশী ধর্মীয় ছিলো এক সময়, তারা তাদের জার ও চার্চের পুরোহিত'দের "বাবা" ডাকতো, কারণ ওরা খোদার লোকজন। কম্যুনিষ্টরা চার্চের লোকজনদের পছন্দ করতো না; কারণ, চার্চ বলতো যে, জারতন্ত্রের সমালোচনা করা যাবে না, জারের বিপক্ষে যাওয়া মানে খোদার বিপক্ষে যাওয়া; চার্চের এই দালালীর কারণে সাধারণ মানুষ ক্রমেই চার্চের লোকদের উপর বিরক্ত হয়ে উঠে; ফলে, বিপ্লবের পরে, তারা চার্চগুলো বন্ধ করে দেয়; এই জন্যই রাশিয়ার বেশীর ভাগ লোক শেষ চার্চ মার্চ নিয়ে মাথা ঘামতো না।

বিপ্লবের নেত্বত্ব ছিল ভ্লাদিমির লেনিন; ইনি শিক্ষিত লোক ছিলেন, তিনি মানুষকে মার্ক্সের তত্ব বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন; তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানুষ জারের অধীনে দরিদ্র জীবন যাপন করতে বাধ্য, কারণ দেশের মালিকানা ও সম্পদ খুবই সামান্য কিছু পরিবারের হাতে; এত সামান্য মানুষের হাতে এত বেশী সম্পদ পড়ে থাকলে বাকীদের ভাগে তেমন কিছু পড়ার কথা নয়; কিন্তু রাশিয়া বিরাট দেশ ও সবার জন্য যথেষ্ট সম্পদ আছে। তিনি সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক সরকার ও সম্পদের উপর সব মানুষের সমান অধিকারের তত্ব নিয়ে বই লেখেন, ও সাধারণ মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হন। ১৯১৭ সাল থেকে শুরু করে, মানুষ এক উন্নত সমাজ ব্যবস্হা গড়ে তুলেছিল; সামান্য কৃষি প্রধান দেশ থেকে দেশটি বিশ্বের ২য় ক্ষমতাশালী দেশে পরিণত হয়েছিল; ১৯৩০ সালের পর, সেই দেশে কোন অশিক্ষিত মানুষ ছিলো না; সবাই ফ্রি উচ্চ শিক্ষা পেয়েছিল।

লেনিনের আগেও, ১৯০৫ সালে কম্যুনিষ্ট পার্টি বিপ্লব করে, কিন্তু জারের সৈন্য বাহিনী কম্যুনিষ্টদের পরাজিত করে, এবং পার্টির নেতাদের নিষ্ঠুরভাবে বিচার করে ফাঁসিতে ঝুলান; নেতাদের মাঝে লেনিনের বড় ভাইও ছিলো। লেনিন ভালো অর্থনীতি ও ফিলোসফি বুঝতেন, সোস্যাল ও পলিটিক্যাল সায়েন্সে তিনি দক্ষ ছিলেন, এবং মানুষকে সুন্দর ও সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। মানুষ তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লব করেন, ও সাধারণ মানুষের সরকার গঠন করেন ১৯১৭ সালে।

আজকে, রাশিয়া লেনিনের দেয়া তত্বে আর নেই, ইহা ডিক্টেটর পুটিনের অধীনে এক ধরণের গলাকাটা ক্যাপিটেলিজমে আছে; ১৯৬০ সালের পরে দেশটির সরকারের হাতে ভয়ংকর বিশাল সম্পদ জমে যায়; এই সম্পদ মানুষের মাঝে তারা সঠিভাবে বিতরণ করেনি, এতে উন্নয়ন বাধার সন্মুখীন হয়, সম্পদের তুলনায় মানুষের জীবনযাত্রার মান নীচে ছিল; মানুষ এর সমাধান চাচ্ছিল, পার্টিও সমাধান চাচ্ছিল; কিন্তু পার্টির বিশাল অংশ এই সম্পদকে ব্যক্তি মালিকানায় নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়; পার্টির ছোট অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছিল পার্টির সেক্রেটারী মিখাইল গার্ভাচব; অন্য অংশে ছিল ইয়ালসিন, পুটিনেরা; এদের সাথে যোগ দেয় আরো ১৫ রিপাবলিকের দুষ্ট নেতারা; অবশেষে ১৯৯১ সালে ইয়েলসিনরা জয়ী হয়; বিপ্লবীদের স্বপ্নের দেশ ক্যাপিটেলিজমে চলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৫
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×