somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি মানসিক ভাবে সুস্থ আছেন ত?

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোনের এ প্রান্তে মিসেস রাহনুমা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তাঁর ছেলে নাবিলের সাইকিয়াট্রিক টেস্ট এর রিপোর্ট দিয়েছে। টেস্টে নাবিল মানসিক ভাবে পুরোপুরি অসুস্থ, আনফিট প্রমাণিত হয়েছে। ফোনের ও প্রান্তে হাসনাত সাহেব অসম্ভব ভারী গলায় রাহনুমা কে সান্ত্বনাসূচক কিছু একটা বলতে গেলেন। কিন্তু কিছুই বলতে পারলেন না। তাঁর বুক চিরে একটা গভীর দীর্ঘঃশ্বাস বের হয়ে আসল। নাবিল তাঁর একমাত্র সন্তান। নাবিলের জীবন ব্যর্থ হওয়া মানে ছেলেমেয়ে নিয়ে আর দশজন বাবা মা র অহংকারের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হওয়া!
অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে রিপোর্ট টা চোখের সামনে আবার মেলে ধরলেন হাসনাত সাহেব। প্রত্যেক টা লাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আবারো পড়লেন-

মানসিক পরীক্ষণ রিপোর্ট(চুড়ান্ত)
নামঃ নাবিল হাসনাত
বয়সঃ ১৮
সেক্সঃ মেইল
সনাক্তকৃত মানসিক সমস্যা সমূহঃ-
১। জেনে শুনে অন্যায় করার সময় অপরাধবোধে ভুগে।
২।সব শ্রেণীর মানুষ কে মানুষ মনে করে।
৩। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যত টুকু প্রয়োজন ততটুকু পেলেই সুখী হয়ে যায়।
৪।অন্য মানুষের নামে কুৎসা রটানো উপভোগ করে না।
৫। তার মধ্যে পরশ্রী কাতরতা একেবারেই অনুপস্থিত।
বিশেষজ্ঞ মতঃ
নাবিল যে সমাজে বাস করে সে সমাজে এসব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের কোন বন্ধু থাকে না। তার সঙ্গ কেউ উপভোগ করে না এবং সেও কারো সঙ্গ উপভোগ করে না। কাজেই এ সমাজের চরিত্র অনুযায়ী এ সমাজে তার জীবন ব্যর্থ হতে বাধ্য। সমাজ কে কেউ এড়িয়ে চলতে পারে না এবং ব্যর্থ হওয়া প্রকৃতির নিয়ম নয়! কাজেই এই বৈশিষ্ট্য সমূহ ধারণ কারী যুবক নাবিল হাসনাত কে এই সমাজের সাপেক্ষে মানসিক ভাবে চূড়ান্ত রকম অসুস্থ এবং আনফিট বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ডঃ ধুরন্ধর চক্রবর্তি
পিএইচডি( আত্নরক্ষা!)

বিঃদ্রঃ রোগীর এখনো বয়স কম। উপযুক্ত মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে রোগী কে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব!

হাসনাত সাহেব বাসায় ফিরতে ফিরতেই রাহনুমা নিজেকে মানসিক ভাবে গুছিয়ে ফেলেছেন। একটু আগেই তিনি মোবাইলে রত্না ভাবীর সাথে কথা বলেছেন। রত্না ভাবী নাবিল কে ডঃ সাঙ্ঘাতিক সেনের কাছে নিয়ে যেতে বলেছেন। রত্না ভাবী তাঁর বাসার অ্যালসেশিয়ান কুকুরের মাথার দিব্যি দিয়ে বলেছেন- ডঃ সাঙ্ঘাতিক সেনের কাউন্সেলিং পেলে নাবিল এক সপ্তার মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। কথায় কথায় একেবারে নিজের ঘরের বাস্তব উদাহরণ দিয়েছেন রত্না ভাবী।
তাঁর ছেলে প্রলয় স্কুলে যাবার সময় দেখল এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা রং সাইডে গিয়ে একটা প্রাইভেট কারের ধাক্কা খেয়েছে। প্রাইভেট কারের যুবক ছেলে বেরিয়ে এসে বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা কে ‘শুওরের বাচ্চা’ বলে গালি দিল। প্রলয় তার বাবা কে জিজ্ঞেস করল- বাবা রিকশাওয়ালা ত অই ছেলেটার বাবার বয়সী। বাবার বয়সী লোক কে শুওরের বাচ্চা গালি কিভাবে দেয়?
বাবা শান্ত স্বরে বললেন- দেখ, রিকশাওয়ালা ত অন্যায় করেছে। সে রং সাইডে গিয়েছে।
প্রলয় বাবার চেয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বাবা, প্রাইভেট কার যদি রং সাইডে গিয়ে রিকশা কে আঘাত করত আর রিকশাওয়ালা ছেলেটাকে শুওরের বাচ্চা বলে গালি দিত তাহলে কি হত?
প্রলয়ের বাবা শিওরে উঠলেন। এই ছেলে প্রাইভেট কারে চড়া একজন যুবক আর একজন রিকশাওয়ালা কে সমান ভাবছে। এর ভবিষ্যৎ ত অন্ধকার!
তিনি সেদিন বিকেলেই প্রলয় কে ডঃ সাঙ্ঘাতিক সেনের চেম্বারে নিয়ে গেলেন। ডঃ সাঙ্ঘাতিক সেন প্রলয় কে সাত দিনের স্ক্যাজুয়েলে পর পর তিন সেশন কাউন্সেলিং করলেন। তিনি প্রলয়ের মাথায় পরিষ্কার ভাবে ঢুকিয়ে দিলেন- পৃথিবীর নিয়ম হচ্ছে শুধু নিজের এবং নিজের বংশ বদ দের কথা চিন্তা করা। নিজের এবং নিজের বংশ বদ দের উন্নতি চাইলে অন্য মানুষ কে নিজের স্বার্থ পূরণের উপকরণ ছাড়া কিছু ভাবা যাবে না এবং নিজেরা ছাড়া বাকী সবাই কে নিজেদের চাকর ভাবতে হবে।
শেষ কাউন্সেলিং শেষে ফেরার পথে প্রলয় এমন একটা ঘটনা ঘটাল যেটা প্রলয়ের বাবা তাঁর অফিসে সবাই কে গর্ব করে বলে বেড়িয়েছেন অনেক বার!
ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে একজন মুচি জুতো পালিশ করতেছিল। প্রলয় বলল- বাবা গাড়ি থামাও। আমি জুতো পালিশ করাব।
প্রলয়ের বাবা গাড়ি থামিয়ে ছেলেকে নামতে দিয়ে নিজে গাড়ির ভেতর বসে ছেলের কান্ড দেখতে লাগলেন।
ছেলে জুতো সুদ্ধ পা মুচির হ্যান্ডেলের উপর রেখে বলল- দে! পালিশ কইরা দে!!
মুচি আড়চোখে রুপালী রঙের গাড়ি এবং ছেলেটার উদ্ধত চেহারার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল- ভাইয়া পা নামান। এই হ্যান্ডেল টা আমার রিজিক!
প্রলয় সাথে সাথে খেঁকিয়ে উঠল! পকেট থেকে দুইটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে মুচির মুখের উপর ছুড়ে মারতে মারতে বলল- খানকির পোলা তুই আমারে রিজিক চিনাস? এই নে তোর এক মাসের রিজিক দিয়ে দিলাম!! এখন তুই কি আমার জুতা পালিশ করবি নাকি আমি জুতার তলা দিয়ে তোর মুখ পালিশ করব??
রত্না ভাবীর মুখে শোনা প্রলয়ের কাপুরুষ থেকে বীর পুরুষে পরিণত হবার গল্পের দৃশ্য গুলো কল্পনা করতে করতে মিসেস রাহনুমার মনের ভয় একেবারেই কেটে গেল। তিনি তখন তখনি ফোন করে ডঃ সাঙ্ঘাতিক সেনের সিরিয়াল নিয়ে নিলেন!

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:১০
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×