মৃত্যুঃ Hi! কেমন আছেন?
ডলঃ Hi! সামনে যদি মৃত্যু বসে থাকে! ভাল থাকা যায়? একটু নার্ভাস তো লাগছেই!
- আমি তো সব সময় সকলের সামনেই বসে থাকি। লোকে খেয়াল করে না। মনে রাখে না।
- তা আপনি কেমন আছেন?
- আমি কখনো ভাল থাকি না।পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম নামটি আমার। আমার চরিত্র চরমতম বিভীষিকাময়। মানুষ আমাকে ভয় পায়। বড় নিঃসঙ্গ আমি।
- দুঃখ নেবেন না। আপনার চেয়ে নিষ্ঠুর নীল বিষ মানব মনেই বাস করে।
আচ্ছা জীবনাবসান হলেই কি আপনার আগমন ঘটে?
- নাহ। অনেক জীবিত লাশ দেখি হেটে চলে বেড়ায়। ভাষাবিদেরা আহলাদ করে তাদের একটা পরিভাষা বানিয়েছেন। “জীবন্মৃত”। আত্মার খাদ্য হল আশা। আশার অভাবে আত্মা রুগ্ন হয়। মারা যায়। জীবনাবসানের আগেই কাউকে মৃত বলা যেতেও পারে।
- তবে আপনার অবস্থান অথবা স্বরূপ কি?
- আমি প্রতক্ষ। দেহ থেকে আত্মা বিচ্ছিন্ন করা আমার ডিউটি। এইই যা।
- ফ্রয়েড বলে গেছেন “The goal of all life is death”
- ভুল বলে গেছেন! মানুষ কেন আমাকে জীবনের বিপরীত ভাবে বুঝি না। জীবনের সাথে আমার তুলনায় চলে না। বড়জোর আমি জীবন সমাপ্তির নামান্তর হতে পারি। কিন্তু জীবন ভিন্ন জিনিস।জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে, উৎকৃষ্ট পরিণতির দিকে প্রবাহিত হওয়া। পরিণতি আর সমাপ্তি কি এক অর্থ বহন করে?
- তা করে না। তবে জীবন যে পেইনফুল! একথা তো মানেন? আপনার মাঝে আছে চূড়ান্ত মুক্তি! জীবনে অভাব আছে, ক্ষুধা আছে, ক্ষুদ্রতা আছে, ঈর্ষা আছে,ক্রোধ আছে……..
- থামুন! থামুন!
- প্রতিনিয়ত জীবনকে এগুলোর সংস্পর্শে আসতে হয়। উৎকৃষ্ট পরিণতির দিকে প্রবাহ!! হা হা হা! ওসব কথা গল্প-কবিতা, বই-পুস্তক, দার্শনিক তত্ত্বে মানায়!
- যারা ওই যুক্তি দেখায় আমি তাদের মানুষ না বলে মেরুদণ্ডী সরীসৃপ বলি। জীবন যেহেতু আত্মায় ভর করে চলে। আর স্বপ্নহীন আশাহীন আত্মা যে জীবন বহন করে। সে তো স্থবির। স্থবিরতার দায় আত্মার হতে পারে, জীবনের না।
জীবনকে হ্যান্ডেল করতে না পেরে দায় চাপায় জীবনের উপর। আপনি অস্বীকার করবেন না নিশ্চয়? নিজের দোষ ঢাকার জন্য অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার মত সহজ রাস্তা আর নেই।
- আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে! আপনাকে অতিথি করে এনেছি বলে, আপনি মানবজাতিকে যা তা বলে যেতে পারেন না!
- স্যরি। একটু এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে উঠতে হবে তাড়াতাড়ি।
- উৎকৃষ্ট পরিণতির কথা বলছিলেন?
- মহৎ, সুন্দর আর ব্যাপক উদ্দেশ্যের সংমিশ্রণ হল জীবন। এখানে পরিকল্পনা, সুব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।
- ভাগ্য বলে একটা শব্দ আছে।
- একজন দক্ষ জীবন ব্যবস্থাপক, ভাগ্যেরও ব্যবস্থাপনা করে। আর ঐ রাবিশ পাবলিকরা জীবনকে দুঃখের হাতে সপে দিয়ে টাইম পাস করে।
- হট ডু ইউ মিন!! টাইম পাস??
- হ্যাঁ। সময়। আমাকে এক চেটিয়া শত্রু না ভেবে, ভয় না পেয়ে সময়কে শত্রু ভাবতে পারে, ভয় পেতে পারে। সময়ই তো মানুষকে ধীরে ধীরে আমার কাছে নিয়ে আসে। সময় কারো বন্ধু আবার কারো শত্রু।
- তবে কিভাবে সময়কে বন্ধু করা যায় আর উৎকৃষ্ট পরিণতি পাওয়া যায়?
- জীবনের একটা সুন্দর রেশ রয়ে যাওয়ায় উৎকৃষ্ট পরিণতি। আর তার জন্য শ্রম দিলে সময় বন্ধু হয়ে যায়। জাস্ট ইট!!
- জীবনের রেশ?
- ২ বছর আগে ঠিক এই দিনটাতে আপনার পিতামহীর জীবনাবসান হল। তার প্রভাব কি আপনি মুক্ত হতে পেরেছেন? তার জীবনের রেশ কি রয়ে যায় নি? আপনি আস্ত একটা মানুষই তো তার জীবনের রেশ। আপনার রেশও থেকে যাবে আপনার উত্তরসূরির মাঝে। এভাবেই মানুষের জীবনের রেশ তারই অজান্তে শতাব্দীর পর শতাব্দী বয়ে যায়। অবশ্য সেই রেশ কতটুকু ফলপ্রসূ হয় তা কর্মই বলে দেয়। কর্মের সৌন্দর্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যেতে পারে।
- ধন্যবাদ। আপনার ব্যস্ততার সীমা নেয়। আজকে তবে ওঠা যাক?
- বাই। সি ইউ সুন।
- বাই বাই!! (তাড়াহুড়ার দরকার নেয়! )
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫১