ধনী দেশগুলোর জন্য ক্যাসিনো হচ্ছে বিনোদন কেন্দ্র, ইহাতে দেশের সাধারণ মানুষই বেশী যায়; ইহা চাকুরী সৃষ্টিকারী ইন্ডাষ্ট্রী, ট্যাক্সের উৎস; এবং সেইসব দেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি ইহাকে সাপোর্ট করে।
আমেরিকার আটলান্টিক সিটিতে ২২০০ বাংগালী পরিবার বাস করেন; এঁরা ক্যাসিনোতে চাকুরী করার জন্য নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির অন্য শহর থেকে আটলান্টিক সিটিতে গিয়েছেন বাস করতে। আর লাস ভেগাসের রূপকাহিনী আপনারা জানেন। আমেরিকান আইনে ক্যাসিনো ব্যবসা বিরাট ইন্ডাষ্ট্রিজ। আটলান্টিক সিটিতে ৫ লাখ ও লাস ভেগাসে ১৫ লাখ মানুষ বাস করেন।
ক্যাসিনো নিয়ে আজ ২/৩ দিন বাংলাদেশ কাঁপছে, বিশ্বের অন্যদেশের কথা বাদ দেন, আমেরিকার ২ টি শহর: লাস-ভেগাস ও আটলান্টিক সিটির সব ব্যবসা, সব সার্ভিস, সব চাকুরী ক্যাসিনোকে কেন্দ্র করে। এই ২টি শহর থেকে সরকার সবচেয়ে উচ্চ হারে ট্যাক্স পায়; ট্রাম্প ক্যাসিনো নির্মাণ করে অনেক ডলার আয় করেছে, বিশাল পরিমাণ ডলার হারায়েছে, ব্যাংক-রাপছি করেছে।
২০১৮ সালেে, লাস ভেগাসের রেভেনিউ ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশী; আটলান্টিক সিটির রেভেনিউ এখন ৩ বিলিয়ন ডলার, এক সময় ৬ বিলিয়ন ডলার ছিলো।
আমেরিকান ক্যাসিনোতে, জুয়া খেলাটা মুল ব্যবসা হলেও, ক্যাসিনোতে শুধু জুয়া খেলা হয় না, এখানে মানুষ আসে বেড়াতে, শো দেখতে, লাইভ কনসার্ট দেখতে, পতিতা নিয়ে থাকতে, ছুটি কাটাতে, ব্যবসা করতে, এমন কি বিয়ে করতে। এগুলো আমেরিকার আইন অনুসারে চলছে, এগুলো চাকুরীর সৃষ্টি করেছে, মানুষ পরিবার নিয়ে বসবাস করছে ক্যাসিনো শহরে, এখানে স্কুল কলেজ আছে, অন্য শহরের মতো সবই চলছে।
কিন্তু আমরা আমেরিকা নই, আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি আমেরিকান নয়; আমাদের আইন আমেরিকার আইন নয়; আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে, সমাজ ব্যবস্হা আছে!
ঢাকায় যেটা ঘটেছে, সেটা হলো আইনের বাহিরে, আমাদের সস্কৃতির বাহিরে, আমাদের জাতির স্বার্থের বাহিরে; ঢাকায় যারা গোপনে ক্যাসিনো খুলেছে, এরা দেশের আইন মানে না, দেশের সংস্কৃতি মানে না; এখানে যারা আসে তারা অসতভাবে আয়করা নিজের কালো টাকায় জুয়া খেলে, কালো টাকায় মদ খায়, কালো টাকায় পতিতা নিয়ে ঘুমায়; এবং এরা জানে যে, এগুলো বেআইনী। এটাতে আমাদের পুলিশ, প্রশাসন, মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক দলের লোকেরা জড়িত।
ঢাকার ক্যাসিনোর ভালো দিক হলো, এখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নেই; এখানে যারা ব্যবসা করে ও কাষ্টমার হিসেবে আসে, তারা অসৎ, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ আমলা, অসৎ রাজনীতির দুষ্ট লোকেরা; এরা একজন অন্যজনকে সাহায্য করে, মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে এরা একে অন্যের ঘাঁড় মটকায়, এবং এজন্যই সম্প্রতি ধরাধরি শুরু হয়েছে।
তবে, ঢাকার মানুষের কাছে যেই পরিমাণ "কালো টাকা" আছে, এই ধরণের ৬০০ ক্যাসিনো, ৫০ টি "টপলেস বার" থাকা কিছুই না; ঢাকায় কার কার "হেরেম" আছে, সেটা বের করলে পাবলিক আমাদের এরশাদ সাহেবকে পীর ভাববেন।
পুলিশ, প্রশাসন, মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক দলের লোকেরা ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত, এবং এদের একাংশ এখানকার কাষ্টমার; আবার এরাই দেশ চালাচ্ছে! অর্থাৎ আমাদের দেশ চালাচ্ছে যারা, তারা নিজেরা জেনেশুনে বেআইনী কাজ করছে; এজন্য দেশে এই রকম ভয়ংকর বিশৃংখলা। এখানে যারা ব্যবসা করছে, এরা কি বেকারদের চাকুরীর জন্য বিনিয়োগ করবে? এরা যদি এখান থেকে টাকা আয় করে, ভয়ে এই টাকা দেশে রাখবে? বেআইনীভাবে আয়ের টাকা কেহ বিনিয়োগ করে না, এরা বাড়ীঘর কিনে ও টাকা বাইরে নিয়ে যায়, এদের পরিবারের লোকজন আমেরিকায়, লন্ডনে, দুবাই ও মালয়েশিয়ায় বাস করে।
ঢাকার ক্যাসিনো প্রমাণ করছে যে, আমাদের পুলিশ, আমাদের প্রশাসনের উঁচু পদের লোকেরা, মন্ত্রী ও এমপিরা, রাজনৈতিক দলের লোকেরা বেআইনী কাজ ও আয়ের সাথে জড়িত; এরা আমাদের দেশের বর্তমান বিশৃংলার সৃষ্টিকারী।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫