somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্জনে -১ম পর্ব

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জায়গাটা আর যাই হোক , মনোরম না । মানুষ যে কেন এই জায়গায় এত প্রশংসা করে অর্পা তার কারন খুঁজে পাচ্ছে না । কেমন যেন একটা গুমট গম্ভীর পরিবেশ । মাহিনের অবশ্য ভালই লেগেছে । ওদের ছোট মেয়েটার বয়স কেবল আর আড়াই বছর । ওকে নিয়ে এই প্রথম ঘুরতে বেরনো । নিম্মি হবার পর থেকেই অর্পা মোটা হওয়া শুরু করেছে । আগে কত ছিমছাম ছিল মেয়েটা । নিম্মি হবার পর এই প্রথম ওরা ঘুরতে বেরিয়েছে । এর আগেও নিম্মিকে নিয়ে বেরিয়েছে কিন্তু সেটা ছিল জন্ম নেবার পর নিম্মির নানাবাড়ি ,দাদাবাড়ি দর্শন । এই প্রথম মেয়েকে নিয়ে বেরল মাহিন । অর্পা প্রথমে রাজি হয়নি একে তো ছোট বাচ্চা তার উপর দূরের পথ ।কতই না ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে ,উপরওয়ালা জানেন । মাহিনের ছোট বেলা থেকেই ঘোরাঘুরির খুব সখ কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তার সখ শুধু মনে এখন পর্যন্ত প্যাকটিক্যালি কখন কোথাও ঘুরতে যায় নি সে ।এমন কি সে কক্সবাজার পর্যন্ত যায়নি কখন ।তার ভ্রমনের দৌড় এইটুকুই । তাই বলে সে মোটেই ভীত নয় ।এখন সে ঘুরবে সারা বাংলাদেশ ঘুরবে । বউ আর মেয়েকে সাথে নিয়েই ঘুরবে । তার ফ্যামিলি হবে প্ররিব্রাজক ফ্যামিলি । আসলে ছাত্রাবস্থায় সে ঘুরতে পারেনি তার একটা কারন “টাকা পয়সা” ছিল না । এখন একটু হয়েছে কিন্তু সে সময় আর বন্ধু বান্ধব নেই ।
ভেবেছিল বিয়ে করে শুধু বউ কে নিয়েই ঘুরবে কিছুদিন কিন্তু টা আর হল কই তার আগেই নিম্মি এসে হাজির । প্রথম বাচ্চা তাই ওরা আর অন্য কিছু ভাবলনা । নিম্মি ল্যান্ড করল দুনিয়ায় । নিম্মি নামটা ওরই রাখা ।
যে জায়গায়টায় এসেছে সেটাকে আসলে কোন ট্র্যাভেল স্পর্ট বলা যায় না । এটা শুধু একটা বাংলো বাড়ি ।যেটা একটা নদির ধারে অবস্থিত । আসলে সে অর্পাকে বানিয়ে বানিয়ে বলেছিল যে জায়গা টা অনেক সুন্দর আর বিখ্যাত ।বাস্তবে এটা একটা পুরনো পাটকলের বাংলো । ইংরেজ সাহেব বানিয়ে ছিল । সে বহুকাল আগের কথা । মাঝে পাকিস্থান আমল পর্যন্ত পাটকল চালু ছিল ।স্বাধীনতার পর বন্ধ হয়ে গেছিল । বাংলোটা তে সাহেবি আনার ভাব আছে দেখতে অনেকটা ব্রিটিশ বাড়ি গুলোর মতো ।সামনে গার্ডেন পেছনেও । আর বাংলোর পাশেই নদী ,সেখানে একটা বাধানো ঘাটও আছে । এই অঞ্চলে একটা মিশনারি স্কুল ও আছে । আর একটা মিশন ও আছে । এই বাংলোর খোঁজ পায় মাহিন তানভীর ভাই এর কাছ থেকে । ভানভির ভাই এর বিশাল ঘুরাঘুরির বাতিক আছে । কিন্তু তার ভ্রমনের ধরন একটু আলাদা সে সেই সব জায়গায় ঘুরে যে সব জায়গায় সাধারন ভ্রমনপিয়াসুরা যায় না । বলতে গেলে নিজেই খুঁজে খুঁজে ঘুরাঘুরির জায়গা খুঁজে বার করে ।তো মাহিন যখন তাকে বলল একটা আনকোরা জায়গায় খোঁজ দিতে,তানভীর সাহেব এই জায়গার নাম বললেন । আর জায়গা সম্মন্ধে যা বর্ণনা দিলেন তাতে মাহিন খুশি । তারপর একদিন সময় বের করে বউ বাচ্চা সহ সে হাজির । অঞ্চলের নাম হচ্ছে “রায়মঙ্গল”
ভেতরের দিকের এলাকা পাট কলের সুবাদে অনেক আগেই বিদ্যুৎ এসেছে ।কিন্তু আশানুরুপ উন্নতি নাই । সবই ছাড়া ছাড়া । কল বন্ধ হয়ে যাবার পর অবস্থা আরও করুন । এখন ব্যবসা বাণিজ্য আর কৃষিকাজই প্রধান ।
মাহিনরা এই জায়গায় আসতে আসতে সন্ধায় পৌঁছেছে । বাংলোর পরিবেশ ভাল । কেয়ারটেকার পাশেই একটা ছোট ঘরে থাকে । কাজের লোকও নাকি আছে ,কেয়ারটেকার জানালো ।মানে এখানে লোক জনের আশা যাওয়া আছে ।
“কেমন লোক আসে এখানে কেয়ারটেকার সাহেব ??”
“ভালই ,এক সপ্তাহ আগেই এক স্যার আসছিলেন ফ্যামিলি নিয়া । তিন দিন ছিলেন ।”
“হুম ।আপনার নাম কি কেরার টেকার সাহেব ??”
“আব্দুল মজিদ ,স্যার ”
“আপনে আমারে মজিদ কইরা ডাইকেন ।”
“না না টা কিভাবে হয় ।আপনি আমার বড় । যান মজিদ ভাই বলে ডাকব ।”
“মেহারবানি স্যার ।”
তো মজিদ মিয়া এই অঞ্চলের বিশেষত্ব কি ??
তেমন কোন বিশেষত্ব নাই । আগে পাটকল ছিল সাহেব দের আনাগোনা ছিল এখন নাই ।তবে অত্র এলাকায় একটা বিখ্যাত শাড়ির হাট আছে ।প্রত্যেক শনিবার সে হাট বসে বিভিন্ন এলাকার পাইকার সে হাটে আসে ।পাইকারি দরে শাড়ি কিনি লই যায় । একসময় কলকাতা থেকে বড় বড় বাবুরাও আসিতেন ।এখন আর সেই দিন নাই । অত্র এলাকার জমিদার ছিলেন নবকিশোর রায় ।তিনি অতি অল্প বয়সেই মারা যান ।তারপর জমিদার হন তার ভাই রাধাকিশোর রায় ।তিনিও বেশি দিন জমিদারি ভোগ পারেন নাই ।তার মৃত্যুর পর এই সব কিছুর দেখাশোনার ভার পড়ে রানিমা কনিকা দেবীর উপর ।কিন্তু তিনিও বেশি দিন বাঁচেন না । তার মৃত্যুর পর সব বেহাত হয়ে যায় ।ঐ বংশের তেমন কোন উত্তরাধিরাকি ছিল না ।
রানি মা মৃত্যু ছিল অস্বাভাবিক ।তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারনা করা হয় ।তার লাশ নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় । তার মৃত্যুর পর জমিদার বাড়িটিও পরিত্যাক্ত হয়ে যায় । বহুদিন তা ঐ ভাবে পড়ে থাকে ।পরে সরকার বাড়িটি রিকুইজিশন করে ।তবে রিকুইজিশন করেই খালাস ।আজ পর্যন্ত ওখানে কিছু হয়নি । যেমন ছিল তেমনই পড়ে আছে । এখন কিছু কুলি মজুর থাকে ওখানে । ঐ বাড়ির ভিতরে একটা পুকর আছে ।কিন্তু খালি পুকুর বললে ভুল হবে ।পুকুরের তলা পর্যন্ত পাকা করা । রানিমা নাকি ঐ পুকুরে পূর্ণিমার রাতে স্নান করতেন । উনি নাকি তন্ত মন্তের জব ও করতেন ।সত্য কিনা জানিনা তবে লোক মুখে খুব প্রচলিত ।
অনেক্ষন নিরবে শুনল মাহিন । ইন্টাররেসটিং । সন্ধ্যা তো হয়ে গেলো রাতে খাবারে ইন্তেজাম কি মজিদ ভাই । “আপনারা যা খাবেন ”
“মুরগি হবে ?? ” হবে । তবে এই নিন বলে মাহিন মজিদ মিয়া কে কিছু টাকা দিলেন বাজার করার জন্য আর বললেন কাজের মহিলাটিকে আজ থেকেই সব রান্না বান্না করার দায়িত্ব দিন আমরা দিন চার থাকব । আর কাল সকালের নাস্তার ও ব্যাবস্থা কইরেন । আর নাস্তায় ডিম যেন থাকে ।
“ঠিক আছে স্যার ” বলে মজিদ উঠে চলে গেলো ”

প্রকাণ্ড একটা বাড়ি ,সামনে বিশাল বড় একটা গেট । মস্ত বড় একটা তালা ঝুলছে সেটিতে । বাড়িটাকে দেখে পুরনো দিনের ক্যাসেল গুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে । যেখানে ডাইনি আর ভাম্পায়াররা থাকত ।
কিন্তু সামনের গেটে তালা ঝুললে মানুষ ভেতরে থাকে কিভাবে ??? এর সমাধান হল আর একটু সামনে যেতেই । দেখা গেলো সীমানা প্রাচীরের একটা বিরাট অংশ ভাঙ্গা মানে এখানকার বর্তমান নিবাসীরা এখানটা দিয়েই যাতায়াত করে । জায়গাটা আরেকটু কালটিভেট করার জন্য মাহিন ভেতরে ঢুকল । বাড়ির সামনের অংশটা প্রায় পুরোটাই বড় বড় ঘাসে ঢাকা । একপাশ দিয়ে দুহাত রাস্তার চিহ্ন হয়ে গিয়েছে মানুষ চলতে চলতে । ভেতরে ঢুকেই মাহিনের চোখে প্রথমে যা পরল টা হল একটা কিশোরী মেয়ে । ওকে দেখে কেমন স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে ,দেখে মনে হচ্ছে এমন কাউকে সে আশা করেনি ।মাহিন ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল তারপর মাথায় টুপিটা খুলে বলতে লাগল ,আমি এখানে বেড়াতে এসেছি ,শুনেছিলাম এখানে একটি জমিদার বাড়ি আছে তাই দেখতে এলাম ।তোমার নাম কি ?? কথা গুলো শুনে মেয়েটি দৌড়ে চলে গেলো ।সেদিনকার মতো মাহিন ফিরে এল । মাহিন ফিরতেই অর্পা ওকে জিজ্ঞেস করল এত্ত দেরি হল কেন ? মাহিন বলল রহস্যের গন্ধ পেয়েছি ...জানেমান ,সত্যান্বেষণ করতে হবে ।।
চাঁদের আলোর যে এত মায়া মাহিন তা আগে টের পায়নি । আজ পেল । মনে হল অর্পাকে নিয়ে সে যেন ভেসে চলছে নিবর স্বর্গের পানে । ভাগ্যিস রাতের ডিনারটা শেষ করে নদীর ঘাটে বসেছিল । এই পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর রুপটা যেন সে দেখল আজ । সব কিছুতেই এক অদ্ভুদ ভাল লাগা কাজ করছে ।আজ আর একবার অর্পা কে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে “অর্পা আমি তোমায় খুব ভালবাসি”
অর্পাও কি তাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে । আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে ঈশ্বর মানুষ খুব একটা খারাপ রাখেন না ,অনেক ভালওবাসেন । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ।


৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×