খামারের জন্য ঋণ প্রাপ্তির উপায়/নিয়ম-কানুন না জানার ফলে ঋণ গ্রহণে ভীতি, ব্যাংক সম্পর্কে অনেকেরই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। অনেকেই হয়তো ঋণের জন্য কোন দিন ব্যাংকের ধারে কাছেও যায়নি। যখনই কেউ শুনে সরকার ২% সুদে আট বছর মেয়াদী কোটি কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে, তিনি তখন ভাবেন এই ঋণ আমারও দরকার, আমিও পেতে চাই। কিন্তু এর জন্য পর্যাপ্ত ইক্যুইটি তার আছে কি-না সেটা চিন্তা করেন না। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক টাকা দিয়ে আপনার পিছে পিছে ঘুরবে না। আপনিই টাকা নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে যাতে সঠিক সময়ে ফেরত দিয়ে আসেন, সে জন্য ঋণের বিপরীতে আপনার যথেষ্ট সম্পদ থাকা চাই। প্রথমে নিজেকে assess করুন আপনার কতটুকু জমি/পুকুর আছে। আপনার কত টাকা ঋণ দরকার। মাছ চাষের ক্ষেত্রে আপনার যদি ৫০.০০ লক্ষ টাকার কম ঋণ দরকার হয়, এবং আপনার জমি যদি ৫.০০ একরের কম হয় তবে ESF এর চিন্তা করবেন না। ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষি ব্যাংক থেকে অনায়াসে নিতে পারবেন। পাঙ্গাস মাছ চাষের জন্য কৃষি ব্যাংক একরে সবোর্চ্চ ৩.০০ লক্ষ টাকা ৯% সুদে ঋণ (Term loan or CC loan) দেয় (অন্যান্য মাছ চাষের জন্য আরো কম)। জমি নিজের হতে হবে। যৌথ মালিকানার জমি হলে অন্যদের নিকট থেকে কমপক্ষে ৫ বছরের এনওসি নিতে হবে। ১.০০ লক্ষ টাকার কম ঋণ নিলে কোন মর্টগেজ করতে হবে না। এ ধরণের ঋণের জন্য আপনাদের নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকে যোগাযোগ করতে পারেন। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগলেও সরকারি ব্যাংক থেকে নেয়ার চেষ্টা করবেন, সুদ কম পাবেন, পরিশোধেও অনেকটা শিথিলতা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংক দ্রুত ঋণ প্রসেস করবে, ভ্যলুয়েশন এর তুলনায় অনেক সময় বেশি ঋণ দিবে, কিন্তু আদায়ের সময় চরম কঠোর অবস্থানে থাকবে। একটা বিষয় বলে রাখি, আপনার সাথে ব্যাংকের কোন পরিচয় নেই, ব্যাংকার আপনাকে চিনে না, জানে না, আপনি ভাল না খারাপ তাও জানে না। কাজেই আপনি প্রথমে যেকোন পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যাংকের সাথে খাতির করবেন। সঠিকভাবে পেমেন্ট করবেন। ব্যাংকের আস্হা অর্জন করবেন। এরপর আপনাকে ধাপে ধাপে বড় ঋণ দিবে। ব্যাংকের আস্থা অর্জন সবচেয়ে জরুরী।
এবার আসি EEF/ESF এর বিষয়ে। শুরুতে বলে রাখি যারা বড় খামারী, জমি কমপক্ষে ৫.০০ একর (সবোর্চ্চ ৩ খন্ডে, ১ কিলোমিটারের মধ্যে), ৫০.০০ লক্ষ থেকে ১৩০.০০ লক্ষ (প্রায়) টাকা প্রয়োজন একমাত্র তারাই এই ঋণের কথা ভাববেন। কোন লিজ সম্পত্তি বা অন্য কোন ব্যাংকে মর্টগেজ আছে এমন জমিতে ঋণ দেয়া হয় না। অনেক দালাল বলবেন ১২.০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। আসলে তা নয়। মোট প্রকল্প ব্যয় সবোর্চ্চ ১২.০০ কোটি। তাও আবার সবোর্চ্চ ঋণ দেয়া হয় মুলধনী মেশিন ভিত্তিক প্রকল্পে (যেমন- অটো রাইস মিল, ফিড মিল, ইত্যাদি)। অনেকেই মূর্খের মত বলে থাকে আমার যদি এত টাকার সম্পদই থাকে, তাহলে আমি কেন ঋণ নিতে যাবো? এ ধরণের মানসিকতা যার রয়েছে, তার জন্য এ লেখার বাকি অংশ পড়ার দরকার নেই। নিজের মতো করে সবাইকে ভাবলে চলবে না। অনেক বড় খামারী আছে যাদের শত কোটি টাকাও ঋণ দরকার হতে পারে। সরকার বিভিন্ন আকারের খামারীদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন সুবিধাজনক স্কিম চালু রেখেছে। আপনার লেভেল অনুযায়ী আপনি সুবিধাজনক জায়গায় যোগাযোগ করবেন। মনে রাখবেন, যেকোন প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গেলে চেষ্টা করবেন ঐ প্রতিষ্ঠানের সবোর্চ্চ লেভেলের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে। তাই বলে গভর্নর বা কোন প্রতিষ্ঠানের এমডি’র সাথে যোগাযোগের জন্য বলছি না। ছোট পোস্টের কারো সাথে যোগাযোগ করবেন, আপনাকে মিস গাইডও করতে পারে, আপনি মন খারপ করে ফিরে আসবেন। যাহোক যারা ESF এর জন্য ভাবছেন, তারা আগে http://www.eef.gov.bd/circulars এই ওয়েবে গিয়ে সর্ব প্রথম বিস্তারিত জানুন। ২৭টি কৃষি ভিক্তিক প্রকল্পের জন্য ইএসএফ ঋণ দেয়া হচ্ছে। আপনার পছন্দ মত খাত বেছে নিন। কোন দালাল বা চক্রের মাধ্যমে ঋণ প্রসেস করতে গিয়ে সর্বস্ব হারাবেন না। BB বা ICB-তে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরাতন ভবনের ৭ তলা, ইইএফ ইউনিট এবং ৬২/৩, (NSC Tower), লেভেল- ১২, পুরানা পল্টন, আইসিবি অফিসে বিস্তারিত জানার জন্য যোগাযোগ করুন। উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সাথেই শুধু যোগাযোগ করবেন। অন্য কোন ব্রাঞ্চ বা অন্য ডিপটার্টমেন্ট এ বিষয়ে আপনাকে তেমন কোন ধারণাও দিতে পারবে না। যারা ইতোপূর্বে এই ঋণ নিয়েছেন, বা পাইপ লাইনে আছেন তাদের সাথেও যোগাযোগ করে ধারণা নিতে পারবেন। যারা দালালের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন তারা তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। মনে রাখবেন এই ঋণ দেয়ায় BB or ICB এর উপর কোন বাধ্যবাধকতা নেই, কোন টার্গেট নেই, প্রসেস করতে কোন চার্জও নিয়ে থাকে না (তবে, মূল্যায়নকারী একটি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভূক্ত হতে হয়, যারা একটি নির্দিষ্ট ফি নিয়ে থাকে)। তাই, আপনাদের নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। এই ঋণ পেতে কমপক্ষে ১ বছর লেগে যায়। যাদের জরুরী ঋণ দরকার তারা এদিকে না যাওয়াই ভালো। এই ঋণ পেতে একটি লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে হয়, শেয়ার ইস্যূ করতে হয়, মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে হয়, TIN, বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র নিতে হয় এ সকল কাজে জমি ছাড়াও বেশ টাকা লেগে যায়।
শুরু করবেন যেভাবে:
ওয়েব-এ দেয়া ফরম্যাট অনুযায়ী EOI ফরম পূরণ করবেন, পরিচালকদের যাবতীয় তথ্য ও ছবি দিবেন, RJSC থেকে Name Clearance Certificate নিতে হবে, ৫০০০.০০ টাকা পে-অর্ডার লাগবে, বাংলাদেশ ব্যাংকে জমিা দিবেন- যাচাই বাছাই করে আইসিবি-তে জমা দিবে- আপনাকে স্বাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হবে- এ ধাপে সফল হলে চিঠি দিয়ে আপনাকে জানানো হবে-পরবর্তীতে কি কি করতে হবে ধাপে ধাপে জানতে পারবেন। আমি যখন ইইএফ-এ ছিলেম, যাদের মামা চাচা ছিল না, খুটিঁর জোর কম, তাদেরকেই বেশি প্রাধান্য দিতাম, বেশি সাহায্য করতাম। আর যারা বেশি ক্ষমতা দেখাতো তাদের ক্ষেত্রে কোন নমনীয়তা দেখাতাম না। এই কথা এ কারণে বলা যে, অতি সাধারণেরাও এই ঋণ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নিতে পারবে। হয়রানি বা সাহায্য করার বিষয়টি man to man vary করে, অনেক সময় অজ্ঞতার কারণেও মানুষকে হয়রানি করে থাকে। যাহোক আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি প্রতি ১০০টি Sanctioned প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৪০টি প্রকল্পে অর্থ ছাড় করা গেছে। বাকি ৬০% প্রকল্প তাদের নিজস্ব নানা বাধার কারণে সহায়তা গ্রহণ করতে পারে নি। কাজেই যেখানে ঋণ Sanction এর জন্যই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়, সেখানে Sanction এর পর অর্থ ছাড় না করতে পারলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায়। অনেকে অভিযোগ করেন এত এত টাকা খরচ করেছি ঋণ পাইনি। আসলে উনি সব টাকা দালালের পিছনে ব্যয় করেছেন, অফিসিয়ালি কোন প্রগ্রেস ওনার নেই। কাজেই ভেবে চিন্তে আগাবেন, কোন দালালের খপ্পরে পড়ে টাকা নষ্ট করবেন না। এ বিষয়ে যদি আরো ভাল ধারনা কারো থাকে, খামারীদের সাথে শেয়ার করবেন।
নোটঃ তিন পাহাড়ি এলাকা ব্যতীত।
সংগৃৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:০৩