বুলডোজারের এক ঘাতেই মটমট করে ভেঙে যায় চালার বাঁশ, ঝনঝন করে খসে পড়ে জং-এ ধরা টিন...মাথায় লাল কাপড় বাঁধা কতোগুলো লোক হাকডাক দিয়ে শাবলের ঘাই মারে মাটিতে...ঘরের খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে...আর পুলিশগুলো হুদাই বাঁশি বাজায়...চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি...রুবেল মিয়ারা আজ সকাল পর্যন্ত যে ঘরে থাকতো সেই ঘরটাই এই মাত্র ভাঙলো...বস্তির আরো বাচ্চাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজব ঘটনাটাই দেখছিলো রুবেল...রুবেলের বড়ো বোন তাদের ট্যাপ পড়া দুইটা পাতিল আর কয়েকটা থালা-বাসন কোনমতে রক্ষা করতে পেরেছে...আর বাদবাকি মাল যে ঘরে ঢুুকে কে কখন নিয়ে গেছে রুবেল বলতেও পারবে না...
রুবেলের মা সেই সকালেই কাজ করতে চলে গেছে নাখালপাড়ার এক বাসায়...আসবেন সন্ধ্যার পর...মা চলে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পরেই স্যারেরা পুলিশসহ এসে হাজির...কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দুদ্দাড় করে ভাঙতে শুরু করেছে বস্তি...অথচ গেলো সপ্তাহতেই বস্তি থেকে ভাড়া তুলে নিয়ে গেলো সিরাজ কমাণ্ডার...
ছোট্ট রুবেল এতো কিছু বুঝে না...শুধু তার ভীষন নোংরা ঢিলে হয়ে যাওয়া হাফপ্যান্টটা একহাতে টেনে তুলতে তুলতে তার মনে হয়, অনেক খিদা লাগছে...তবে বড়োবোেনের কান্না ভেজা মুখটা দেখে কিছু বলতে সাহস পায় না...যদি মাইর দেয়...
খবরে প্রকাশ...‘ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হওয়ার পর রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রেললাইনের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।’ অভিন্ন্দন রেল কর্তৃপক্ষকে, ঢাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম স্বর্গরাজ্যের একটি অংশকে উচ্ছেদ করার জন্য...
তবে মোদ্দা কথা কি এই বস্তিতে রুবেলদের মতো অনেকেই থাকতো যাদের সঙ্গে অপরাধের বিন্দুমাত্র সংস্পর্শ নেই...যারা আমাদের মতো মানুষরে কারণেই বস্তিবাসী...আজ রাতটাতো ওদের খোলা আকাশের নীচেই কাটাতে হবে...আজ রাতে শুধু নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ঘুমাবে সিরাজ কমাণ্ডার, আমি আর আপনারা...বাদ দেন এইসব ফালতু আলাপ...হুদাই এই শহরে রুবেল মিয়ারা পয়দা হয় কেনো??? যত্তোসব...