somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেন্ট মার্টিনের পথে ভ্রমন বাংলাদেশ-১

১৭ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ২ টা ১০ মিনিট দামপাড়া বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছি রাত ২ টায় যে বাস ছাড়ার কথা সে বাস এখনও এসে পৌছায়নি। অবশেষে সে বাস এলো রাত ২ টা ৩০ মিনিট এ।

আমার গন্তব্য সীমান্ত শহর টেকনাফ, উদ্দেশ্য সেখান থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন যাওয়া। একটু আগে মোবাইলে খবর নিলাম ভ্রমন বাংলাদেশের মূল দল ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে কুমিল্লা অতিক্রম করেছে। তাদের সাথে আমার দেখা হবে টেকনাফের কেয়ারী সিন্দাবাদ এর ঘাটে সকাল বেলা । আমাদের এবারের এডভেঞ্চারের টাইটেল হলো " ভরা পূর্ণিমায় সেন্ট মার্টিনে বর্ষা উদযাপন" ।

বাসে উঠেই দিলাম ঘুম, কারন কাল সারা দিন ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করতে হবে। হটাৎ ঘুম ভাঙলো দেখলাম গাড়ি দাড়িয়ে আছে একটা ফিলিং স্টেশনে তেল নিচ্ছে। কিন্তু এটা কোন যায়গা ঠিক বুঝতে পারলাম না। মোবাইল স্ক্রিনে দেখলাম ভোর ৪.৩০মিনিট। মনে হয় কক্সবাজারের কাছাকাছি চলে এসেছি। বাস আবার চলতে শুরু করলো বেশ ভালো গতিতেই চলছে এতোক্ষন ঘুমিয়ে থাকার কারণে বাসের গতি বুঝতে পারিনি এখন দেখছি ড্রাইভার বিপদজনক গতিতেই বাস চালাচ্ছে। পকেট থেকে জিপিএস টা বের করে বাসের গতি দেখলাম, গতি দেখে অবাক হওয়ার পালা বাস চলছে ১১০ থেকে ১২০ কি.মি স্পীডে এই সরু রাস্তায় এই গতি ভয়ঙ্কর অপর প্রান্ত থেকে যদি কোন গাড়ী আসে তাহলে মুখোমুখি সংঘর্ষ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তবে কিছুটা থ্রীলও অনুভব করছি। মনে তরুন কোন চালক হবে হয়ত, ফাকা রাস্তা পেয়ে মনের সুখে গতির সাথে পাল্লা দিতে চাইছে। কিছুক্ষনের মধ্যে দেখলাম আমাদের গাড়ী লিন্ক রোড় হয়ে কক্সবাজার শহরের মধ্য দিয়ে চলছে সাথে সাথে সাগরের গন্ধ পেলাম মনটা জুড়িয়ে গেল। আমি দুর থেকে সাগর আর পাহাড়ের গন্ধ পাই। লালদীঘি-কলাতলী হয়ে আমাদের গাড়ী মেরিন ড্রাইভে পড়লো এখন জানালা দিয়েই সাগর দেখা যাচ্ছে সাগর বেশ উত্তাল দেখলাম কারণ গত দুই দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ আছে এবং উপকুলীয় বন্দর সমূহকে ৪ নং সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগরের গর্জন বেশ চড়া শুনা যাচ্ছে এই রাস্তা থেকেই।

ছবি : উত্তাল সমুদ্র

বাস থামলো কলাতলী জামে মসজিদের সামনে ফজরের নামাজের বিরতি। এতোক্ষন অন্ধকার থাকায় খেয়াল করিনি আমাদের বাসের চালকে, চালক নামাজ পরার জন্য বাস থেকে নামলেন, কিন্তু একি ? আমি মনে করে ছিলাম কোন তরুন চালক গতির সাথে পাল্লা দিতে চাইচে, এ দেখি ষাটোর্ধ শশ্রুমন্ডিত চালক মনে মনে বললাম বুড়ার জোস আছে এখনও।

নামাজের বিরতির পর বাস আবার চলেতে শুরু করলো বাস চলছে মেরিন ড্রাইভ ধরে পৃথিবীর সবচাইতে লম্বা সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে এক পাশে পাহাড় আর এক পাশে সাগর এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে ভাবতেই বুকটা ৪ ইঞ্চি উচু হয়ে যায়। ইনানী পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে যাওয়া যায় এর পর থেকে ধরতে হবে আরাকান সড়ক কারন ইনানীর পর থেকে মেরিন ড্রাইভ এর কাজ এখনো সম্পুর্ন হয়নি। এই মেরিন ড্রাইভ এর কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিপ্লব ঘটে যাবে। গতবার আমার পায়ে হেটে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার সময় দেখেছি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আসলে কোন কিছুই না ইনানীর পর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে সমুদ্র সৈকত আছে তার কাছে । অপূর্ব সে দৃশ্য পাহাড় আর সমুদ্র যেন একে অপরের সাথে মিতালী করেছে। সমুদ্র তার ঢেউ দিয়ে পাহাড়ের পা ধুয়ে দিচ্ছে ।

আরকান সড়কের দুই ধারের দৃশ্য অপূর্ব মাঝে মাঝে ধান ক্ষেত আর পানের বরজ সাথে রাস্তার দুই পাশে সুপারী বাগান দেখে আমার বলেতে ইচ্ছে করছিলো " বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর "। সামনে দেখলাম নাফ নদী, নদীর তীরে বিস্তৃত লবন আর ছিংড়ী চাষের মাঠ নদীর অপর অংশে মেঘের ভাজে ভাজে পাহাড়ের লুকোচুরি আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কিন্তু সেখানে যাওয়া সম্ভব নয় সেটি মায়ানমারের(বার্মা) অংশ। বিডিআর চেক পোস্ট পার হয়ে সকাল ৭ টায় নামলাম কেয়ারী সিন্দাবাদ এর ঘাটে।

ছবি : নাফ নদীর ওপাশে মায়ানমারের পাহাড়

দেখলাম এখনো আমাদের মূল দল এসে পৌছাইনি আমিই প্রথম। নেমেই জাহাজের খবর নিতে কাউন্টারে গেলাম দেখলাম কাউন্টারের ভদ্র লোক মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। জাহাজের খবর জিগ্ঞাসা করতেই বললেন কোন ঠিক নাই জাহাজ ছাড়তেও পারে আবার নাও ছাড়তে পারে কারণ সমুদ্র উত্তাল। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই দেখলাম আমাদের মূল দলের বাস চলে এলো , দেখলাম বাস থেকে রাব্বি এবং টুটুল ভাই নামলেন আমার কাছে সব শুনে বললেন কি করা যায়? আমাদের দলের সবাই নাছোড় বান্ধা আজকেই তারা সেন্ট মার্টিন যেতে চায়। জাহাজ না ছাড়লে দেশী নৌকায় সাগর পাড়ি দিতেও সবাই প্রস্তুত।


ছবি : সদা হাস্যোজ্বল মঞ্জু ভাই

অবশেষে আমি সহ তাদের বাসে উঠে টেকনাফ শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম আমাদের শেষ ভরসা দেশী নৌকায় উঠার জন্য। বাসে উঠে দেখলাম ত্রিভুজ , হাসান ভাই, মেহরুন, ভাউন্ডুলে শরীফ, শরীফ ভাই (ওয়ারিদ), মঞ্জু ভাই (যার কারনে আমাদের সব ট্রিপ আনন্দময় হয়), সায়ীদ ভাই, আরীফ ভাই, বাবু ভাই, মৃদুল ভাই, পূরবী আপু, ছোট্ট টুনটুনি আপু, রাহাত ভাই, পলাশ ভাই এন্ড ভাবী সহ আরও অনেকে যাদের নাম এই মুহুর্তে মনে পড়েছনা সবাই বসে আছেন। সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর মঞ্জু ভাইয়ের সাথে হালকা টাট্টা তামাশা করতে করতে টেকনাফ বাসস্টেন্ডে কখন পৌছে গেছি খেয়ালই করিনি।

চলবে............................।

৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×