ঢুলুঢুলু চোখ দুটো মেলতেই, জীর্ণ দীনতা
সরিয়ে এক থালা ধোঁয়া ওঠা ভাত য্যানো সখ্যতা
গড়তেই তাকিয়ে ছিল আট বছর বয়সী,
সজলের দিকে- মুহূর্তেই সব তন্দ্রা টুঁটে গেল।
তাঁর কাছে ভাতের ঘ্রাণের চাইতেও বেশী
কাঙ্ক্ষিত ছিল মায়ের সুস্থতা। আহা!
তবে কমেছে কি মায়ের বাতের ব্যথা?
না হলে মা সকাল সকাল রান্না ঘরে কেমনে?
চোখ রগড়ে রগড়ে এগোল রান্না ঘরের দিকে;
হাক ছেড়ে বলে, মা, তোমার শরীর আজ ভালো?
কুয়াশা সরে ধেয়ে এলো যে একগুচ্ছ আলো?
মুখে আঁচল চেপে মা তাঁর মুচকি হাসি হাসে,
চিবুক ভিজে যায় চিকচিকে চোখের জলে।
রুদ্ধ কণ্ঠে বলে, তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে নে বাজান,
তোর বাপে বন্দ গ্যাছে, মসজিদে যখন আজান
নহুল নিয়ে যা, দেরী করিস না, বেলা বয়ে যায়।
বিরস বদনে এক ফালি কয়লা কড়কড় করে
কামড়ায় আর মায়ের দিকে ড্যাবডেবে তাকায়;
তোমারে না কইছি, আমি বইখাতা নিয়া
ইস্কুলে যাইয়া লেহাপড়া কইরা সায়েব অমু?
এই একখান কতা তোমারে আর কতবার কমু?
হেয় নাহি সায়েব অইব! বাপের নাম উজ্জ্বল করব!
ঠেলা দিয়ে ভাত সরিয়ে সজল অভিমানে বলে,
তোমারে তো পঙ্গু করছে বাতে,মুখ কেমনে চলে?
বাপ আমার হোন, পিঠে হাত বুলায় মা সস্নেহে,
আমরা অইলাম বারোমাস্যা দিন মজুরের জাত,
কাম না করলে কেমনে পাবি, এমন গরম ভাত?
(বন্দ- খণ্ড জমি। নহুল- সকালের নাস্তা। জামালপুরের লোকাল ভাষা)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৬