গোলাম আজম মারা গেছেন। এই লোক মুক্তিযুদ্ধের সময় খুব স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ ভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় যাতে না হয় তার জন্য এই লোক সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন।এই বিষয়ে তার আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি ছিলনা।
দেশ স্বাধীন হবার পর আরো বেয়াল্লিশ বছরের বেশি এই লোক বেঁচে ছিলেন। এই দীর্ঘ বেঁচে থাকার সময় তিনি এই স্বাধীন দেশের রাজধানীর একেবারে প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করেছেন। মা কে অস্বীকার করে মায়ের কোলে বসে বেয়াল্লিশ বছর দিব্যি মায়ের দুধ পান করে গেছে এই কুলাঙ্গার শিশু।
‘দেশ’ নিয়ে যাদের স্পষ্ট ভালোবাসার অনুভূতি আছে তারা আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুটা হলেও নির্ভার বোধ করেছেন। এই দেশের ভ্রুন কে মাতৃগর্ভেই যে লোক হত্যা করতে চেয়েছিল সে লোক টার একেবারে প্রত্যক্ষ ভার অন্তত এই স্বাধীন দেশ কে আজ থেকে আর বইতে হবে না। যে সুস্পষ্ট লজ্জা এই স্বাধীন দেশের আকাশ কে দীর্ঘ যূগ ভারী এবং স্তব্ধ করে রেখেছিল সেই আকাশে আজ কিছুটা হলেও পুষ্পরেণুর উড়াউড়ি।
গোলাম আজম এবং বাংলাদেশ, এই দুইটা জিনিষ কে একসাথে ভালোবাসা যায় না। কাজেই যারা গোলাম আজমের মৃত্যু তে শোক অথবা তার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করছেন তারা বাংলাদেশ কে ভালোবাসেন না- এটা পিথাগোরাসের উপপাদ্যের( ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ সমান সমান ভূমির বর্গ এবং লম্বের বর্গের যোগফল) মতই সত্য। কেউ যদি বাংলাদেশ কে ভালোবাসেন তাহলে গোলাম আজমের ব্যাপারে তার মানসিক অবস্থান একাত্তরে এবং আজীবন বাংলাদেশের ব্যাপারে গোলাম আজমের যে মানসিক অবস্থান ছিল সে রকম ই হবে।
একই সাথে আমি এটাও স্পষ্ট বলতে চাই, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে জাতি কে পঙ্গু করেন, টাকার বিনিময়ে ভুল বিল্ডিং, ভুল লঞ্চের নকশায় অনুমোদন দেবার পর নাকের ডগায় মাখা অবৈধ পয়সার শর্ষের তেলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বলেন- ‘আমি দেশ কে ভালোবাসি এবং রাজাকার দের ঘৃণা করি’ তাদের হৃদয়ে দেশের জন্য ভালোবাসার কণামাত্র ও নেই। রাজাকার রা তাদের হীন উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ধর্ম কে ব্যবহার করে। আর এই তথাকথিত লোক দেখানো দেশপ্রেমিক রা তাদের হীন উদ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ‘আমি রাজাকার ঘৃণা করি কাজেই দেশ কে ভালোবাসি!’ এই স্লোগান টা কে ব্যবহার করে।