আকাশটা কালো ছিলো এক্কেবারে সকাল থেকেই...আর্মি স্টেডিয়ামের কাছের জটলাতে গাড়িটা ব্রেক কষতেই এক ফোঁটা-দুফোঁটা উইণ্ডশীল্ডে উঁকি দেয়া শুর করলো...মুহূর্তেই টিপটিপ থেকে হুড়মুড়....ভীষন বাতাস আর জলের ঝাপটায় ভেজাতে লাগলাে আশপাশের গাছপালা, রাস্তাঘাট, সবুজ মাঠ এমনকি গাড়িগুলােকেও...
জলের মাঝে বৃষ্টি পড়া দেখার চেয়ে বরাবরই আমার ঢের ভালো লাগে সবুজ ঘাসে বৃষ্টির কণা হারিয়ে যাওয়া দেখতে...হিমহিম ঠাণ্ডায় গদি অাঁটা গাড়ির জানলার ওপাশে বসে ঢুলুঢুলু চোখে তাই দেখছিলাম...এরই মাঝে চোখে পড়লো মেয়েটাকে...ফাঁকা ফুটপাত ধরে একাই হেঁটে যাচ্ছে...
ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে অফিসের দেরি হওয়া ঠেকাতে বোধহয় মেয়েটি আগেই বাস থেকে নেমে পড়েছিলো...এখন আর বাসে ফেরত যাওয়ারও উপায় নেই...আমি আগেও লক্ষ করেছি, নিতান্ত অনিচ্ছায় বৃষ্টিতে ভিজতে হলে আমাদের শরীরটা জড়সড় হয়ে খানিকটা কুঁজোভাব আসে...মেয়েটির ক্ষেত্রেও তাই...মাথাটা ওড়ানায় জড়িয়ে খুব ধীরে ধীরে সর্ন্তপনে হাঁটছে অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েটি...
অনিন্দ্য সুন্দরী বলছি কারন বরাবরই অদেখা মুখগুলাে অনিন্দ্য সুন্দর হয়...মেয়েটার চেহারাতো আমি দেখিনি...তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি এই মুখের কাছে ঐশ্বরিয়াও মুখ লুকাবে...ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা আমি...বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফাঁকা ফুটপাত ধরে মিলিয়ে গেলাে মেয়েটি...
মনে মনে ভাবলাম মেয়েটির নিশ্চয়ই এখন খুব রাগ হচ্ছে...মেয়েটি মনে মনে ভাবছে, এখনই কেনো বৃষ্টিটা নামলাে...আমি অফিসে ঢোকার পর বৃষ্টিটা এলে কী ক্ষতি হতো!!!ধুর এই বিচ্ছিরি বৃষ্টিতে আমার নতুন কেনা স্যান্ডেলটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেলাে...এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটির নিজের ভাগ্যের ওপর তীব্র অভিমান জন্মাবে...তার তখন মনে হতে থাকবে, বার বার শুধু আমার সঙ্গেই কেনাে এমন হয়...
আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী অনেকটা পথ...মেয়েটিকে আবার দেখলাম বনানীতে ঢোকার মুখটায়...এবার মেয়েটি জড়সড় কুঁজো হয়ে হাঁটছে না...ঝুম বৃষ্টিতে মাথা উঁচু করে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে সেই অদেখা সুন্দরী...আমার দেখা তীব্র অভিমানী মানুষরাই একমাত্র এভাবে হাঁটতে পারে...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪