নয়মাস দশ দিন। প্রকৃতি পরম যত্নে শিশুকে এই পৃথিবীর আলো বাতাস তাপমাত্রা সহ্য করার উপযুক্ত করে গড়ে তুলে।
শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। বড় বড় চোখের বিস্মিত শিশু ছোট ছোট হাত পা নেড়ে অনুভব করে তার পৃথিবীটা হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে! নাক দিয়ে শুঁকে নতুন গন্ধ। ঠোঁট দিয়ে চাটে নতুন স্বাদ। কান দিয়ে শুনে নতুন নতুন শব্দ!! শিশুর চোখে প্রবেশ করে প্রথম সূর্যের আলো। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত এ সুন্দর জীবনসমূদ্রে শুরু হয় ছোট্ট শিশুর অভিযাত্রা।
এই অভিযাত্রায় দক্ষ নাবিক শিশু নিজেই! প্রকৃতি শিশুকে সাঁতার শিক্ষা দিয়েই পাঠিয়েছে।আবার শিশুকে প্রতি মুহুর্তে শিক্ষা দিয়ে চলেছে প্রকৃতির নিরব মাষ্টার মশাই। দেখেন না? আপনি শেখানোর আগেই শিশু শিখে যাচ্ছে হামাগুড়ি দেয়া, আপনি শেখানোর আগেই শিশু শিখে যাচ্ছে কথা বলা। এ বি সি ডি শিখার আগেই কম্পিউটারের মাউস এমন কি কি বোর্ড টিপে বের করে ফেলতেছে গেমস! আপনার স্মার্টফোনের সমস্যা সমাধানে আপনি ক্ষেত্র বিশেষে শরণাপন্ন হচ্ছেন আপনার সাত আট বছর বয়েসি শিশুটির!!
এই অমিত সম্ভাবনাময় শিশুই জাতির ভবিষ্যৎ। এই শিশুর সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবার উপরেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতে কি আমরা জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে সন্মানের স্থান দখল করব, নাকি পরাজিত মেরুদণ্ডহীন একটা বিশাল শোঁয়াপোকা হিসাবে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করব?
পৃথিবীতে জাতি হিসেবে সন্মানিত হতে চাইলে যেমন পুর্ব প্রস্তুতি দরকার সেরকম মেরুদণ্ডহীন শোঁয়াপোকা হতে চাইলেও পূর্ব প্রস্তুতি দরকার। আর কে না জানে প্রস্তুতি শৈশব থেকে শুরু করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
আমাদের জাতীয় পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিদের সাধুবাদ(!) জানাই তাঁদের দুরদর্শিতার জন্য। তাঁরা নিজেরা যে ঠিকমত পড়াশোনা করেছেন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ঠিকমত পড়াশোনা করেছেন বলেই ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এই কথাটা তাঁরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন এবং সবাই(সবাই না হলেও অধিকাংশ নিশ্চয়!)মিলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন- শৈশবেই জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে পারলে সাফল্য সুনিশ্চিত! দেশকে শুকরের খোঁয়াড়ে পরিণত করা তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র!!
বস!! আপনারা আরাম করে শিশুদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে থাকুন। মায়ের পেটে থাকতেই কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দিন! তথাকথিত ভাল স্কুলে ভর্তি হবার অশ্লীল প্রতিযোগিতার বিষে নীল করে দিন কোমল শিশুর আনন্দময় জগত। দেশ কে পরিণত করুন নৈতিকতাহীন, আত্নিমর্যাদাবোধহীন, রুচিহীন, অসীম ক্ষুধা(!) সম্পন্ন শুকরদের খোঁয়াড়ে।
মেরুদণ্ডহীন ভদ্র মানুষ(?) আমরা। আমরা সব দেখে শুনে ‘হালকা চিৎকারে’ যার যার কত্তব্য সম্পাদন করার পর....যার যার মত চুপ করে যাব!
আপনাদের কেউ ঠেকাতে পারবে না।