সময়ের সাথে, সব ব্লগারকে নিজের লেখার মান সম্পর্কে ভাবতে হবে: দেখতে হবে, গত পোষ্ট থেকে এবারের পোষ্টটাকে নিজের কাছে ভালো লাগছে কিনা, এবং অতীতে কমেন্টকারীরা কি কি বিষয়ে সমালোচনা করেছেন: শিরোনাম, লেখার বিষয়বস্তু, লেখার ষ্টাইল, পোষ্টের আকার, ফরমেট, রেফারেন্স, ভুল ডাটা, বিষয়ের উপর কম দখল ইত্যাদি; সেগুলোকে মনে রেখে লিখতে হবে।
লেখার বিষয়বস্তু সঠিক, লজিক্যাল, সার্বজনীন ও চিরন্তন হতে হবে: সায়েন্সের উপর লিখতে হলে সায়েন্সে ন্যুনতম দখল থাকতে হবে, চাঁদ ও পৃথিবীর মাঝে দুরত্ব নিশ্চয় 'বর্গ কিলোমিটার' এককে মাপা হয় না; ষ্টিফেন হকিং'এর সমালোচনা করতে হলে সায়েন্সের ডোমেইনে থেকে আলোচনা করতে হবে, জাকির নায়েকের রেফারেন্স টানা লজিক্যাল হবে না; এমন কি ধর্মীয় রেফারেন্স না টানাই ভালো। নিজের মৌলিক ধারণা না থাকলে, শুধুমাত্র উইকি মুইকি দেখে লিখলে, উহা পাঠকের মন পাবে না।
ব্লগে কবিতা বেশী প্রকাশিত হয়; কবিরা হলেন সমাজ ও মানুষের বিবেক ও কন্ঠস্বর; কবিতায়, মানুষের হৃদয়ে আটকে থাকা অনুভুতিগুলোকে ভাষা দেয়া হয়; সেই ভাষা হতে হবে সুন্দর, হৃদয়গ্রাহী, ঝর্নার মত উৎসরিত, পাহাড়ী নদীর মত বহমান, দীঘির জলের মত প্রশান্ত, রংধনুর মতো রংগীন, কিশোরীর মত আবেগী; কবি যদি রবিসন ক্রুশোর মত নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, পাঠকেরা হতাশ হয়ে ফিরে যাবেন।
রাজনীতি নিয়ে লিখতে হলে আপনাকে অনেক বিষয়ে বুঝতে হবে, ও নিজের আইডিয়া যোগ করতে হবে; কারণ, রাজনীতি হচ্ছে অনেক বিজ্ঞানের সমন্ময়ে একটি জটিল বিজ্ঞান: পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোস্যাল সায়েন্স, লজিক, দর্শন, অংক, ইতিহাস, রাজনৈতিক তত্বসমুহ, ইকোনমি, ফাইন্যান্স, পলিট-ইকোনমি, টেকনোলোজী, জেনারেল সায়েন্স ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে; কিছুটা এনালাইটিক্যাল জ্ঞানও দরকার। লেনিনকে না দেখে, বা সোভিয়েত ইউনিয়নে না গিয়ে, সোস্যালিজম নিজে কথা বলতে হলে অদেখা বিষয়ের উপর লজিক্যাল ধারণা ও এনালাইটিক্যাল দক্ষতার দরকার; ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরে, যেদিন ক্যু ও পাল্টা ক্যু'তে মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল খালেদ মোশারফকে হত্যা করা হয়েছে, উহা একটা 'ক্যু' কিংবা 'কাউণ্টার ক্যু' মাত্র, উহাকে 'বিপ্লব' বলে চালিয়ে দিলে তো চলবে না; তা'হলে মাও টাও'দের অবদানকে ছোট করে দেখা হবে।
গল্প লিখতে নতুন নতুন প্লটের দরকার; জিং জাং, পর্ণ মর্ণের জোড়াতালি দিয়ে ঘটনাবহুল কাহিনী বানানো কিন্তু গল্প নয়; গল্পের জন্য শক্ত প্লট থাকতে হয়, সমাজের প্রতিফলন থাকতে হয়, উহাই গল্পের আসল ভিত্তি; দুর্বল ভিত্তির উপর ইট সিমেন্ট লাগালে উহা সুন্দর ইমারত হবে না; কৃষক ইমারত তৈরি করেন না, আর্কিটেক্ট ইমারত বানায়।
আমাদের পরিবেশে, আস্তিক নাস্তিক নিয়ে পোষ্ট লেখা আসলে ব্লগিং নয়, মনে হচ্ছে! ব্লগে, এই আলোচনার শেষও নেই, উপসংহারও নেই; সৃষ্টি সম্পর্কে এখন দুইটি মতবাদ আছে: একটি ধর্মীয়, অন্যটি সায়েন্টিফিক; ২টির শুরু এক, গন্তব্য ভিন্ন।
সাধরণ জ্ঞান, সামাজিক, অর্থনৈতিক, টেকনোলোজিক্যাল বিষয়ে লেখার সময় খুবই হুশিয়ার থাকার দরকার; এখন মানুষের জানার লেভেল অনেক উঁচুতে; কিছু একটা লিখে দিলে হবে না; বাংলাদেশের উপর লিখতে গিয়ে যদি কেহ লেখেন যে, বাংলাদেশে ৭ থেকে ৯ বছরের শিশুর পরিমাণ ৪২.৩৯ মিলিয়ন, উহা সাধরণ জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষের কাছে ধরা পড়বে; অনেক ব্লগার খেয়াল না করলেও, লেখককে খেয়াল রাখতে হবে।
সময়ের সাথে সামুর ব্লগারদের মান বাড়ছে; তবে, লেখক যদি নিজের লেখার মানের প্রতি নজর রাখেন, আমরা সব সময়ই মানসম্পন্ন ভালো লেখা পড়ার সুযোগ পাবো। লেখকদের মৌলিক ভাবনায় ভুল থাকলে, পোষ্ট ভুলকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে কিছু সময়ের জন্য হলেও।
আগে, লেখার মান বাড়ানোর কথা নিয়ে সিনিয়র, অভিজ্ঞ, পপুলার ও দক্ষ ব্লগারদের থেকে পোষ্ট আসতো মাঝে মাঝে; কিন্ত সম্প্রতি এই ধরণের পোষ্ট আসেনি অনেকদিন; তাই, আমি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছি, হাজার হলেও বাংগালী মানুষ তো, কিছু না কিছু বলার আছে সব সময়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:১২