somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন নিয়ে

০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বপ্ন আমরা কেন দেখি? স্বপ্ন জিনিষ টাই বা কি? এসব নিয়ে আমি প্রায় ই ভাবি।

শৈশব থেকে আগ্রহ থাকলেও স্বপ্ন বিষয়ে লিখা ‘সোলেমানী খাবনামা ও ফালনামা’ ছাড়া আর কোন বই আমার হাতের নাগালে আসে নি। যত দূর মনে পড়ে এই বইয়ে কেবল মাত্র ‘ স্বপ্নে কি দেখিলে দেখলে কি ঘটিবে( গাছে ফল ধরার সপ্ন দেখলে সংসারে উন্নতি হবে- এই ধরনের)’ টাইপের বর্ননা ছিল। বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল না। কাজেই এই বই পড়ে আমি বিশেষ উপকৃত হই নাই। পরবর্তীতেও স্বপ্ন বিষয়ে সেরকম ব্যাখ্যামূলক কোন বই না পাওয়ায় আমি নিজেই স্বপ্ন নিয়ে এক ধরনের মানসিক গবেষণা শুরু করি এবং স্বপ্ন বিষয়ে আমার নিজস্ব একটা ধারণা তৈরি হয়।

আমি বুঝতে পারি একজন মানুষ কি স্বপ্ন দেখবে সেটা তার স্মৃতি, মানসিক সিদ্ধান্ত এবং যেই সময়ে স্বপ্ন দেখছে সেই সময়কার মনোদৈহিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। এই সিদ্ধান্তে আসার আগে আমি আমার নিজের দেখা কিছু স্বপ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।

স্বপ্ন-১
আজ থেকে এগার বছর আগের কথা। আব্বার মৃত্যু’র দূদিন পরের ঘটনা। বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্ট নিয়ে দুপুর বেলা শুয়ে আছি। দেখি আমাদের পুরোনো বেড়ার ঘরে আব্বা এসেছেন। আব্বার গায়ে আব্বার সেই বিখ্যাত ৮০x ৮০ টিস্যু হাফ হাতা গেঞ্জি। আব্বা বিছানায় শোয়া। আমি দুহাতে আব্বাকে ধরে আব্বার মুখের উপর ঝুঁকে আছি। সময় টা সন্ধ্যা এবং আব্বার মুখ হাসি হাসি। আমি আব্বা কে জিজ্ঞেস করলাম-

আব্বা কেমনে আসতে দিল? দেখি, অই পারের খবর কিছু বলেন!

আব্বা শুধু হাসে। কোন জবাব দেয় না।

আব্বা, দেখি অই পারের খবর কিছু বলেন! আমি আবার জিজ্ঞেস করি।

আব্বা এবার শব্দ করে হাসে। শিশুর সরল হাসি। কিন্তু প্রশ্নের জবাব নাই!

ঘুম ভাঙ্গার পর আমি বুঝতে পারি আমি আসলে আমার স্মৃতি এবং মানসিক সিদ্ধান্তের বাইরে কিছুই দেখি নি। ‘অই পার’ বিষয়ক কোন তথ্য আমার মস্তিষ্কে জমা নেই। কাজেই আমার মস্তিষ্ক আমার স্বপ্নে দেখা আব্বা’র মুখে অই পার বিষয়ক প্রশ্নের জবাব তৈরি করতে পারে নি।

আমার আব্বা আমার দেখা নিস্পাপ তম মানুষ। কাজেই আমার আব্বার বিষয়ে আমার মানসিক সিদ্ধান্ত ছিল- অই পারে গিয়ে আব্বা সুখে শান্তি তে থাকবেন। এজন্যই স্বপ্নে আবার মুখ দেখলাম হাসি হাসি।

স্বপ্ন-২
তখন আমি প্রকৌশল পেশায় একেবারে নতুন। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাঁঠালি নামের এক গ্রামে গেছি মেশিন ইন্সটল করতে। পিএলসি,মটর, উইঞ্চ, কন্ট্রোল প্যানেল সব নিয়ে এলাহি কারবার! ভয়ে হাত পা পেটের ভেতর ঢুকে যাবার অবস্থা। অথচ যে কোম্পানী তে মেশিন ইন্সটল করতে গেছি তাদের সাথে মিটিং এ দূঃসাহসের সাথে বলে ফেলেছি- মেশিন ইন্সটল হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ! কোন চিন্তা করবেন না।

ম্যানুয়েল হাতে নিয়ে আমি মেশিন পার্টসের পাশে পাশে হাটি আর সিগারেট খাই। ওখান কার টেকনিশিয়ান রা মাঝে মাঝেই এসে আমাকে এটা ওটা প্রশ্ন করে লজ্জায় ফেলে দেয়। আমি কিছু জানিনা বুঝতে পেরে ‘স্যার’ বাদ দিয়ে ‘বস’ ডাকা শুরু করে এবং প্যাকেট খুলে ক্যাপস্টেন সিগারেট অফার করে! আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে ভাবি, কালকে ফজরের আজানের সময় কেউ না দেখে মত করে রেস্ট হাউজ থেকে বেরিয়ে পালিয়ে সোজা ঢাকা চলে যাব! সেই সময় গল্প বই এ পড়া মাসুদ রানা, ওয়াইল্ড বিল হিকক, শার্লক হোমস আমার সামনে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমি কাপুরুষ হতে পারি না!

একদিন রাতে স্বপ্নে দেখলাম। আমি মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চারপাশে ওখান কার ই অনেক টেকনিশিয়ান-মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল। ওরা সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে যে যার মত কাজ করছে। কিছুটা দূরে হাসি মূখে দাঁড়িয়ে আছেন দাড়িওয়ালা সৌম্য চেহারার সিইও সাহেব। একসময় আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে গম গম আওয়াজ তুলে মেশিন চালু হয়ে গেল। ঘুম ভেঙ্গে আমার ঘাম ছুটে গেল। স্বপ্নের অর্থ আমার কাছে পরিস্কার!

আমার অবচেতন মন তার প্রত্যেক টা পর্যবেক্ষন কে কাজে লাগিয়ে আমাকে সফল করার জন্য যে সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে তারই নিঃখুঁত চলচ্চিত্র রূপ ধরা পড়েছে স্বপ্নে।

সিইউ সাহেব বুয়েট পাশ শুনে শুরু থেকেই আমাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন- ভাল ছাত্র রা যে কোন কাজে শেষ পর্যন্ত সফল হয় ই হয়।

স্টোর রুমে ঘুরতে ঘুরতে যেসব ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল টেকনিশিয়ানের সাথে আমার দেখা হয়েছে তারা প্রত্যেকে একেক টা কাজে বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।

কাজেই আমার প্রতি সিইউ সাহেবের ইতিবাচক মনোভাব কে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকটা লোকের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে যদি সমন্বয় করা যায়!!
আমার মনে হল আমি পরীক্ষার খাতায় এমন একটি সরল অঙ্ক করছি যেটার প্রতিটা ধাপ কিভাবে করতে হয় আমি জানি। আমি দ্রুত মেশিন সাপ্লায়ারের টেকনিক্যাল লোকের সাথে যোগাযোগ করে পিএলসি সেটিং এবং কন্ট্রোল প্যানেলের দরকারী এবং সহজতম ডায়াগ্রাম পাঠিয়ে দিতে বললাম। ফোনে ওদের সাথে কথা বললাম। কোন ধরনের চালাকি না করে সিইউ সাহেব কে সরল মনে বলে ফেললাম- সবার অভিজ্ঞতা জোড়া দিতে পারলে এই মেশিন সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বসিয়ে দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব। সাপ্লায়ার রা সর্বাত্নক সহযোগিতা দেবে। প্রয়োজন লাগলে আসবে! কিন্তু আগে আমরা নিজেরা চেষ্টা করি না কেন?

আমার কথার আবেগ সিইউ সাহেব কে স্পর্শ করল। আমার কথার অর্থ তাঁর কাছে ধরা পড়ল এই ভাবে- ভাল ছাত্রের ব্রেন কাজ করা শুরু করেছে! এখন তার কথামত চললেই সাফল্য সুনিশ্চিত। তিনি আমাকে পূর্ন সহযোগিতা করলেন। মেশিন চালু হল!

আমার মনে দাগ কাটা এরকম স্বপ্ন আরো অনেক আছে। সবগুলো থেকে একটাই সিদ্ধান্ত- আমার স্বপ্ন আমার মস্তিষ্কের ই ক্রিয়া। এর সাথে অন্য কোন জগতের কোন সম্পর্ক নাই। মানুষের অবচেতন মন আবেগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য নির্ভর। তথ্যের ভিত্তিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ সম্ভাবনা যাচাই করে ফলাফলের নিঃখুত যে ‘মাইক্রো শর্ট ফিল্ম’ অবচেতন মন তৈরি করে সেটাই স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখার পর স্বপ্নের অর্থ কে আমরা যুক্তি দিয়ে বিচার না করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আবেগ দিয়ে বেশির ভাগ সময় বিচার করি। এজন্য ই স্বপ্নের সঠিক অর্থ আমাদের কাছে ধরা পড়েনা। সঠিক অর্থ ধরতে পারি না বলে স্বপ্ন দিনে দিনে আমাদের কাছে গুরুত্বহীন বিষয়ে পরিনত হচ্ছে(যারা স্বপ্নের উপর পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলে প্রকৃতি সম্ভবত তাদের কে স্বপ্ন দেখানো ও বন্ধ করে দেয়!) নইলে অনেক বিষয়ে গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার আগে মানুষ হয়ত শেষ রাতে দেখা সপ্ন টার উপর নির্ভর করত!

৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×