somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মল-ট্যাগ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের অন্ধকারে শক্তিশালী শত্রুর ঘরের দরজায় মলত্যাগ করে শত্রুকে বিব্রত করার একটা প্রচলন একসময় ছিল(এখনো হয়ত আছে)। সেই পুরোনো অভ্যাস ই বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে ভিন্ন চেহারায় দেখা যায়। মানুষ একই। শুধু ‘ত্যাগ’ এর জায়গায় ‘ট্যাগ’। ‘মল’ এর জায়গায় ‘পর্ণোগ্রাফির ক্লিপ!’

যেকোন দিন সকালবেলা আপনার টাইম লাইনে ঢুকে আপনি দেখতে পারেন কে বা কারা আপনার টাইম লাইনে মলত্যাগ করে গেছে অর্থাৎ পর্ণোগ্রাফির ক্লীপ ট্যাগ করে দিয়েছে। উদ্যেশ্য অবশ্যই আপনাকে পর্ণোগ্রাফি দেখানো নয়! উদ্যেশ্য আপনাকে বিব্রত করা। যাতে আপনার টাইম লাইনে যারা ঢুকবে তারা দেখে যেন ভাবে এই লোকটা একটা অশ্লীল লোক। পর্ণোগ্রাফির অশ্লীল জগতের সাথে এর যোগাযোগ।

তবে এটা যে সবসময় ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটে তা নয়। যতদূর জানি, শয়তানের ফাঁদে পড়ে(!) অইসব সাইটে অতিরিক্ত ঘোরাঘুরি করলে ঘোর লাগা অবস্থায় কোথাও চাপ পড়ে ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধু বান্ধবের সাথে অইসব ইয়ে জিনিষ ট্যাগ হয়ে যেতে পারে। এরপরেও কেউ যে ইচ্ছে করে কারো ওয়ালে গিয়ে এসব ট্যাগ করে আসেনা সেকথা নিশ্চিত করে বলা যায়না।

নিজের ওয়ালে এধরণের ‘মল-ট্যাগ’ হতে দেখা ওয়াল এর মালিকের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর। কেন বিব্রতকর তার কারণ অনুসন্ধান করা যাক।

সভ্যতার কোন পর্যায়ে মানুষ জামা কাপড় পরতে আরম্ভ করেছে সেটার সঠিক ইতিহাস আমি জানিনা। তবে অনুমান করা যায়, নগ্নতার চেয়ে বেশি সুন্দর কিছু যখন মানুষ অনুভব করতে পেরেছে তখন থেকে সে নগ্নতাকে ঢাকতে চেয়েছে। একবার পোষাকের অন্তরালে চলে যাবার পর পোষাক মানুষের পরিচয় নির্ধারণ করা শুরু করেছে! পোষাক বলে দিয়েছে কে সর্দার, কে সাধারণ কালা আদমী। পোষাক বলে দিয়েছে কে রাজা, কে প্রজা। পোষাক বলে দিয়েছে কে সৈনিক, কে শিল্পী। পোষাক বলে দিচ্ছে কে বিজ্ঞাপনের মডেল, কে সাধারণ গৃহবধু! এভাবে পোষাক মিশে গেছে বৃহত্তর মানব সংস্কৃতির মূলবিন্দুতে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া সব সময় দ্বি-মূখী প্রক্রিয়া। একদিকে এসিড এবং ক্ষার বিক্রিয়া করে লবন এবং পানি উৎপাদন হতে থাকলে অন্যদিকে বিপরীত প্রক্রিয়ায় কিছু এসিড এবং ক্ষার ও উৎপন্ন হতে থাকে। সভ্যতার পোষাক রসায়নে ফ্যাশনের লবন এবং পানি যতবেশি উৎপন্ন হয়েছে, লবন এবং পানির আড়ালের নগ্ন এসিড এবং ক্ষারের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও তত বেড়েছে! নগ্নতা যখন নগ্ন ছিল তখন সেটা ছিল মানুষের কাছে ডালভাত। নগ্নতা যখন ‘পোষাকের আড়াল থেকে নিজেকে প্রকাশ করা’র শিল্পমাত্রায় ঢুকে গেল তখন সেটা হয়ে গেল চরম কৌতুহলের বিষয়। যে বস্তুর দিকে মানুষ আলাদা করে ফিরে তাকানোর কোন প্রয়োজন একসময় অনুভব করেনি সেই বস্তু উঁকি মেরে দেখার জন্য তৈরি হল পিপহোল! শরীর কে পোষাকে মুড়ে নিয়ে মানুষের মন কেন্দ্রীভুত হল নগ্নতায়!

মানুষের নগ্ন মনের নগ্ন চাহিদা আছে বলেই পর্নোগ্রাফিতে কোটি টাকার বিনিয়োগ। অন-লাইনে পর্নোগ্রাফির সরব উপস্থিতি। সভ্যতার বিবর্তনে যদি মানুষের নগ্ন মনের নগ্ন চাহিদা ফুরিয়ে যায় তাহলেই কেবলমাত্র পর্নোগ্রাফির উৎপাদন বন্ধ হবে। সাধারন নিয়মে চাহিদা থাকলে উৎপাদন থাকবে এবং চাহিদা বৃদ্ধি করে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াও থাকবে।

কিন্তু তিন রুমের ফ্ল্যাটের ‘তিন’ সংখ্যায় যেমন টয়লেটের উল্লেখ থাকেনা সেরকম সভ্যজগতে বিচরণকারী মানুষের পরিচয়ের স্থানাংকেও মানুষের মনের এই অন্ধগলির উল্লেখ অনাকাংখিত। এটা মানুষের মনের একান্ত নিজস্ব নোংরামি। ‘প্রাইভেসি’ নামক দেয়াল দিয়ে একে ঢেকে না রাখলে মূহুর্তেই খসে পড়ে মানুষের অন্যসব অর্জন দিয়ে নির্মিত ব্যক্তিত্ত্বের পোষাক! পোষাকী সভ্যতায় শরীর ধ্বংস হবার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হল পোষাক ধ্বংস হওয়া।

কাজেই একজন মানুষ কে যখন কোন না কোন ভাবে প্রকাশ্য নগ্নতার সাথে যুক্ত করা হয় তখন তার ভেতরের নগ্নতা প্রকাশ হয়ে যাবার ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলে। ভাবমূর্তির আড়ালে চাপা পড়া তার প্রবৃত্তিসর্বস্ব মূর্তি টা ঠক ঠক করে কাঁপতে থাকে সব হারানোর ভয়ে। সে নগ্ন ভাষায় ঘোষনা দেয়-নগ্নতার সাথে আমার বৈধ অবৈধ কোন ধরনের সম্পর্ক নাই!

তবে মনের কানাগলিতে এই ধরণের নোংরা চ্যানেলের বিচরন নাই এরকম মানুষ ও থাকা সম্ভব। তাদের মনকে তারা সৌন্দর্য্যের এমন মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন যাতে করে এধরণের প্রবৃত্তিগত আনন্দ দিয়ে তাদের মন কে প্রকাশ্যে বা গোপনে তৃপ্ত করার কোন প্রয়োজন তারা অনুভব করেন না। এ ধরনের ট্যাগিং তাদের জন্য ভয়ের কারণ না হলেও যথেষ্ঠ বিরক্তির কারণ।

কাজেই একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষ কে এরকম অসহায় অথবা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়াটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কাজেই সজ্ঞানে কেউ যদি কারো ওয়ালে এরকম ‘মল-ট্যাগ’ করে থাকে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। আর অজ্ঞানে যাতে এধরনের অপরাধ সংগঠিত না হয় সেজন্য মনকে শাসন করা উচিত-যাতে সে সবসময় সজ্ঞান থাকে।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬
১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×