somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াত এখন আর ইসলামী দল নয়

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামায়াত এখন আর ইসলামী দল নয়


নাম জামায়াতে ইসলামী’ হলেও এটি এখন আর ইসলামী দল নয়। কারণ এর গঠনতন্ত্র পাল্টে গেছে। দলটির সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে ইসলাম ধর্মের প্রায় সব কিছুই বাদ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য এখন আর আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (সা.) প্রদর্শিত দ্বীন বা ইসলামী জীবন বিধান কায়েমের প্রচেষ্টা নয়। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে তারা গণতন্ত্রের লেবাস পরেছে।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শর্ত মানার জন্য জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্র থেকে ‘আল্লাহ ব্যতীত কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহ্র আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে’থএ নীতিও বাদ দিয়েছে। সমাজের সর্ব¯-রে ‘খোদাভীরু নেতৃত্ব’ কায়েমের চেষ্টার বদলে ‘চরিত্রবান নেতৃত্ব’ কথাটি সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামের শাসন কায়েমের বদলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জামায়াত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসনের কথা বলেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে গত শুক্রবার বলেন,

‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র যেভাবে সংশোধন করা হয়েছে বলে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, তাতে এ দলকে আর ইসলামী দল বলা যায় না। দলটি এখন নামেই ইসলামী। কিš‘ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে এবং কার্যকলাপে তা নয়।’ তিনি বলেন, ’২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার সময় জামায়াত তাদের দলের নামটিও পরিবর্তন করে। আগে ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বা জামায়াতে ইসলামের বাংলাদেশি শাখা। পরে বাংলাদেশের একটি দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাখা হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই এ দলকে প্রকৃত অর্থে একটি ইসলামী দল মনে করিনি। তাদের কার্যকলাপে তা প্রমাণিত হয় না।’

অবশ্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, জামায়াতের ধর্ম ছেড়ে গণতান্ত্রিক লেবাস ধারণের এই ঘোষণা নিয়ে এখনো বিভ্রাšি- কাটেনি। কারণ গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংশোধনীতে দলের মৌলিক আকিদা থেকে ‘কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহ্র আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে’থএ কথাগুলো বাদ দেওয়া হলেও দলটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবিধানে এ কথাগুলো এখনো বহাল আছে।

নিবন্ধন পাওয়ার সময় দলের গঠনতন্ত্রের ধারা-২-এর ৫ উপধারা থেকে এ কথাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জামায়াত ২০০৮ সালেই নির্বাচন কমিশনকে জানায়। তখন এ অংশটুকু লাল কালি দিয়ে কেটে তা গঠনতন্ত্রের অংশ নয় মর্মে স্বাক্ষর করা হয়। কিš‘ পরে এ সংশোধন কার্যকর করা হয়নি।

সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপূর্ণ ও সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পরিপš’ী মোট আটটি ধারা পরিবর্তন বা বিলুপ্ত করে জামায়াতে ইসলামী তাদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এদিন ২ ধারার ৫ উপধারার ওই আপত্তিকর অংশটি সংশোধনের প্রতিশ্র“তি পালন না করার জন্য জামায়াত কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে। দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার নির্বাচন কমিশনকে লেখা তিন পৃষ্ঠার এক চিঠিতে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দল নিবন্ধনের সময় এ অংশটি বাদ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি সত্ত্বেও পরে গঠনতন্ত্র ছাপানোর সময় ভুলবশত তা রয়েই যায়। তবে ২০১০ সালের আগস্টে এ ধারা যথাযথ সংশোধন করে কমিশন সচিবালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল।’ চিঠিতে আরো বলা হয়, ’২০১০ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ওই কপিটি আজকেও (২ ডিসেম্বর) এ চিঠির সঙ্গে যুক্ত করলাম এবং গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংশোধনীতেও তা অš-র্ভুক্ত রয়েছে। আশা করি, এ ব্যাপারে এখন কমিশনের কাছে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।’

এসব ঘটনার পরও জামায়াতের ওয়েবসাইটে এখনো আগের ধর্মীয় লেবাসের গঠনতন্ত্র বহাল রাখা প্রসঙ্গে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা মš-ব্য করেন, ‘দলের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে ধর্মীয় আদর্শ পরিত্যাগ করার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে স্পষ্ট করলেও জামায়াত নেতারা হয়তো গোপন কোনো কারণে তাঁদের সাধারণ সদস্য-সমর্থক এবং দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট করতে চাচ্ছেন না।’

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন গত ৪ নভেম্বর দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে সংবিধান ও আরপিও অনুসারে জামায়াতে ইসলামীকে গত ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে তাগিদ দেয়। জামায়াত তাদের জন্য প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে গঠনতন্ত্র সংশোধনে আরো দুই মাসের সময় চেয়েছিল। সময় দেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধাš- হওয়ার আগেই দলটি তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কমিশনে জমা দেয়। তবে এ সংশোধন যথাযথ হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জামায়াতের আগের গঠনতন্ত্রের ৩ ধারায় দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভূমিকাসহ চারটি উপধারায় আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (সা.) প্রদর্শিত দ্বীন (ইসলামী জীবন বিধান) কায়েমের প্রচেষ্টার কথা বলা ছিল। সেগুলো বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সš‘ষ্টি অর্জন’ বাক্যটি সংযোজন করা হয়েছে।

৫ ধারার ৩ উপধারায় বলা ছিল, ‘সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটাইবার আহ্বান জানাইবে।’ এ অংশ থেকে ‘ইসলামের’ শব্দটি বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ শব্দ দুটি সংযোজন করা হয়েছে।

৬ ধারার ৪ উপধারায় বলা ছিল, ‘ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠাকল্পে গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যব¯’াপনায় বাঞ্ছিত সংশোধন আনয়নের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক পš’ায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্ব¯-রে সৎ ও খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।’ এ কথাগুলো থেকে ‘খোদাভীরু’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘চরিত্রবান’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘নিয়মতান্ত্রিক’ শব্দটির বদলে ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।

৭ ধারার ১ থেকে ৪ উপধারায় জামায়াতের সদস্য হতে হলে ইসলামে বিশ্বাস ও শরিয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ের শর্ত দেওয়া ছিল। এগুলো হচ্ছেথ১. ইসলামের মৌলিক আকিদা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণসহ বুঝে নেওয়ার পর এই সাক্ষ্য দিতে হবে যে এটাই তাঁর জীবনের আকিদা। ২. জামায়াতের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাখ্যাসহকারে বুঝে নেওয়ার পর স্বীকার করতে হবে যে এটা তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। ৩. গঠনতন্ত্র পড়ার পর এই ওয়াদা করতে হবে যে তিনি এর অনুসরণে জামায়াতের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলবেন এবং ৪. শরিয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবগুলো আদায় এবং কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকবেন। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এই ৪ উপধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।

জামায়াতকে তাদের গঠনতন্ত্রের ৬৪ পৃষ্ঠার বিশেষ নোটের দফা ৩-এ সংশোধনী আনারও তাগিদ দিয়েছে ইসি। এতে দলের সব কমিটিতে আরপিও অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্যের ¯’লে বেশির ভাগ কমিটিতে ২৫ শতাংশ মহিলা সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এটি ৬৯ ধারায় সন্নিবেশ করা হয়েছে। সূত্র - দৈনিক কালের কণ্ঠ
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×