শেখ সাহেব জীবনে একটা বড় কাজ করেছিলেন, বাংগালীদের দরিদ্র-কবিকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন; কবির জীবনের শেষদিনগুলোতে কবির পরিবারকে বাসা ভাড়া, খাবার, ডাক্তার নিয়ে কষ্ট করতে হয়নি। আপনারা যারা ব্লগে কবিতা লিখছেন, ভালো কবিতা লেখার চেষ্টা করেন; আপনাদের অসুুবিধা হলে, শেখ সাহেবের মেয়ে অবশ্যই কিছু একটা করবেন, নিশ্চন্তে থাকুন, শেখ সাহেব কবিতা পড়তেন!
আপনি যদি শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকেন, দরিদ্র হয়ে থাকেন, কবি নজরুলের দারিদ্রতা কিছুটা বুঝবেন; আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি দরিদ্র মানুষের কষ্ট বুঝতে পেরে তাঁদের জন্য কবিতা লিখেছিলেন, তাঁদের ভাগ্য ফেরাতে ভোটও করেছিলেন, ভোট পাননি; দরিদ্ররাও উনাকে ভোট দেননি; দরিদ্ররা আজীবন এক ভুল ধারণার শিকার, ধনীরা শুধু দারিদ্রতা দুর করতে পারে।
সময় ও পারিবারিক কারনে, কবি ছোটকাল থেকেই বৃটিশ শাসনের বিপক্ষে ছিলেন; সামান্য লেটো গানেও সেটা তিনি প্রকাশ করেছেন; উনার চাচার লেটো-গানের দল ছিল, চাচা ১১ বছর বয়সের নজরুলের গান সেখানে গাইতেন, মানুষ পছন্দ করতেন; কারণ, সেখানে বৃটিশের শাসনের অবসান চাওয়া হতো।
সেই বৃটিশ বিরোধী কবি, দরিদ্রতার কারণে এনট্রেন্স পরীক্ষা না দিয়ে, ১৮ বছর বয়সে বৃটিশ সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন, সামান্য আয় করার জন্য; ভাইবোনদের জন্য আয় করার অনেক দরকার ছিলো। বুঝতে পারছেন বেকারত্ব ও দারিদ্রতা মানুষকে কি করতে পারে?
ঢাকায় সেদিন, তাজিন নামের অভিনেত্রী মেয়েটাও নাকি দারিদ্রতার কারণেই হার্ট-ফেল করেছে; অবস্হা বুঝেন; বৃটিশ আমল থেকে বেকারত্ব শুরু হয়েছে, আজও বাড়ছে!
কবি কিছু সময় বেশ স্বচ্ছল ছিলেন, গান লিখতেন, রেডিও'তে গাইতেন, শিখাতেন, ফিল্মেও কাজ করেছিলেন; শেরে বাংলাও সামান্য টাকা দিতেন; কোনভাবে চলে যেতো।
১৯৪২ সালে কবি অসুস্হ হয়ে পড়েন; কোলকাতার বাংগালীরা উনাকে ভালোবেসেছিলেন, সাহায্য করেছেন: টাকা টুকা তোলে উনাকে ১৯৫৩ সালে লন্ডনও পাঠায়েছিলেন; কবি সুস্হতা ফিরে পাননি। ১৯৬২ সালে কবির স্ত্রী পরলোক গমন করেন। গরীবের কবি সত্যই গরীব হয়ে যান।
১৯৭২ সালে শেখ সাহেব কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন; সরকার সব খরচ দিয়েছে; বাংলার যত শিক্ষিত আছেন, সবাই গিয়ে কবির সাথে দেখা করেছেন; বাংলার গরীবদের যাওয়ার দরকার হয়নি; তাঁরা জানেননি কবি এসেছিলেন, তাঁরা কোনদিন জানেননি কবি কি লিখেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ রাত ১:১৫