মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকেও অনেকে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব বুঝতে পারেননি, অধিকৃত এলাকায় থেকেও এরা নিজ ঠিকানায় অবস্হান করছিলেন, কথাবার্তায় খোলাভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সাপোর্ট করছিলেন, কেহ কেহ কাজে যোগদান করেছিলেন, কেহ কেহ পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করছিলেন, বা সাপোর্ট করছিলেন; এদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকে ও উহার প্রভাবকে সঠিভাবে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
যুদ্ধের গুরুত্ব না বুঝাতে আমাদের কিছু শিক্ষিত মানুষজন পুরোপুরি বেঘোরে প্রাণ হারায়েছেন; যুদ্ধের সময় যুদ্ধ করতে হয়, বা নিজস্ব যোদ্ধাদের কাছাকাছি থাকতে হয়। প্রথমত: যুদ্ধ না করলে, দেশ স্বাধীন হবে কিভাবে? যুদ্ধে যে শুধু অস্ত্রহাতে সৈনিক হতে হবে, তা নয়; ডাক্তারেরা আহত ও রোগীদের সাহায্য করতে পারতেন। ত্রিপুরার শরণার্থী ক্যাম্পে কলেরা ডায়েরিয়ায় বাচ্চারা মারা গেছে বিনা চিকিৎসায়; অথচ ডাক্তারেরা ঢাকায় পাকীদের চুরির তলে বসে ঝিমাচ্ছিলেন! আমাদের যুদ্ধগুলোতে কোন শিক্ষিত লোকজন ছিলো না বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা লেখা হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ হয়নি, অথচ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসরেরা ক্লাশ নিয়ে পরোক্ষভাবে পাকীদের সাহায্য করেছেন; এগুলো ছিল ভয়ংকর ভুল; জাতির একাংশ যুদ্ধ করছেন, বাকীরা সেটা না বুঝলে, অবশ্যই এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভব ছিলো, এবং সেটা ঘটেছে। বেংগল রেজিমেন্ট, ইপিআর, ছাত্র ও কৃষক যোদ্ধাদের পরিবারগুলোকে সাহায্য করার লোকজন পাওয়া যায়নি।
যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তাঁদের মাঝেও কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধা এই ৯ মাসের দীর্ঘ ও ভয়ংকর গেরিলাযুদ্ধকে সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে অকারণে প্রাণ হারিয়েছেন; বাকীদের কথা অনুমেয়; একই সাথে, আওয়ামী লীগ এই ধরণের যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো না; তাদের ধারণা ছিলো, অসহযোগ আন্দোলনের কাছে হেরে যাবে ইয়াহিয়ার সরকার, সমঝোতায় আসতে বাধ্য হবে; মাত্র ২৫শে মার্চ রাতে, পাকী আক্রমণের কিছুক্ষণ পুর্বে তারা বুঝতে পেরেছিলো যে, ক্রেক-ডাউন আসছে; তারপরও, তারা এতবড় হত্যাকান্ডের কথা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়।
যুদ্ধ শুরু হলে, প্রথমদিকে, কিছুদিন আওয়ামী লীগের লোকজন কিছুটা নেতৃত্ব দিয়েছে ভেতরে; ততকালীন প্রবাসী সরকারের সাথে অধিকৃত এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজনের কতটুকু যোগাযোগ ছিল বলা মুশকিল। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে উত্তর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সব নেতাই ত্রিপুরা চলে গিয়েছিল, দেশের ভেতরে তাদের তেমন কোন নেটওয়ার্ক ছিলো না; তৃণমুলে যারা সাপোর্টার ছিলেন তারা ব্যক্তিগতভাবে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করছিলেন মাত্র। কলিকাতা থেকে ভেতরে লোকদের সাথে শক্ত নেটওয়ার্ক ছিলো বলে মনে হয় না; ফলে, অনেকেরই যুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিলো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৩