somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বপ্না ইসলাম ছোঁয়া
ছোট বেলা থেকেই গল্প, উপন্যাস পড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল,বড় হয়ে কবিতা লিখা শুরু করলাম। কোন নিয়মকানুন জানি না, যা মনে আসে তাই লিখি। আমিই নিয়ম ভাঙ্গি, আমিই নিয়ম তৈরি করি।ফেসবুক আইডি---- https://www.facebook.com/swapnaislamchowa

'বৈষম্য' (ছোট গল্প)

০৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চৈত্রের শেষ দাবদাহে অতিষ্ঠ
হয়ে হাঁসফাঁস করে হাসুর মা;
'আসমান ফাইট্যা মনে অয় রইদ
পড়ে গো হাসু, বোশেখ মাসেও
দ্যাখবি গরমের কি তেজ!' কথাগুলো
বলে সদ্য স্নান সেরে আসা হাসুর মা
ভেজা কাপড় চিপে পানি ফেলে
ঘরের দাওয়ায়;
হাসুর সামনে মাটির বাসনে
মোটা চালের পান্তাভাত,
একটা ছোট্ট বাটিতে কচুরলতি
দিয়ে নোনা ইলিশ রান্না করা।
রাগে ফুঁসছে হাসু, প্রকৃতির সমস্ত
খরা তার চান্দির মধ্যে চড়চড় করছে।
চোখ ফেটে ফোঁটা ফোঁটা পানি
বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পান্তাভাতে যোগ হচ্ছে,
গলা চড়িয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে-
'আম্মা, তোমারে না কইলাম,
বাপজানরে কইতে, উত্তর পাড়ার
ময়নাল এর বাপের মত রূপালী
রঙের ইলশা মাছ আনতে।
তুমি কও নাই? কি আনছে বাপজান
এগুলা,আমি খামু না।'
ঠ্যালা দিয়ে সরিয়ে রাখে মাটির প্লেটখানি।
ভেজা কাপড় মেলে দিতে দিতেই
হাসুর কথাগুলো শুনতে পায় তার মা।
বাসি ঘর,উঠোন ঝাড় দিয়ে গোসল
সেরে এসেছে একটু আগে।
নিঙড়ানো পানি শুকিয়ে যাবার আগেই
মাটিতে নেমে আসে দুটো শালিখ।
হূটোপুটি করে ঠোঁট ডুবিয়ে দু'ফোঁটা
পানি চটজলদি তুলে নেয়।
ঘরের চালে চ্যালাকাঠ শুকোতে দেয়া আছে,
ইচ্ছে করছে ওখান থেকে একটা
কাঠ নামিয়ে নিজের মাথা নিজেই
ফাটাতে।
অবুঝ ছেলেকে কি করে বোঝাবে বাবার
অসামর্থ্যের কথা।
বিরস মুখে ঘরে ঢুকে হাসুর মা,
ছেলেকে প্রশ্ন করে-
'বাজান ক' তো সোনার দাম বেশি
না-কি রূপার দাম বেশি?'
হাসু মায়ের আঁচলে চোখ মোছে।
ঠোঁট উল্টিয়ে বলে- 'মনে অয় সোনার
দামই বেশি মা, তা নাইলে কি বাপজান
তোমারে সোনা রাইখা রূপা দিয়া
হাতের বয়লা বানাইয়া দেয়?'
মা নড়েচড়ে বসে, 'দ্যাখছস বাজান,
তুই কত্ত বুদ্ধিমান পোলা আমার,
জলদি কইরা বুইঝা ফালাইলি।'
হাসু বোঝেনা, কেন তার মা এসব বলছে।
ছেলেকে কাছে টেনে বসায় মা,
শোন বাজান- 'সোনার দাম যেমন
বেশি, তেমনি সোনালী ইলশার দামও
বেশি, হেগোর ইলশা রূপার মত, দাম কম। আমাগো ইলশা সোনার মত চকচকা, তাই
নুন দিয়া বেডারা মাছের গতর ঢাইকা রাখছে,
যাতে কারোর নজর না লাগে।'
ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে হাসু বলে,
' কিন্তু মা, ময়নালের বাপে যহন অই ইলশা ডা আনল,তহন তো কত্ত মানুষ
হেরে ঘিরা ধইরা দাম জিগাইল,
কই আমার বাপরে তো কেউ দাম জিগাইল না?'
হাসুর মা মনে মনে ছেলের বুদ্ধির তারিফ না করে পারল না।এইটুকু
ছেলের কি নিখুঁত বিশ্লেষণ। দামী আর সস্তার পার্থক্যটা শিখে ফেলেছে সে।
লম্বা শ্বাস ছেঁড়ে ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিলেন,
'উদলা জিনিসের দাম তো মানুষ জিগাইবই, রূপা উদলা রাখলে সমস্যা নাই, সোনা ঢাইকা রাখতে হয় বাপ,
তাই তোর বাপে কলাপাতায় মোড়ানো
ইলশা আনছে। যাতে কারোর নজর না লাগে। আমরা এইসব দিয়াই বোশেখ পালন করমু বাজান।'
মায়ের কথাগুলো বিশ্বাস করতে মন সাঁয় দিচ্ছে হাসুর।মা'রা কি কখনো মিথ্যে কথা বলতে পারে!!
বাধ্য ছেলের মত পান্তাভাত খেতে বসে
হাসু, মনে মনে এক প্রশান্তি ঢেউ খেলে যায়।
এই মুহুর্তে মায়ের হাতে রান্নাকরা নোনাইলশা তরকারিটাই এত্ত মজা লাগে, সব চেটেপুটে খেলেও
হাসুর যেন তিয়াস মিটবে না।]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×