somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বপ্না ইসলাম ছোঁয়া
ছোট বেলা থেকেই গল্প, উপন্যাস পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল,বড় হয়ে কবিতা লিখা শুরু করলাম। কোন নিয়মকানুন জানি না, যা মনে আসে তাই লিখি। আমিই নিয়ম ভাঙ্গি, আমিই নিয়ম তৈরি করি।ফেসবুক আইডি---- https://www.facebook.com/swapnaislamchowa

ছোট গল্প।।

১২ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একগুচ্ছ গোলাপের আর্তনাদ।।
_____ ছোঁয়া///

ঘড়ির কাটা প্রায় পাঁচ এর ঘর ছুঁই ছুঁই করছে।
ছোট্ট একটা আয়না মুখের সামনে মেলে ধরে চোখে
হালকা কাজলের প্রলেপ দিচ্ছে ছোঁয়া।বিকেলের নরম
আলো ছোঁয়ার মুখে লাগায় মুখটাতে আলাদা একটা আভা
ফুটে উঠেছে। এতক্ষনে বেশ ফ্রেস মনে হচ্ছে নিজেকে।
সারাদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে
ছুটোছুটি করে এখন ছবি তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।
ওর বন্ধুরা সবাই কম বেশী ছবি সারাদিন তুলেছে,কিন্তু
তার একটাই কথা ঘেমে মুখ কালো হয়ে যাবে এই অবস্থায়
সে ছবি তুলবে না। বিকেলের দিকে রোদটা পড়ে গেলে
সে ছবি তুলবে। গোলগাল মুখ, শ্যামলা বর্ণের মেয়ে ছোঁয়া।
বেশী সাজলে ভূতের মত লাগে এটা তার ধারণা, তাই হালকা
প্রসাধনী সেরে নিচ্ছে। পাশে বসা বান্ধবী লিজা বলে ওঠে-

- খুব সুন্দর লাগছে রে তোকে। তোর চোখ দুটো অসম্ভব
মায়াকাঁড়া। ফর্সা মেয়েদের আল্লাহ তায়ালা বোধহয় শুধু
গায়ের চামড়াই ফর্সা দেন। এই দেখ না আমাকে, না আছে
চোখ সুন্দর, না ঠোঁট। শুধু কুষ্ঠ রোগীর মত গায়ের চামড়াই ধলা।
ঠোঁট উল্টিয়ে নিজেকেই নিজে ভেংচি কেটে দিল লিজা।

ছোঁয়া ওর কথা শুনে সান্ত্বনার হাসি দিয়ে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দিল।
লিজারা জানেনা কালো বা শ্যামলা মেয়েদের দুঃখটা কোন জায়গায়।
এদের আল্লাহ যত কিছুই সুন্দর দেন না কেন, গায়ের রঙের কাছে
সব কিছুই ম্লান হয়ে যায়। কালো বলে সবাই এদের হেয় করে কথা বলে।
আয়নাটা ভ্যানিটি ব্যাগে রাখতে যাবে, ঠিক এই সময় পাশেই বারো/তের
বছরের একটা মেয়ে হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল-

আফা,সারাদিন একটা ফুলও বেচতে পারিনাই, নেন না একটা ফুল।
সন্ধ্যে হইয়া যাইতেছে,রাতের খাওন কিইন্যা খামু ক্যামনে?
একটা পয়সাও পাইনাই আইজকা। নেন না আফা।
লিজা প্রায় তেড়ে আসলো। ধমক দিয়ে বলল-

-এই পিচ্চি অন্যদিকে যা। এদের জ্বালায় কোথাও বেড়াতে গিয়েও
শান্তি নেই, সুযোগ পেলেই হাত পেতে ঘ্যান ঘ্যান করে।
ছোঁয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখল, মুখটা সত্যি শুকনো লাগছে।
ছোট্ট একটা মেয়ে পেটের দায়ে ফুল বিক্রি করছে, অথচ আমরা তাকে
দুরদুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছি। হতে পারে এই মেয়েটিই ওর পুরো সংসার চালায়,
হয়ত মা পঙ্গু, বাবা ছেড়ে চলে গেছে, নয়ত মা,বাবা কেউ বেঁচে নেই।
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল এক নিমিষেই। ছবি তোলার জন্য যে মুড তৈরি করেছিল,
তা যেন একটু একটু করে মিইয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া লিজাকে থামিয়ে দিয়ে
মেয়েটিকে বলল-

-তুই একটু অপেক্ষা কর, আমি কয়েকটা ছবি ঝটপট তুলেই তোর
ফুলগুলো কিনে নেব, এখন ফুলগুলো নিয়ে রাখব কোথায়?
নষ্ট হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং ওগুলো তুই হাতে নিয়ে রাখ।
বলেই কিছুদুর গিয়ে ছবি তোলা শুরু করল। চার/পাঁচটা ছবি তোলার পর
ওর বন্ধু রাশেদ জেদ ধরল, এই জায়গায় ওরও কিছু ছবি তুলতে।
ছোঁয়া ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে ছবি তুলছে অনবরত।
সূর্য্যটা প্রায় ডুবুডুবু করছে। আরেকটা ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা
তুলতেই মেয়েটা ছোঁয়া'কে হঠাৎ ধাক্কা মেরে বলে-

-আফা, রাইত হইয়া যাইতেছে, নেন না আফা তাড়াতাড়ি।
ও আফা নেন না।
মেয়েটার ঝাঁকুনিতে ক্যামেরাটা হাত থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল।
ছোঁয়ার খুব রাগ হল, হঠাৎ সে অদূরেই দাঁড়ানো সিকিউরিটি গার্ডকে
ডেকে বলল-

-আপনারা এসব খেয়াল রাখেন না? দর্শনার্থীদের এভাবে যে এরা উৎপাত করে
সেদিকে নজর দেন না কেন? ক্যামেরাটা মাটি থেকে তুলে দেখল,
-নাহ, কিছু নষ্ট হয়নি। ভাগ্য ভালো, তাই ক্যামেরাটা বেঁচে গেল।

সিকিউরিটি ছোঁয়ার কথা গুলো শোনার পরপরই আচমকা
মেয়েটির গালে পাঁচটা আঙ্গুল বসিয়ে দিলেন। বাচ্চা মেয়ে তাল সামাল দিতে
না পেরে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেল। এর উপরেই সিকিউরিটি গার্ড আবার
লাথি মেরে বকাঝকা করতে লাগল অনবরত।
মেয়েটার ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরছিল। ছোঁয়া মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
আর গার্ডকে বলতে লাগল-

-আপনি ওকে এভাবে মারছেন কেন? আমি কি আপনাকে মারতে বলেছি?
সুযোগ পেয়েই সুযোগের অপব্যবহার করছেন?

ছোঁয়া রীতিমত রাগে ফোঁসফোঁস করছে। মেয়েটাকে তুলতে গেল,
কিন্তু মেয়েটা ছোঁয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
কান্না করতে করতে ছড়ানো ছিটানো
ফুলগুলো কুড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওখান থেকে সরে গেল।

ছোঁয়ার কাছে মনে হল-
কে যেন ইস্পাতের একটা হাত দিয়ে তার গালে ঠাস ঠাস করে
ননস্টপ থাপ্পড় মেরেই যাচ্ছে। মাথাটা হঠাৎ ঘুরে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে
পুরো পৃথিবী দুলে দুলে উঠছে।
দ্রুত বেরিয়ে আসলো গার্ডেন থেকে। অস্থিরতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাথের বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই আলাপে মশগুল। কেউ ছোঁয়াকে সেভাবে
খেয়াল করছে না। ছোঁয়া মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে রিক্সা নিতে যাবে
ঠিক সেই সময় সে দেখল গেটের বাইরে পিচ্চি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতে ফুলগুলো সব যত্নেই রাখা আছে। তার মানে এগুলো না বেচলে
সে খাবারের পয়সা পাবে না আজ। খুব,খুব কষ্ট হচ্ছিল ছোঁয়ার।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির হাত
ধরে বলল-

-ফুলগুলো দে, আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি। বাবু, সরি রে, আমার তখন মাথা
ঠিক ছিল না। প্লিজ দে ফুলগুলো। নইলে শান্তি পাচ্ছিনা মনে।
মেয়েটি ছোঁয়ার হাত ঝটকা মেরে দৌড়ে চলে গেল নাগালের বাইরে,
যেতে যেতে বলে গেল-
-ম্যাডাম, বহুত দয়া দেহাইছেন, আফনের দয়া আমার পেটে হজম
হইব না, এলা বাড়িতে যাইয়া অন্য কাউরে দয়া দেহান গিয়া যান।

পিচ্চি মেয়েটার শেষের কথাগুলো'তে মনে হচ্ছিল ছোঁয়ার পিঠে
কেউ সপাং সপাং করে চাবুক চালিয়ে দিয়ে চলে গেল।
সেই থেকে ছোঁয়ার প্রায় রাত জাগার কারণ হয় ঐ মেয়েটি।
মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করে বেড়ায় ছোঁয়াকে, আর
করুণ চোখে দু'ফোটা টলমলে জল এনে বলে-
-আফা, আফনে আমারে মাইর খাওয়ালেন ক্যান?
আমার কি অপরাধ ছিল? গরীব হওয়াই কি অপরাধ আফা?
ছোঁয়া আজও ভুলতে পারেনি সেই অসহায় মুখটার কথা।

(আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। আপনার ঘরে,অফিসে,কিংবা
কল-কারখানায়ই হয়ত আছে ফুটফরমাস খাঁটার জন্য ছোট্ট একটা দেবশিশু।
আসুন ওদের মুখের প্রতিচ্ছবিতে এক মিনিটের জন্যে নিজের সন্তানের মুখটা
কল্পনা করি। একটু হলেও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের কাজের ভার মুক্ত
করে দেই। )

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×