সুপার মার্কেটে বাজার করছি, পাস্তা-সস দরকার; দেখি পাস্তা-সস তাকের পুরো এলাকা দখল করে রেখেছে ১১/১২ বছরের একটি কিশোরী: উনি এমনভাবে দাঁড়ায়েছেন, ও নিজের শপিংকার্টকে এমন পজিশনে রেখেছেন, অন্য কেহ তাকের কাছেও ভিড়তে পারবে না। আমি পেটটাকে সংকুচিত করে, এঁকেবেঁকে উনার শপিংকার্টের ফাঁক দিয়ে তাকের কাছাকাছি চলে গেলাম। কিশোরী আমাকে বললো:
-মিষ্টার, তাকের উপরে ষ্টোরেজ এলাকায় লিদিয়া ব্রান্ডের যে পাস্তা-সসটা দেখছেন, উহা আমাকে নামিয়ে দিতে পারবেন, প্লীজ?
-অবশ্যই।
আমি হাত উপরে তুলে বুঝতে পারলাম, উহা আমার নাগালের ১ ফুট উপরে আছে, লাফ দিয়ে নিতে হবে। পাস্তা-সসের তাকের পাশে, দোকানের কর্মচারী এক মেয়ে কাজ করছিলো; সে অলিভের জারগুলো সাজিয়ে রাখছে। আমি উপর থেকে পাস্তা-সস নেয়ার চেষ্টা করছি দেখে, সে আমার কাছে এসে, আমাকে বলতে লাগলো:
-উপর থেকে কিছু নিওনা, ওগুলোতে দামের ট্যাগ লাগানো হয়নি।
আমি তার বাক্যের জন্য প্রস্তত ছিলাম না, সে তার বাক্য শেষ করার আগেই আমি লাফ দিয়েছি; সস নিয়ে মাটিতে পা লাগার সাথে সাথে কাঁচের একটা জার ভাংগার আওয়াজ পেলাম; মনে হয়, লাফ দেয়াতে, আমার হাতে লেগে তাক থেকে সসের জার পড়ে ভেংগেছে। কিন্তু মেঝেতে দেখি অলিভের বোতল ভেংগে মেংগে ছড়ায়ে আছে। দোকানের মেয়ে বললো:
-দেখেছ, আমার কথা না শুনে তুমি কি সমস্যর সৃষ্টি করেছ? বয়স্ক লোকদের নিয়ে অনেক সমস্যা, এরা চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না।
-অলিভের বোতল কোথা থেকে পড়লো? আমি জানতে চাইলাম।
-আমার হাত থেকে পড়েছে; তুমি যেভাবে লাফ দিয়েছ, আমি মনে করেছি, তুমি শেষমেষ আমার গায়ে পড়বে; আমি সরতে গিয়ে হাত থেকে জার পড়ে গেছে; দেখেছ, কি অবস্হা হয়েছে? এখন আমাকে সবকিছু পরিস্কার করতে হবে।
-আমি পরিস্কার করে দেবো; আমাকে ঝাড়ু এনে দাও!
-তোমাকে পরিস্কার করতে হবে না, শুধু মনে রেখো, ছোট্ট সুন্দরী দেখে লাফ দিও না, তোমার সেই বয়স নেই!
একটু দুরে যেতে হবে, সেজন্য একটু শক্তশালী গাড়ী দরকার; সন্ধ্যার একটু আগে, একটা পিকআপ ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে এলাম, ভোরে রওয়ানা দেবো। পিকআপটা বেশ লম্বা, আধা ঘন্টা ঘুরেও বাসার আশেপাশে কোন পার্কিং পেলাম না। একটা পার্কিং আছে, আমাদের রাস্তাটা যেখানে পার্কওয়ের (বড় রাস্তা) সাথে মিলেছে সেখানে, একটা বড় গাছের নীচে। এলাকার লোকজন এই গাছের নীচে গাড়ী রাখে না, গাছে রাতে চড়ুই পাখীর মত কিছু পাখী রাত কাটায়, গাড়ীর উপর পায়খানা করে ভরায়ে ফেলে; না ধুয়ে গাড়ীচালানো যায় না। যারা জানেন, তারা সেখানে পার্কিং করেন না।
উপায় নেই, পিকআপ'এর দৈঘ্যের কারণে এটাই একমাত্র পার্কিং বাকী আছে; রাখলাম; পাখীরা এখনো আসেনি, আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বাসায় গেলাম; চা খেয়ে গাড়ীর দেখার জন্য জন্য বের হলাম; রাস্তা থেকে ২ টুকরা পাথর নিলাম হাতে, পাখীদের তাড়িয়ে দেবো।
মোটামুটি অন্ধাকার হয়ে গেছে, পাখীরা ফিরেছে; ভীষনভাবে কিচিরমিচির করছে। আমি রাস্তার উল্টো পাশে গিয়ে কোণাকুনি অবস্হান নিলাম, যাতে পাথর ছুঁড়লে উহা পার্কওয়ের উপর পড়ে; এখনো গাড়ী চলছে, একটু পরেই রেড-সিগন্যাল পড়লেই এদিকে গাড়ী থাকবে না; পার্কওয়ের ফুটপাথে লোকজন নেই, আমার আশেপাশেও কেহ নেই। গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়েছে, দুরে রেড লাইট।
আমি গাছের আগডাল বরাবর পাথর ছুড়লাম, ডালে না লাগলে পাথরটি পার্কওয়ের উপর পড়বে। কাজ হয়েছে, পাখায় ভীষণ আওয়াজ তুলে, বিপুল পরিমাণ পাখী কিচির মিচির করে একসাথে উড়ে গেলে। আমি হাসলাম, যাও অন্য যায়গায় আজ রাতে থাকগে। এমন সময়, আমার পাশেই পার্ককরা একটা জীপের দরজা খুলে গেলো, একটা ২২/২৩ বছরের মেয়ে বেরিয়ে এলো; আমি অন্ধকারে খেয়াল করিনি যে, জীপের ভেতর মানুষ আছে।
-হ্যালো, আমি বললাম।
সে হ্যালোর উত্তর দিয়ে, আমাকে প্রশ্ন করলো,
-তুমি কি পাখীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছ?
-না, আমি গাছে পাথর ছুড়েছি। তুমি আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করছো কেন?
-কারণ আমি দেখেছি যে, তুমি পাখীদের প্রতি পাথর মেরেছে! গাছে নীচের গাড়ী কি তোমার?
-তোমার অনুমান সঠিক।
-আমার জীবনে তোমার মত বয়স্ক লোককে রাতে পাখীর দিকে পাথর ছুড়তে দেখিনি!
-তোমার জীবন সামনে পড়ে আছে, দেখার সময় হবে; তবে,এখন থেকে তোমার জীপে পাখি পায়খানা করবে না।
-সেটা দেখার বিষয়; মানুষের বয়স বাড়লে সব মানুষই কি এসব ফানি কাজ করে বেড়ায়?
-অভিজ্ঞতা!
-আমার মনে হয়, পাখীদের জন্য এটা ছিলো এক নতুন খারাপ অভিজ্ঞতা।
-যদি কোনদিন তোমাকেও পাথর ছুড়তে হয়, আমাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলিও না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮