somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন-বাড়ি’ র নকশাখানি

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিন। আসাদের যখন ঘুম ভাংল তখন অনেকখানি বেলা হয়ে গিয়েছে। প্রখর রোদ হলের বারান্দা পেরিয়ে আসাদের রুমের খোলা দরজা দিয়ে ঢূকে পড়েছে। বালিশ থেকে মাথা আলগা করাতে আসাদের চোখটা আপনাতেই মেঝের দিকে চলে গেল।
মেঝেতে বিছিয়ে রাখা সুন্দর একটা বাড়ির মডেল। বাড়ির মডেলে বাড়ির সাথে লাগোয়া বারান্দা আছে। উঠোন আছে, উঠোনে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট আছে। একপাশে পুকুর আছে। ছোট্ট বাগান আছে। চারদিকে ঘেরা দেয়াল। বিশাল লোহার ফটক। পুকুরের ঘাট আর লোহার ফটক ছাড়া মডেলের কাজ পুরাই শেষ।
বাড়ির পুরা ডিজাইনটাই আসাদ রুমা কে মাথায় রেখে করেছে! একেকটা অংশ শেষ করেছে আর রুমাকে দেখিয়ে বলেছে- এখানে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট হবে হ্যাঁ, শীতকালে কোর্টে শুধু তুমি আর আমি ব্যাডমিন্টন খেলব। আর অই যে পুকুরের অই পাশে ঘাসে ঢাকা যায়গাটা ওটা অন্য কাজে ব্যাবহার হবে। আকাশ যখন পরিস্কার থাকবে তখন আমরা টেলিস্কোপ নিয়ে ওখানে বসে নক্ষত্র দেখব! আর আমাদের ঘরের সামনে যে বারান্দা ওখানে দোলনা থাকবে। গভীর রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে আমরা দোলনায় দোল খাব, হ্যাঁ?
রুমা কোনটায় মাথা নেড়ে সায় দিয়েছে।কোনটায় প্রবল ভাবে না না করেছে। যেগুলোতে না করেছে সেগুলোতে আসাদের নিজের কল্পনাকে পাল্টাতে হয়েছে। ডিজাইন নতুন করে করতে হয়েছে। সেসব নতুন ডিজাইন আসাদ যখন রুমাকে দেখিয়েছে তখন যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আসাদের চোখে অদ্ভুদ একটা বিস্ময়! রুমা ধীরে ধীরে আসাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে। সেই চোখে টলমল করে উঠেছে অপার্থিব একটা স্বপ্ন। এবং আসাদ এই পৃথিবীতে থেকেই কল্পনা করতে পেরেছে সেই অপার্থিব স্বপ্নের রূপ!
সমস্যাটা হয়েছিল শুধু পুকুর ঘাট নিয়ে। আসাদ এই পর্যন্ত মোট নয় বার ঘাটের ডিজাইন করেছে। সবগুলোই রুমা না করে দিয়েছে! আসাদের অতি সৃষ্টিশীল মাথাতেও আর নতুন কিছু আসেনি!
সমস্যাটাত অবশ্য হঠাৎ করেই সমাধান হয়ে গেছে!পুকুর ঘাট নিয়ে আসাদের আর কোনদিন না ভাবলেও চলবে। রুমা গতকাল বিকেলে বলে দিয়েছে আসাদের সাথে সে আর কোন সম্পর্ক রাখবেনা। যাস্ট মজা করতে গিয়ে এরকম একটা ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসবে আসাদ কোনদিন কল্পনাও করেনি।
গতকাল বিকেলে সেশনাল শেষ করে রুমা সহ ক্যাফেটেরিয়াতে চা খাচ্ছিল। চায়ে চুমুক দিয়ে মাত্র প্রথম সিগারেট টা ধরিয়েছে আসাদ।
রুমা বলল,ইসস সিগারেট খাওয়া টা ত শুধু শুধু টাকার অপচয়। টাকার অপচয় কিন্তু গোনাহ!
আচ্ছা আমি যদি কোন গোনাহ না করি তাইলে কি হবে?, সিগারেটে গভীর টান দিয়ে আসাদ জিজ্ঞেস করল।
তাইলে তুমি বেহেস্তে যাবে! রুমা ত্বরিত জবাব দিল!
বেহেশতে গেলে আমার সাথে ত সত্তর টা হুরপরি থাকবে। তোমার খারাপ লাগবে না?
একথা বলার সাথে সাথে রুমার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আসাদ দেখল তীব্র অভিমানে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছে রুমা। আসাদ তাড়াতাড়ি উঠে রুমার হাত ধরল! রুমা প্রবল ভাবে ছাড়িয়ে নিল আসাদের হাত। স্পষ্ট স্বরে বলল- তুমি তোমার সত্তর টা হুরপরি নিয়ে থাক! আমার সাথে তোমার আর কোন সম্পর্ক নাই।
আসাদ অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল। এটা যাস্ট একটা ফান! কিন্তু রুমা কিছুতেই বুঝল না। মেঘ কাল করে আসা সন্ধ্যার মুখে একা একা কাঁদতে কাঁদতে রিকশায় উঠল রুমা। রুমা কে নিয়ে একটা নিষ্ঠুর রিকশা পলাশী মোড় পার হওয়া পর্যন্ত আসাদ শুধু ভ্যাবলার মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল।
দুপুরে ভাত খেয়ে আসাদ খামাকাই একা একা ক্যাম্পাসে গেল। নির্জন দুপুরে খাঁ খাঁ করছে ক্রিকেট খেলার ফাঁকা জায়গাটা। সেটা পেরিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এসে একটা সিগারেট ধরাল আসাদ। সামনের দিকে তাকিয়ে আসাদের হঠাৎ নিজেকে খুব অসহায় মনে হল!
জীবনটাও একটা ডিজাইন। সেই ডিজাইন ও আগে কল্পনায় আসতে হয়। আসাদের কল্পনায় তার জীবনের যে ডিজাইন সেটা ত পুরাই রুমা কে নিয়ে! এখন আসাদ কি করবে? সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। আসাদ বুয়েট পাশ করলেই ওরা বিয়ে করবে। রুমার আরো এক বছর লাগবে। এই একবছরে বিদেশ যাবার সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলবে। রুমা পাশ করলেই দুজনে উড়াল দেবে স্বপ্নের দেশে! দু’জনে মিলে চাকরি করে টাকা পয়সা জমিয়ে স্বপ্নের দেশে বানাবে তাদের স্বপ্নের বাড়ি।
খামাকাই বেকুবের মত ‘হুরপরি রসিকতা’ করতে গিয়ে সবকিছু পণ্ড হয়ে গিয়েছে। এমন নয় যে আসাদ ধর্ম বিষয়ে মহা পন্ডিত! সে বলতে গেলে এ বিষয়ে কিছুই জানেনা। হুরপরি বিষয় টা কি প্রতীকী না অন্যকিছু তাও জানেনা আসাদ! ফট করে আন্দাজে রসিকতা করে এখন ফেঁসে গেছে! অনেকটা নিজেকে উদ্যেশ্য করেই সিঁড়ির গোড়ায় থু করে থু থু ফেলল আসাদ!
হঠাৎ করেই আসাদের মাথাটা টলে উঠে!সে ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দায় দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। ক্লান্তি তে আসাদের চোখ বুঁজে আসে । চোখ বুঁজতে বুঁজতে আসাদের মনে হয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনের ক্রিকেট খেলার জায়গাটা ধীরে ধীরে কাত হয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে!
আসাদ একটা ঘোরের মধ্যে আছে। তার মনে হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দাটা তাকে সহ নিয়ে উড়তে উড়তে একবার হলের দিকে, আরেকবার বুয়েট মাঠের দিকে, আরেকবার পলাশী মোড়ের দিকে যাচ্ছে!মাথার ভেতরে মনে হচ্ছে হা হা শব্দ হচ্ছে।আসাদ এরকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামল। অর্ধচেতন ঘোরের মধ্যে আসাদের হঠাৎ মনে হল তার পাশে কেউ একজন বসে আছে! যে বসে আছে তার শরীরের ছোঁয়া নরম। তার সবটুকু জুড়ে শুধুই ভালোবাসার ঘ্রান।
আসাদ চোখ মেলল। পাশে উপবিষ্ট রুমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে!
তোমার শরীর খারাপ করেছে। গায়ে আকাশ পাতাল জ্বর! তুমি আমাদের বাসায় চলে আসতে পারলা না! তুমি এত নিষ্ঠুর কেন?, কান্নার গমকে রুমার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল।
রুমার কোলে মাথা রাখল আসাদ। রুমার টলটলে চোখের দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল- পুকুর ঘাটের ডিজাইন নিয়ে আর সমস্যা নাই রুমা। আমাদের স্বপ্নের বাড়ির পুকুরটা যে তোমার জল টল টল চোখ সেটা এতদিন বুঝতে পারি নাই!

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×