ওদের সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার খবরটা শুনেছিলাম পহেলা বৈশাখ রাতে....আপনজন তো নয় তবুও মানুষ হিসেবে যতোটুকু মন খারাপ হওয়ার ততোটুকুই হয়েছিলো...টিভি, রিপোর্ট, পত্রিকার পাতা সবখানেই হারিয়ে যাওয়া তাজা প্রাণগুলোকে নিয়ে রিপোর্ট...আর ফেবুতে তো নানা ধরনের পোস্ট ওদের নিয়ে...কারো স্ট্যাটাসে হারিয়ে যাওয়া তরুণদের নিয়ে শোকগাঁথা..কারো স্ট্যাটাসে ওই দলের মৃত এক তরুণের স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে অলৗকিকতার ছোঁয়া...কারো বা এক সেকেণ্ডের নাই ভরসা টাইপ পোস্ট...আরো কতো কী...কেউ কেউ দেখলাম গুগল আর্থ থেকে সংগৃহীত ছবি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মৃত্যু ফাঁদ নিয়ে সম্যক জ্ঞান দিচ্ছেন...সবই বুঝলাম, দেখলাম...কিন্তু আসল জিনিস কাউরে লেখতে দেখলাম না...কোন পত্রিকাও লেখলো না..কোন টিভি দেখাইলো না...কোন রেডিও গাইলো না....
এর মধ্যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আবার বললেন, এখন থেকে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে গেলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে (যদিও আমার মোটা মাথায় কিছুতেই ঢুুকছে না অনুমতির সঙ্গে পর্যটক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কী সম্র্পক)। ভাবখানা এমন শুধু শিক্ষা সফরে গেলেই মানুষ সমুদ্র ডুবে মরে বাকিরা মরে না।
আর নববর্ষ উদযাপনে যে ৩৪ ছাত্র সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলো তারা কিন্ত শিক্ষা সফরে যায়নি তারা গিয়েছিলো নিজ উদ্যোগে আনন্দ ভ্রমনে। তাই তাদের পর্যটক হিসেবে ট্রিট করতে হবে। আর পর্যটক হিসেবে গননা করলেই যে বিষয়টি প্রথম মাথায় আসে তা হচ্ছে ‘নিরাপত্তা।’ সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, ইনানী, পতেঙ্গা অথবা কুয়াকাটা এই সমুদ্র সৈকতগুঅেতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা আছে তা যদি এই অধমরে বলতেন সকলে...
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে (প্রাথমিক পর্যায়ে) গড়ে তোলা ইয়াসির লাইফ গার্ডের কয়েকজন সদস্যকে দেখা যায় ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে (তাগো অবস্থাও ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার)...এছাড়া জোয়ার ভাটায় জেলা প্রশাসনের লাল-সবুজ পতাকা সার্ভিস ছাড়া আর তো কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ে না...এটাতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা কইলাম..সেন্টমার্টিন, ইনানী বা কুয়াকাটায় কোন লাইফগার্ড তো দূরের কথা পতাকাও চোখে পড়ে না...এইসব সমুদ্র সৈকতে কোন ডুবন্ত মানুষকে সাহায্যের জন্য একজন অভিজ্ঞ লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না... তবে মানুষটি ডুবে মরেছে নিশ্চিত হলে কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড ও মিডিয়াকর্মদের সহায়াতা পাওয়া যেতে পারে।
তাই বলি মামদোবাজি ছাড়েন সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যা যা করনীয় তা করেন...তা না হইলে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত আর অপরূপ সৌন্দর্যের প্রবাল দ্বীপ বইলা বইলা মুখে ফেনা তুইলা ফালাইলেও সমুদ্রের গোড়ালি পানিতে পা ভিজিয়ে চলে আসার মতো পর্যটক খুঁজে পাবেন না সামনে...
সমুদ্রে মানুষ নামবেই তাকে সর্তক করার দায়িত্ব আপনাদের...তার নিরাপত্তার দায়িত্বও আপনাদের...বিপদে পড়লে উদ্ধারের ব্যবস্থার দায়িত্বও আপনাদের...‘জোয়ারের সময় পানিতে নামবেন না’ শুধু দায়সারা এই টাইপের বিলবোর্ড লিখে পার পাবেন না...নাহলে আজ মরেছে ওরা ৬ জন কাল হয়তো লিস্টে আপনার সন্তান...থুক্কু অাপনাদের সন্তানরাতো আবার অস্ট্রিলিয়া আর ইউএস এর বীচ ছাড়া নামে না...আর ওখানে ওদের নিরাপত্তায় আছে পামেলারা...আহারে বে-ওয়াচ...
শুনেন শেষ কথা কই, অন্য কোন দেশ হইলে এইভাবে ৬ টা ছেলের মৃত্যুর কারনের সুলুক সন্ধানে স্থানীয় প্রশাসনকে ছিঁড়ে ফেলতো মিডিয়া...আপনাগো কপাল ভালো এই দেশের মিডিয়াতে আমার মতো ভোঁদাইরা কাজ করে...তবে মনে রাখবেন আজকের ভোঁদাই আগামীর ভবিষ্যত...তাই সাবধান!